মুক্ত বা অবাধ ও সংরক্ষিত বাণিজ্যের মধ্যে আলােচনা কর।

 

 

***ভূমিবাদী মতবাদের টুরগটের অবদান : ভূমিবাদী মতবাদে টুরগটের অবদান উল্লেখযােগ্য। নিম্নে তাঁর অবদান আলােচনা করা হলাে :

১. কৃষি সম্পর্কে বক্তব্য : উৎপাদন ক্ষেত্র। কৃষিক্ষেত্রের উন্নয়ন হলে অর্থনীতির অন্যান্য ক্ষেত্রেরও উন্নয়ন ঘটেএজন্য অর্থনীতির অন্যান্য ক্ষেত্রের উন্নয়ন করতে হলে কৃষিক্ষেত্রের সম্প্রসারণ করতে হবে। কৃষিক্ষেত্রের উন্নয়ন ব্যতীত অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা সম্ভব নয়।

২. মূল্য তত্ত্বের ব্যাখ্যা : মূল্যত্ত্ব সম্পর্কে টুরগট গুরুত্বপূর্ণ ধারণা প্রদান করেন। তাঁর মতে, প্রত্যেক দ্রব্যের মূল্য নির্ভর করে এ দ্রব্যের উৎপাদন খরচের উপরতবে প্রতিযােগিতার কারণে দ্রব্যের মূল্য হ্রাস বৃদ্ধি হতে পারে। তবে তিনি এ ধারণাও প্রদান করেন যে, দ্রব্যের মূল্য নির্ধারণ শুধু উৎপাদন খরচের উপর নির্ভর করে না, বরং দ্রব্যের স্বল্পতা, উপকারিতা এবং প্রাচুর্যের উপরও নির্ভরশীল।

৩. সুদ তত্ত্ব সম্পর্কে বিশ্লেষণ : ভূমিবাদী, চিন্তাবিদ, টুরগটের মতে, বাজারের চাহিদা ও যােগানের উপর ভিত্তি করে সুদের হার নির্ধারিত হওয়া উচিত। তাঁর মতে, সুদের হার ও খাজনা স্বাভাবিক নিয়মে সমান হয়। সুদ যদি দেওয়া না হয় তবে ঋণদানকারীগণ বাজার থেকে ঋণের টাকা তুলে নেবে। ঋণের টাকার অভাবে উৎপােদনকারীদের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

৪. শ্রেণি বিশেষের সুবিধা বন্ধ : টুরগট সমাজের শ্রেণি বিশেষের সুযােগ-সুবিধা বন্ধ করে দেওয়ার সুপারিশ করেন। তিনি একচেটিয়া ব্যবসায়ের পক্ষে ছিলেন না। কেননা এতে শুধু একটি শ্রেণির লােক বেশি লাভবান হয়। তবে তিনি বৃহৎ শিল্পের ক্ষেত্রে একচেটিয়া ব্যবসাকে সমর্থন করেন।

৫. উৎপাদন ব্যয় সম্পর্কে ধারণা : উৎপাদন ব্যয় সম্পর্কে ভূমিবাদী চিন্তাবিদ টুরগট গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব প্রদান করেন। তাঁর মতে, প্রত্যেক দ্রব্যের মূল্য উৎপাদন ব্যয়ের সমান হওয়া উচিত। কিন্তু বিনিময় মূল্য সম্পর্কে তিনি তেমন কোনাে ভূমিকা রাখেননি। তিনি উৎপাদন ব্যয়ের ক্ষত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখেন।

৬. বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়ােগ : ভূমিকবাদী চিন্তাবিদ টুরগট শুধু মতবাদ প্রদানই করেননি। তা বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়ােগেও সচেষ্ট হন। তিনি মানুষের শ্রম ও ব্যক্তির স্বাধীনতার কথা স্বাকার করেন। এ কারণে তিনি এ সম্পর্কীয় সকল বাধারােপ করেন।

**অথবা, মুক্ত বা অবাধ ও সংরক্ষিত বাণিজ্যের মধ্যে আলােচনা কর।

 


উত্তর : আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্র অবাধ বাণিজ্য ও সংরক্ষণ বাণিজ্য ধারণা দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উভয় নীতিই আন্তজাতিক বাণিজ্যে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। নিম্নে অবাধ বাণিজ্য ও সংরক্ষণ বাণিজ্যের মধ্যে পার্থক্যসমূহ তুলে ধরা হলাে-

 

পার্থক্যের বিষয়

অবাধ বাণিজ্য

সংরক্ষণ বাণিজ্য

১. সংজ্ঞাগত :

 

বিদেশের সহিত কোন দেশের যে বাণিজ্য চলে তার উপর কোন প্রকার বাধা নিষেধ আরােপকরা না হলে তাকে অভাধ বাণিজ্য বলে।

 

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিধি নিষেধ আরােপ করা হলে তাকে সংরক্ষণ বাণিজ্য বলে।

 

২. আন্তর্জাতিক বাজার প্রসার :

অবাধ বাণিজ্যের ফলে দ্রব্যের আন্তর্জাতিকবাজার প্রসারিত হয়।

সংরক্ষণ বাণিজ্যে আন্তর্জাতিক বাজার প্রসার লাভ করতে পারে না।

৩. বিশেষীকরণ :

অবাধ বাণিজ্যের ফলে আন্তর্জাতিক ভিত্তিতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শ্রম বিভাগ ও উৎপাদনে বিশেষীকরণ সম্ভব পর।

সংরক্ষণ বাণিজ্য আন্তর্জাতিক ভিত্তিতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শ্রম বিভাগ ও উৎপাদনে বিশেষীকরণ সম্ভবপর হয় না।

৪. দ্রব্য সামগ্রির দাম ও উৎপাদন ব্যয় :

অবাধ বাণিজ্যের ফলে উৎপাদন খরচ কম হয়। ফলে ক্রেতাগণ কম দামে দ্রব্য সামগ্রি ক্ৰয় করতে পারে।

সংক্ষরণ বাণিজ্যে বিভিন্ন শুল্ক আরােপ করার ফলে উৎপাদন খরচ বেশি হয়। ফলে দ্রব্যের দাম বেশি হয়।

৫. বিশ্ব শান্তি :

অবাধ বাণিজ্যের ফলে আন্তর্জাতিক শান্তিতে সহযােগিতা বৃদ্ধি পায়।

সংরক্ষণ বাণিজ্যে বিশ্ব শান্তিতে তেমন অবদান রাখতে পারে না।

৬. একচেটিয়া বাজার :

অবাধ বাণিজ্যে কোন শিল্প একচেটিয়া ক্ষমতা ভােগ করতে পারে না।

সংরক্ষণ বাণিজ্যে কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান একচেটিয়া ক্ষমতা ভােগ করতে পারে।

৭. বিভিন্ন দেশের দ্রব্য ভােগ :

অবাধ বাণিজ্যে ক্রেতারা বিভিন্ন দেশের দ্রব্য অবাধে ভােগ করতে পারে।

সংরক্ষণ বাণিজ্যে ক্রেতারা বিভিন্ন দেশের দ্রব্য অবাধে ভােগ করতে পারে না।

 , হাতিয়ার :

অবাধ বাণিজ্যে বাধা নিষেধ এর কোনহাতিয়ার নেই।

সংরক্ষণ বাণিজ্যের হাতিয়ার হলাে বিভিন্ন বিধি নিষেধ, কোটা, শুল্ক ইত্যাদি।

 

Share:

সুমপিটার মডেলটি বর্ণনা কর

 

**বাণিজ্যবাদ : ষােড়শ শতাব্দীর শেষ ভাগ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগ (১৫৯০-১৭৮১০) পর্যন্ত দীর্ঘকাল যে চিন্তাধারা বা মতবাদের ভিত উঠে তাকে ভূমিবাদী চিন্তাধারা বলে। ষােড়শ শতাব্দীর শেষ ভাগ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগ (১৫৯০-১৭৮১০) পর্যন্ত ইতালি, ইংল্যান্ড, ফ্রান্সে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করে। এ অবস্থায় নতুন অর্থনৈতিক ভাবধারার সৃষ্টি হয়। এ সকল ভাবধারাকে বাণিজ্য তন্ত্র প্রথা,কালবার্ট,নিরোধ প্রথা,বাণিজ্য প্রথা বলা হয় সকল ধারণাকে একত্রে বাণিজ্যবাদ বলা হয়।

পাশ্চাত্যে বিভিন্ন ভাবধারা যখন ক্রমাগত জন্ম নিচ্ছিল তখন রাষ্ট্রশাসক ও রাজনীতিবিদগণ তাতে প্রকৃত সম্পদ বৃদ্ধি পাবে কিনা তা নিয়ে ব্যাখ্যা দিতে আরম্ভ করল। ব্যবসায়ী সমাজ বলতে লাগল যে, দেশে সােনা, রুপা ও অন্যান্য মূল্যবান সম্পদের আগমন ঘটলেই দেশ সমৃদ্ধ হবে। আবার সােনা, রুপা বা মূল্যবান দ্রব্যাদি তখনই দেশে আমদানি হবে যখন দেশে আমদানির তুলনায় রপ্তানি বেশি হবে।

**অথবা, সুমপিটার মডেলটি বর্ণনা কর।

সুমপিটার প্রদত্ত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তত্ত্ব : নিম্নে পুঁজিবাদ হতে সমাজতন্ত্র উত্তরণের প্রক্রিয়া আলােচনা করা হলাে : সুম্পিটার সর্বপ্রথম ১৯১১সালে Theory of Economic Development' নামে তার অথনৈতিক প্রবৃদ্ধি সম্পর্কিত তত্ত্ব প্রদান করেন। তার তত্ত্বে উদ্ভাবন এবং উদ্যোক্তা উন্নয়নের ক্ষেত্রে যে ভূমিকা রাখে তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এবং পুঁজিবাদ হতে সমাজতন্ত্রে উত্তরণের প্রক্রিয়া দেখানাে হয়েছে।

এ অবস্থায় কোনাে মুনাফা, সুদের হার, সঞ্জয়, বিনিয়ােগ অবস্থা অনিচ্ছাকৃত বেকারত্ব থাকবে না। এ অবস্থাকে সুমপিটার "বৃত্তাকার প্রবাহ" নামে ব্যাখ্যা করেন। অর্থাৎ প্রতিবছর একই ধরনের দ্রব্য, একই কৌশলে, একই পরিমাণ উৎপন্ন হয়। এক্ষেত্রে একই পরিমাণ চাহিদার জন্য একই যােগান এবং নির্দিষ্ট যােগানের জন্য এ পরিমাণ চাহিদা থাকবে এ বৃত্তাকার প্রবাহ সৃষ্টিতে সহায়তা করে ভূমি এবং শ্রমিক, যা আয় সৃষ্টি করে এবং এ আয় অভাব দূর করতে সাহায্য করে। তার মতে উন্নয়ন হচ্ছে বৃত্তাকার প্রবাহের একটি স্বতঃস্ূত এবং বিচ্ছিন্ন পরিবর্তন। যার ফলে ভারসাম্যাবস্থায় অস্থিরতা দেখা দেয় এবং ফলশ্রতিতে প্রাথমিক ভারসাম্য অবস্থার স্থানান্তর পরিবর্তন হয়। উন্নয়নের মাধ্যমে স্থির বা

অনড় অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার জন্য মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করবে উদ্ভাবন বা আবিষ্কার।

মডেলের ব্যাখ্যা : সুমপিটার তার মডেলকে কয়েকটি বিষয়ের সাহায্যে ব্যাখ্যা করেছেন।

১. উদ্যোক্তার ভূমিকা : সুমপিটারের মতে, ব্যবস্থাপনা দক্ষতাকে ছাড়াও ধীশক্তির অধিকারী উদ্যোক্তাই কেবল অর্থনীতিকে তেজী করতে পারে। কোথায়, কীভাবে পুঁজি ব্যবহার হবে তা একজন দক্ষ ও বুদ্ধিমান উদ্যাক্তাই নির্ধারণ করতে পারে । একজন দক্ষ উদ্যোক্তাকে মূলত নিম্নোেক্তভাবে অনুপ্রাণিত হতে হবে।

২. মুনাফার ভূমিকা :  সুমপিটারের মতে, প্রতিযােগিতামূলক ভারসাম্যের ক্ষেত্রে দ্রব্যের দাম উৎপাদন ব্যয়ের সমান হয় এবং কোনাে মুনাফা থাকে না। উদ্ভাবনের ফলে যে গতিশীল পরিবর্তন হয়, তাই মুনাফা সৃষ্টি করে, যতক্ষণ পর্যন্ত না উদ্ভাবন সাধারণ পর্যায়ে নেমে আসে ততক্ষণ পর্যন্ত এ ধারা চলতে

থাকবে।

৩. বাণিজ্যিক চক্র : ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে পুরাতন শিল্প দ্রব্যের চাহিদা যােগানের তুলনায় বৃদ্ধি পায়। এর দরুন দাম বৃদ্ধি পায় যা মুনাফা বৃদ্ধি করে এবং ফলস্বরূপ পুরাতন ফার্মগুলাে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করে। পুরাতন ঋণের সাথে নতুন ঋণ যুক্ত হয়ে অর্থনীতিতে একটি অগ্রগতির ধারা সৃষ্টি করে।

৪. চক্রাকার প্রবাহ ভাঙার উপায় :যখন উদ্যোক্তা মুনাফা অর্জনের জন্য নতুন দ্রব্য বাজারে ছাড়াবে তখনই এ অবস্থার সৃষ্টি হবে। বৃত্তাকার চক্র ভাঙার জন্য ব্যাংক ঋণ সম্প্রসারণের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের জন্য অর্থসংস্থান করা হয়। এজন্য সুদ প্রদান করা হয়।

৫. ঋণের ভূমিকা :  বাধ্যতামূলক সঞ্চয় নিঃসন্দেহে পুঁজি বৃদ্ধির সহায়ক। তবে সুমপিটার মডেলে পুঁজি বৃদ্ধির সীমাবন্ধতা স্বীকৃত। বিনিয়ােগ হতে প্রাপ্ত মুনাফা থেকে উদ্যোক্তাগণ ব্যাংক ঋণ পরিশােধ করে দেবে এবং এভাবেই ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে বিনিয়ােগ সম্প্রসারিত হবে বলে সুমপিটার মনে করেন।

৬. ভোগকারীর সার্বভৌমত্ব :ভােগকারীর রুচি এবং পছন্দের ভিত্তিতে উৎপাদনকারী দ্রব্য উৎপাদন করে না। বরং তার গতিশীল ভূমিকার মাধ্যমে ভােগকারীর রুচির পরিবর্তনে অথবা নতুন চাহিদা সৃষ্টির প্রচেন্টায় উৎপাদনকারী যথেষ্ট স্বার্থক বলে মনে করেন।

 

 


**অথবা, বাণিজ্যবাদী চিন্তাধারার ক্ষেত্রে টমাস মুন এর অবদান পর্যালােচনা কর।

 টমাস মুন (১৫৭১-১৬৪১) ছিলেন একজন বিখ্যাত ইংরেজ বাণিজ্যবাদী চিন্তাবিদ। তিনি তৎকালীন যুগে ইন্ডিয়া কোম্পানি পরিচালনা পর্ষদের একজন সদস্য ছিলেন। বাণিজ্যবাদী চিন্তাধারার ক্ষেত্রে, তার অবদান ছিল তাৎপর্যপ অন্যান্য বাণিজ্যবাদী চিন্তাবিদের থেকে মুনের চিন্তাধারা বেশি বৈচিত্র্যপূর্ণ।

০ বাণিজ্যবাদী চিন্তাধারার ক্ষেত্রে টমাস মুন এর অবদান : নিম্নে বিভিন্ন বিষয়ে তার মতামত অবদান আলােচনা করা হলো:

, সম্পদের ধারণা : মুন দেশের সম্পদ বলতে এমন সব জিনিস বুঝান যা কোনাে সমাজে মানুষের সভ্য জীবনের জ্য প্রয়ােজন হয়। কিছু বাণিজ্যবাদী সম্পদ বলতে অর্থের পরিমাণ বুঝতেন। তিনি বলেন কোনাে দেশের সম্পদ একদিকে যেমন প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে সৃষ্টি হয় অন্যদিকে তেমনি জনগণের শ্রম ও দক্ষতার ওপর নির্ভর করে। এত কিছু বলার পরও তিনি বলেন যে এগুলাে অনেকটা অনিশ্চিত এবং স্বল্প পরিমাণে হতে পারে।

২. বাণিজ্যের গুরুত্ব : উমাস মুন বলেন বৈদেশিক বাণিজ্য হলাে রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুতবপূর্ণ দিক। তার মতে বৈদেশিক বাণি্যের ওপর রাষ্ট্রের যাবতীয় ক্ষমতা, শক্তি, উন্নতি ও অগ্রগতি নির্ভর করে। তিনি বলেন দেশে ধনসম্পদ আসবে একমাত্র বৈদেশিবাণিজ্যের মাধ্যম। এজন্য আমদানি কম করতে হবে এবং এমন কথাও বলেন যে বিদেশ থেকে প্রয়ােজনে সম্তা দামে বিভিন্ন দ্রব্য ইংল্যান্ডে আমদানি করে সময় ও সুযােগমতাে ঐসব দ্রব্যাদি বেশি দামে অন্য দেশে রপ্তানি করতে হবে।

, বহুমুখী বাণিজ্য : টমাস মুন তৎকালীন ইংল্যান্ডের জন্য ত্রিমুখী বাণিজ্যের সুপারিশ করেন।

প্রথমত, কোনাে বিদেশি দেশ থেকে দ্রব্যাদি ক্রয় করে মজুত করে পরবর্তী সময়ে বেশি দামে অন্য দেশে সেগুলাে বিক্রি করে দেওয়া।

দ্বিতীয়ত, ইংল্যান্ড নিজের পণ্যাদি অপরাপর দেশে রপ্তানি করবে।

ভৃতীয়ত, বাণিজা দ্রব্যের সাথে প্রয়ােজনে মুদ্রাও বিদেশে রপ্তানি করা যায়। কারণ এভাবে মুদ্রা রপ্তানি করে বিদেশি দ্র্য কম দামে দেশে আনা সম্ভব হবে।

৪. অনুকূল বাণিজ্য ভারসাম্য : টমাস মুন মাঝে মাঝে বাণিজ্যের সুবিধার জন্য বিদেশ থেকে পছন্দ সই দ্রব্যাদি এনে ব্যবহারের পক্ষে মত প্রকাশ করলেও তিনি মনে করতেন আমদানি কমিয়ে রপ্তানি বাড়ানাে দরকার। এতে বাণিজ্য ভারসাম্য দেশের অনুকূলে আসবে। তিনি বিদেশি মূল্যবান দ্রব্য যতটা সম্ভব কম ব্যবহার এবং বায় সংকোচনের ও গুরুত্বারােপ করেন।

৫. ধনসম্পদ বাড়ানাের উপায় : দেশের ইংল্যান্ডের ধনসম্পদ বাড়ানাের জন্য টমাস মুন মিতব্যয়িতার ওপর জোর দেন।

, ব্যবসায়ী শ্রেণির গুরুত্ব/ভূমিকা : ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে মুন-এর ধারণা উচ্চ ছিল। তার মতে এ শ্রেণির লােকের অবস্থা ন্নত হলেই দেশের অবস্থা উন্নত হবে। তিনি বলেন বৈদেশিক বাণিজযে অবহেলা অথবা বিদেশিদের প্রতিঘাতের দরুন বৈদেশিক বাণিজ্য সংকোচন বা বনধ হয়ে গেলে ব্যবসায়ী শ্রেণি দরিদ্র হয়ে যাবে। এতে সদেশেরসমূহ ক্ষতি হবে। এ তিনি এ শ্রেণির জন্য সব ধরনের সুযােগ-সুবিধা রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রদানের সুপারিশ করেন।

Share:

দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রের ধারণা দাও।

 

**অথবা, দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রের ধারণা দাও।

দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র Vicious circle of poverty 'দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র' ধারণাটি অনুন্নত দেশের অর্থনীতির সাথে সম্পর্কিত একটি বিষয়। অনুন্নত দেশসমূহের অর্থনৈতিক অনগ্রসরতার অন্যতম একটি কারণ 'দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র।

অর্থনীতিবিদ র্যাগনার নার্কস প্রথম দুষ্টচক্র ধারণাটি নিয়ে আলােচনা করে। নার্কসের মতে, "দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র হলাে এমন কতগুলাে অর্থনৈতিক শক্তি বা উপাদান যেগুলাে একে অন্যের সাথে চক্রাকারে আবর্তিত হয়ে একটি দেশকে দরিদ্র করে রাখে। অনুন্নত দেশের উৎপাদন মূলত কম। ফলে জনগণের মাথাপিছু আয় কম। এ কারণে সঞ্চয়ও কম। তাই বিনিয়ােগ কম হওয়ার কারণে পুনরায় উৎপাদন ও সঞ্চয় কম হয়। এভাবেই, অনুন্নত দেশের অর্থনীতি দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রের মধ্যে বিদ্যমান থাকে। দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র সক্রিয়তার কারণে অনুন্নত দেশের অর্থনীতি উন্নয়নের দিকে এগােতে পারে না।

 

**রিকার্ডোর তুলনামূলক ব্যয় সুবিধা ত্ত্ব গুরুত্ব নিম্নে রিকার্ডোর তুলনামূলক ব্যয় সুবিধা তত্ত্বের গুরুস্ সম্পর্কে আলােচনা করা হলো:

১. বিশ্ব কল্যাণ বৃদ্ধির সহায়ক ; রিকার্ডো বাণিজ্য থেকে লাভের বিষয়টি তুলে ধরেন। তার মতে, অবাধ বাণিজ্যের মাধ্যমে দ্রব্যের ভােগ বাড়লে দেশের কল্যাণ বাড়বে। মােটকথা আধুনিককালে বাণিজ্যকে ধনাত্মক প্রাপ্তির খেলা বলা হয়, যার প্রাথমিক রুপ রিকার্ডোর লেখায় পাওয়া যায়।

২. তত্ত্বের প্রসারিত প্রয়োগযোগ্যতা : রিকার্ডোর তত্ত্ব দুই দেশ, দুই পণ্য এবং একটি উপকরণের আলােকে গড়ে উঠলেও  পরবর্তীকালে দেখা যায়। এ তত্ত্ব মুদ্রাভিত্তিক অর্থনীতিতে প্রয়ােগ করা সম্ভব। তাছাড়া দুটি পণ্যও বহুদেশ এবং দুই দেশ ও বহু পণ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রেও তার তত্ত্ব সম্প্রসারণ করা সম্ভব।

৩. আন্তর্জাতিকভাবে শ্রম পূর্ণ গতিশীল নয় : রিকার্ডো বলেছেন দেশের অভ্যন্তরে শ্রম গতিশীল হলেও আন্তর্জাতিকভাবে পূর্ণ মাত্রায় গতিশীল নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনগণের রীতিনীতি, পরিবেশ, সংস্কৃতি, ভাষা ইত্যাদি এক রকম নয়। এসব কারণে উপাদান পুরােপুরি গতিশীল হতে পারে না। তাই বলা যায় এক্ষেত্রে রিকার্ডোর তত্ত্ব খুবই সঠিক বক্তব্য রেখেছে।

৪. স্মিথের তত্ত্বের সংশােধন ও পরিবর্ষন: ডেভিড রিকার্ডো এডাম স্মিথের পরম ব্যয় সুবিধা তত্ত্ব সংশােধন এবং পরিবর্ধন করতে সমর্থ। তিনিই সর্বপ্রথম দেখান পরম ব্যয় সুবিধা নয়; বরং আপেক্ষিক ব্যয় সুবিধা সর্বোচ্চ বা ঐ ব্যয় অসুবিধা নূনতম থাকলে বাণিজ্য সংঘটিত ও লাভজনক হতে পারে। সুতরাং এডাম স্মিথের বসক্তব্য অপেক্ষা রিকার্ডোর তত্ত্ব প্রসারিত।

৫. সম্পদ বন্টন ক্ষেত্রে প্রযােজ্য : কিছু কিছু খ্যাতনাম অর্থনীতিবিদ যুক্তি দেন তুলনামূলক ব্যয় সুবিধা তত্ত্ব সম্পদ বনটনের ক্ষেত্রে প্রয়ােগ করা যায়। কোনাে ব্যক্তি, কোনাে দেশ বা কতিপয় দেশ অথবা বহু দ্রব্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সম্পদ বন্টন বা ব্যবহারের ক্ষেত্রে তুলনামূলক ব্যয় সুবিধা নীতি প্রয়ােগ করা সম্ভব। তাছাড়া এ নীতি যেসব প্রতিষ্ঠান সম্পদের যুক্তিশীল বণ্টনে আগ্রহী তাদের বেলায়ও প্রয়ােগ করা যায়।

৬. উৎপাদন ব্যয় দেশে এবং বিদেশে ভিন্ন হবে : ডেভিড রিকার্ডোর মতে, দেশের অভ্যন্তরে দ্রব্যের বিনিময় নয়। কারণ শ্রমের মজুরির পার্থক্যহেতু একই পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বিভিন্ন দেশে ভিন্ন হবে। রিকার্ডোর এ বক্তুব্য পুরােপরি সত্য না হলেও বলা যায় উপকরণের আপােক্ষিক দক্ষতার পার্থক্য এক্ষেত্রে প্রধান কারণ হিসেবে কাজ করতে পারে। তাই বলা যায় রিকার্ডোর বক্তব্য খুবই গুৰুত্বপূর্ণ ।

.পরবর্তী তত্ত্বসমূহের ভিত্তি : রিকার্ডোর বাণিজ্য তত্ত্ব বিশ্লেষণ অনেক ত্রুটি আছে একথা সত্য। কিন্তু এ তত্ত্বের ওপর নির্ভর করেই পরবর্তীকালের অর্থনীতিবিদগণ অন্যান্য তত্ত্ব প্রদান করেছেন। তাই আধুনিক অর্থনীতিবিদগণ নতুনদৃষ্টিভঙ্গিতে বাণি্য তত্ত্ব ব্যাখ্যা করেছেন। কিন্তু বাণিজ্যের মূলভিত্তি বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে রিকার্ডোর অবদানকে তারা অস্বীকার করেননি।

 


**অথবা, মধ্যযুগীয় বাণিজ্যের বৈশিষ্ট্যসমূহ কি কি?

নিম্নে মধ্যযুগীয় বাণিজ্যের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলােচনা করা হলাে :

১. নানামুখী চিন্তাধারার সমম্বয় : এরিস্টটল ব্যবসা-বাণিজ্যকে অস্বাভাবিক বলে মনে করতেন। কিন্তু স্কলাসটিক মতবাদের চিন্তাবিদরা বাণিজ্যকে সমর্থন করেন। তবে ধর্মীয় নেতারা বাণিজ্যকে ন্যায়নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিল। অর্থাৎ যুক্তিসঙ্গত মূল্যে বাণিজ্য অনুমােদিত ছিল। যেমন, সেন্ট টমাস একুইনাস বলেন, "ব্যবসায়-বাণিজ্য নেতিবাচক হলেও জাগতিক দিক থেকে আবশ্যক।" এভাবে বিভিন্ন দার্শনিক মতবাদের সমন্বয়ে বাণিজ্য সম্পর্কে মধ্যযুগীয় চিন্তাধারা গড়ে উঠেছিল।

২. বিনিময় প্রথা প্রবর্তন : মধ্যযুগে অর্থনীতিতে বিনিময় প্রথার উদ্ভব হয়েছিল। কারণ কৃষি উৎপাদনে মেনর প্রথা চালু ছিল। মেনর প্রথা যদিও আত্মপােষণ কৃষি ছিল, তথাপিও অনেক সময় কোনাে কোনাে মেনরে উদ্বৃত্ত পণ্য উৎপাদিত হতাে। এসব উদ্বৃত্ত পণ্য নষ্ট না করে নিকটস্থ শহরে প্রেরণ করা হতাে। ফলে এভাবে সমাজ তথা অর্থনীতিতে বিনিময় প্রথার উদ্ভব ঘটে।

৩. পশম রপ্তানি : ইংল্যান্ডের অর্থনীতিতে যখন মেনর ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয় তখন মেনরের মালিকগণ কৃষি উন্নয়নের পরিবর্তে পশুপালনের মাধ্যমে পশম চাষের মতাে লাভজনক ব্যবসায় নিয়ােজিত ছিল। সমগ্র ইউরােপ ও অন্য দেশে পশম জাতীয় বস্ত্রের ব্যাপক চাহিদা বৃদ্ধির কারণে ব্যবসার ভালাে সূত্রপাত হয়। ফলে ব্রিটেনে পশমের উৎপাদন ও রপ্তানি বৃদ্ধি পায়। এভাবে মধ্যযুগে ব্যবসা-বাণিজ্যের পথ সুগম হয়।

৪. অর্থের গুরুত্ব : তাদের মতে যত বেশি অর্থ থাকবে তত বেশি বিনিয়ােগ নিয়ােগ উৎপাদন, আয় ইত্যাদি বাড়বে। এজন্য তারা অর্থের উপর বেশি গুরুত্বারােপ করেন।

৫. জনসংখ্যা নীতি : বাণিজ্যবাদিরা দুটো কারণে জনসংখ্যা বৃদ্ধি সমর্থন করেন।প্রথমত , জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে সন্তায় প্রচুর শ্রম পাওয়া যাবে। এ সস্তা শ্রম দিয়ে দেশে উৎপাদিত পণ্যকে বিদেশি প্রতিযােগিতার হাত থেকে রক্ষা করা যাবে। দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন দেশের সাথে যুদ্ধ বিগ্রহেরু জন্য প্রচুর জনসংখ্যা দরকার।

৬. উৎপাদনের উপকরণসমূহ : খাদ্যে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে খাদ্য আমদানি বন্ধ হবে। এতে প্রচুর অর্থ বেঁচে যাবে যা বিনিয়ােগ ও অধিকতর নিয়ােগ এবং উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা যাবে।

৭. সুদের হার : বাণিজ্যবাদিরা কম সুদের স্বপক্ষে বক্তব্য রাখেন। মূলত তরল তহবিলের দু্প্রাপ্যতা, আনুপাতিক অর্থ ও ব্যাংকিং ব্যবস্থা এবং বণিক উৎপাদক এবং বড় বড় ব্যবসায়ীদের পারস্পরিক বিরােধিতা ইত্যাদি কারণে তারা সুদের হার কম স্তরে রাখার সুপারিশ করেন।

৮. বাণিজ্যিক বিধিনিষেধ : তারা ঔপনিবেশিক-থেকে ঔপনিবেশিক দেশে কোনাে দ্রব্য আমদানির বিপক্ষে মতামত প্রকাশ করেন। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রয়ােজনে ব্যাংক ব্যবস্থার উন্নয়নের সুপারিশ তারা করেন। অনুকূল বাণিজ্য ভারসাম্যের জন্য তারা রাষ্ট্রীয়ভাবে রপ্তানি, মৎস্য এবং জাহাজ শিল্পের জন্য ভর্তুকি প্রদানের সুপারিশ করেন।

৯. মজুরি নীতি : বাণিজ্যবাদী কম মজুরি প্রদানের পক্ষপাতী ছিলেন। তাঁদের মতে, বেশি মজুরি দিলে শ্রমিকরা কম কাজ করবে। তদুপরি মজুরি কম থাকলে উৎপাদন খরচ কম পড়বে, ফলে বিদেশে কম দামে বেশি করে পণ্য রপ্তানি করা যাবে।

**সংরক্ষণ বাণিজ্যের অপেক্ষা অবাধ বা মুক্ত বাণিজ্য ভালাে : অর্থনীতি দুই ধরনের বাণিজ্য পরিলক্ষিত হয়। যথা- ১. অবাধ বাণিজ্য ও ২. সংরক্ষণ বাণিজ্য। এ দুটি বাণিজ্যের মধ্যে কোনটি ভালাে তা এক কথায় বলা কষ্টকর। নিম্নে দুটি ধারণা বিশ্লেষণ করে তদুপরি বলা যায় কোনটি ভালাে :

১. অবাধ বাণিজ্য : দুই বা ততােধিক দেশের মধ্যে কোনাে প্রকার বিধিনিষেধ ছাড়া যে বাণিজ্য সংঘটিত হয় তাকে অবাধ বাণিজ্য বলে। অবাধ বাণিজ্যের ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গতি এবং এর ফলে বাণিজ্য শিল্প দেশসমূহের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযােগিতা বৃদ্ধি পায় এবং দেশগুলাের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিত ত্বরান্বিত হয় এর ফলে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়।

Share:

slidebar

Total Pageviews

Abdullah Mondal

Powered by Blogger.

Blog Archive

Recent Posts

বাস্তবতা

জীবনের বাস্তবতা বড়ই নিষ্ঠুর। এটাই জীবন। জীবনের বাস্তবতার বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, যতই নিষ্ঠুর হউক বা যতই কষ্ট হউক তা সয়ে নিতে হয়, মেনে নিতে হয় জীবনের প্রয়োজনেই। জীবনে কষ্ট আসলে মানসিক ভাকে যতটুকু ভেঙ্গে পড়বে জীবন তার দ্বিগুন পিছিয়ে যাবে। জীবনের সকল দূঃখ কষ্ট ও বাস্তবতাকে জীবনের অংশ হিসাবে মেনে নিয়ে স্বাভাবিক ভাবে গ্রহন করার নামই হচ্ছে সুখ।

Pages