দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রের ধারণা দাও।

 

**অথবা, দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রের ধারণা দাও।

দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র Vicious circle of poverty 'দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র' ধারণাটি অনুন্নত দেশের অর্থনীতির সাথে সম্পর্কিত একটি বিষয়। অনুন্নত দেশসমূহের অর্থনৈতিক অনগ্রসরতার অন্যতম একটি কারণ 'দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র।

অর্থনীতিবিদ র্যাগনার নার্কস প্রথম দুষ্টচক্র ধারণাটি নিয়ে আলােচনা করে। নার্কসের মতে, "দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র হলাে এমন কতগুলাে অর্থনৈতিক শক্তি বা উপাদান যেগুলাে একে অন্যের সাথে চক্রাকারে আবর্তিত হয়ে একটি দেশকে দরিদ্র করে রাখে। অনুন্নত দেশের উৎপাদন মূলত কম। ফলে জনগণের মাথাপিছু আয় কম। এ কারণে সঞ্চয়ও কম। তাই বিনিয়ােগ কম হওয়ার কারণে পুনরায় উৎপাদন ও সঞ্চয় কম হয়। এভাবেই, অনুন্নত দেশের অর্থনীতি দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রের মধ্যে বিদ্যমান থাকে। দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র সক্রিয়তার কারণে অনুন্নত দেশের অর্থনীতি উন্নয়নের দিকে এগােতে পারে না।

 

**রিকার্ডোর তুলনামূলক ব্যয় সুবিধা ত্ত্ব গুরুত্ব নিম্নে রিকার্ডোর তুলনামূলক ব্যয় সুবিধা তত্ত্বের গুরুস্ সম্পর্কে আলােচনা করা হলো:

১. বিশ্ব কল্যাণ বৃদ্ধির সহায়ক ; রিকার্ডো বাণিজ্য থেকে লাভের বিষয়টি তুলে ধরেন। তার মতে, অবাধ বাণিজ্যের মাধ্যমে দ্রব্যের ভােগ বাড়লে দেশের কল্যাণ বাড়বে। মােটকথা আধুনিককালে বাণিজ্যকে ধনাত্মক প্রাপ্তির খেলা বলা হয়, যার প্রাথমিক রুপ রিকার্ডোর লেখায় পাওয়া যায়।

২. তত্ত্বের প্রসারিত প্রয়োগযোগ্যতা : রিকার্ডোর তত্ত্ব দুই দেশ, দুই পণ্য এবং একটি উপকরণের আলােকে গড়ে উঠলেও  পরবর্তীকালে দেখা যায়। এ তত্ত্ব মুদ্রাভিত্তিক অর্থনীতিতে প্রয়ােগ করা সম্ভব। তাছাড়া দুটি পণ্যও বহুদেশ এবং দুই দেশ ও বহু পণ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রেও তার তত্ত্ব সম্প্রসারণ করা সম্ভব।

৩. আন্তর্জাতিকভাবে শ্রম পূর্ণ গতিশীল নয় : রিকার্ডো বলেছেন দেশের অভ্যন্তরে শ্রম গতিশীল হলেও আন্তর্জাতিকভাবে পূর্ণ মাত্রায় গতিশীল নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনগণের রীতিনীতি, পরিবেশ, সংস্কৃতি, ভাষা ইত্যাদি এক রকম নয়। এসব কারণে উপাদান পুরােপুরি গতিশীল হতে পারে না। তাই বলা যায় এক্ষেত্রে রিকার্ডোর তত্ত্ব খুবই সঠিক বক্তব্য রেখেছে।

৪. স্মিথের তত্ত্বের সংশােধন ও পরিবর্ষন: ডেভিড রিকার্ডো এডাম স্মিথের পরম ব্যয় সুবিধা তত্ত্ব সংশােধন এবং পরিবর্ধন করতে সমর্থ। তিনিই সর্বপ্রথম দেখান পরম ব্যয় সুবিধা নয়; বরং আপেক্ষিক ব্যয় সুবিধা সর্বোচ্চ বা ঐ ব্যয় অসুবিধা নূনতম থাকলে বাণিজ্য সংঘটিত ও লাভজনক হতে পারে। সুতরাং এডাম স্মিথের বসক্তব্য অপেক্ষা রিকার্ডোর তত্ত্ব প্রসারিত।

৫. সম্পদ বন্টন ক্ষেত্রে প্রযােজ্য : কিছু কিছু খ্যাতনাম অর্থনীতিবিদ যুক্তি দেন তুলনামূলক ব্যয় সুবিধা তত্ত্ব সম্পদ বনটনের ক্ষেত্রে প্রয়ােগ করা যায়। কোনাে ব্যক্তি, কোনাে দেশ বা কতিপয় দেশ অথবা বহু দ্রব্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সম্পদ বন্টন বা ব্যবহারের ক্ষেত্রে তুলনামূলক ব্যয় সুবিধা নীতি প্রয়ােগ করা সম্ভব। তাছাড়া এ নীতি যেসব প্রতিষ্ঠান সম্পদের যুক্তিশীল বণ্টনে আগ্রহী তাদের বেলায়ও প্রয়ােগ করা যায়।

৬. উৎপাদন ব্যয় দেশে এবং বিদেশে ভিন্ন হবে : ডেভিড রিকার্ডোর মতে, দেশের অভ্যন্তরে দ্রব্যের বিনিময় নয়। কারণ শ্রমের মজুরির পার্থক্যহেতু একই পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বিভিন্ন দেশে ভিন্ন হবে। রিকার্ডোর এ বক্তুব্য পুরােপরি সত্য না হলেও বলা যায় উপকরণের আপােক্ষিক দক্ষতার পার্থক্য এক্ষেত্রে প্রধান কারণ হিসেবে কাজ করতে পারে। তাই বলা যায় রিকার্ডোর বক্তব্য খুবই গুৰুত্বপূর্ণ ।

.পরবর্তী তত্ত্বসমূহের ভিত্তি : রিকার্ডোর বাণিজ্য তত্ত্ব বিশ্লেষণ অনেক ত্রুটি আছে একথা সত্য। কিন্তু এ তত্ত্বের ওপর নির্ভর করেই পরবর্তীকালের অর্থনীতিবিদগণ অন্যান্য তত্ত্ব প্রদান করেছেন। তাই আধুনিক অর্থনীতিবিদগণ নতুনদৃষ্টিভঙ্গিতে বাণি্য তত্ত্ব ব্যাখ্যা করেছেন। কিন্তু বাণিজ্যের মূলভিত্তি বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে রিকার্ডোর অবদানকে তারা অস্বীকার করেননি।

 


**অথবা, মধ্যযুগীয় বাণিজ্যের বৈশিষ্ট্যসমূহ কি কি?

নিম্নে মধ্যযুগীয় বাণিজ্যের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলােচনা করা হলাে :

১. নানামুখী চিন্তাধারার সমম্বয় : এরিস্টটল ব্যবসা-বাণিজ্যকে অস্বাভাবিক বলে মনে করতেন। কিন্তু স্কলাসটিক মতবাদের চিন্তাবিদরা বাণিজ্যকে সমর্থন করেন। তবে ধর্মীয় নেতারা বাণিজ্যকে ন্যায়নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিল। অর্থাৎ যুক্তিসঙ্গত মূল্যে বাণিজ্য অনুমােদিত ছিল। যেমন, সেন্ট টমাস একুইনাস বলেন, "ব্যবসায়-বাণিজ্য নেতিবাচক হলেও জাগতিক দিক থেকে আবশ্যক।" এভাবে বিভিন্ন দার্শনিক মতবাদের সমন্বয়ে বাণিজ্য সম্পর্কে মধ্যযুগীয় চিন্তাধারা গড়ে উঠেছিল।

২. বিনিময় প্রথা প্রবর্তন : মধ্যযুগে অর্থনীতিতে বিনিময় প্রথার উদ্ভব হয়েছিল। কারণ কৃষি উৎপাদনে মেনর প্রথা চালু ছিল। মেনর প্রথা যদিও আত্মপােষণ কৃষি ছিল, তথাপিও অনেক সময় কোনাে কোনাে মেনরে উদ্বৃত্ত পণ্য উৎপাদিত হতাে। এসব উদ্বৃত্ত পণ্য নষ্ট না করে নিকটস্থ শহরে প্রেরণ করা হতাে। ফলে এভাবে সমাজ তথা অর্থনীতিতে বিনিময় প্রথার উদ্ভব ঘটে।

৩. পশম রপ্তানি : ইংল্যান্ডের অর্থনীতিতে যখন মেনর ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয় তখন মেনরের মালিকগণ কৃষি উন্নয়নের পরিবর্তে পশুপালনের মাধ্যমে পশম চাষের মতাে লাভজনক ব্যবসায় নিয়ােজিত ছিল। সমগ্র ইউরােপ ও অন্য দেশে পশম জাতীয় বস্ত্রের ব্যাপক চাহিদা বৃদ্ধির কারণে ব্যবসার ভালাে সূত্রপাত হয়। ফলে ব্রিটেনে পশমের উৎপাদন ও রপ্তানি বৃদ্ধি পায়। এভাবে মধ্যযুগে ব্যবসা-বাণিজ্যের পথ সুগম হয়।

৪. অর্থের গুরুত্ব : তাদের মতে যত বেশি অর্থ থাকবে তত বেশি বিনিয়ােগ নিয়ােগ উৎপাদন, আয় ইত্যাদি বাড়বে। এজন্য তারা অর্থের উপর বেশি গুরুত্বারােপ করেন।

৫. জনসংখ্যা নীতি : বাণিজ্যবাদিরা দুটো কারণে জনসংখ্যা বৃদ্ধি সমর্থন করেন।প্রথমত , জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে সন্তায় প্রচুর শ্রম পাওয়া যাবে। এ সস্তা শ্রম দিয়ে দেশে উৎপাদিত পণ্যকে বিদেশি প্রতিযােগিতার হাত থেকে রক্ষা করা যাবে। দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন দেশের সাথে যুদ্ধ বিগ্রহেরু জন্য প্রচুর জনসংখ্যা দরকার।

৬. উৎপাদনের উপকরণসমূহ : খাদ্যে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে খাদ্য আমদানি বন্ধ হবে। এতে প্রচুর অর্থ বেঁচে যাবে যা বিনিয়ােগ ও অধিকতর নিয়ােগ এবং উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা যাবে।

৭. সুদের হার : বাণিজ্যবাদিরা কম সুদের স্বপক্ষে বক্তব্য রাখেন। মূলত তরল তহবিলের দু্প্রাপ্যতা, আনুপাতিক অর্থ ও ব্যাংকিং ব্যবস্থা এবং বণিক উৎপাদক এবং বড় বড় ব্যবসায়ীদের পারস্পরিক বিরােধিতা ইত্যাদি কারণে তারা সুদের হার কম স্তরে রাখার সুপারিশ করেন।

৮. বাণিজ্যিক বিধিনিষেধ : তারা ঔপনিবেশিক-থেকে ঔপনিবেশিক দেশে কোনাে দ্রব্য আমদানির বিপক্ষে মতামত প্রকাশ করেন। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রয়ােজনে ব্যাংক ব্যবস্থার উন্নয়নের সুপারিশ তারা করেন। অনুকূল বাণিজ্য ভারসাম্যের জন্য তারা রাষ্ট্রীয়ভাবে রপ্তানি, মৎস্য এবং জাহাজ শিল্পের জন্য ভর্তুকি প্রদানের সুপারিশ করেন।

৯. মজুরি নীতি : বাণিজ্যবাদী কম মজুরি প্রদানের পক্ষপাতী ছিলেন। তাঁদের মতে, বেশি মজুরি দিলে শ্রমিকরা কম কাজ করবে। তদুপরি মজুরি কম থাকলে উৎপাদন খরচ কম পড়বে, ফলে বিদেশে কম দামে বেশি করে পণ্য রপ্তানি করা যাবে।

**সংরক্ষণ বাণিজ্যের অপেক্ষা অবাধ বা মুক্ত বাণিজ্য ভালাে : অর্থনীতি দুই ধরনের বাণিজ্য পরিলক্ষিত হয়। যথা- ১. অবাধ বাণিজ্য ও ২. সংরক্ষণ বাণিজ্য। এ দুটি বাণিজ্যের মধ্যে কোনটি ভালাে তা এক কথায় বলা কষ্টকর। নিম্নে দুটি ধারণা বিশ্লেষণ করে তদুপরি বলা যায় কোনটি ভালাে :

১. অবাধ বাণিজ্য : দুই বা ততােধিক দেশের মধ্যে কোনাে প্রকার বিধিনিষেধ ছাড়া যে বাণিজ্য সংঘটিত হয় তাকে অবাধ বাণিজ্য বলে। অবাধ বাণিজ্যের ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গতি এবং এর ফলে বাণিজ্য শিল্প দেশসমূহের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযােগিতা বৃদ্ধি পায় এবং দেশগুলাের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিত ত্বরান্বিত হয় এর ফলে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়।

Share:

No comments:

Post a Comment

slidebar

Total Pageviews

Abdullah Mondal

Powered by Blogger.

Blog Archive

Recent Posts

বাস্তবতা

জীবনের বাস্তবতা বড়ই নিষ্ঠুর। এটাই জীবন। জীবনের বাস্তবতার বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, যতই নিষ্ঠুর হউক বা যতই কষ্ট হউক তা সয়ে নিতে হয়, মেনে নিতে হয় জীবনের প্রয়োজনেই। জীবনে কষ্ট আসলে মানসিক ভাকে যতটুকু ভেঙ্গে পড়বে জীবন তার দ্বিগুন পিছিয়ে যাবে। জীবনের সকল দূঃখ কষ্ট ও বাস্তবতাকে জীবনের অংশ হিসাবে মেনে নিয়ে স্বাভাবিক ভাবে গ্রহন করার নামই হচ্ছে সুখ।

Pages