মার্কসের উদ্ভৃত্ত মূল্য তত্ত্টি মূল্যায়ণ কর

 

**মার্কসের উদ্ভৃত্ত মূল্য তত্ত্টি মূল্যায়ণ কর।

 কার্ল মার্কসের উদ্বৃত্ত মূল্য তত্ত্ব : শ্রমিক তার মজুরির অতিরিক্ত যে মূল্য সৃষ্টি করে তাকে উদ্বৃত্ত মূল্য বলে। শ্রমিকের কাজের সময় দুই ভাগে ভাগ করা যায় । যথা- ১. আবশ্যকীয় শ্রম সময় এবং ২. উদ্বৃত্ত শ্রম সময়। শ্রম শক্তির মূল্য (মজুরি) আবশ্যিক শ্রম সময়ে উৎপদিত মূল্য নির্দেশ করে। তাই মােট শ্রম সময় থেকে আবশ্যক শ্রম সময় বাদ দিলে উদ্বৃত্ত শ্রম সময় থাকে। এই সময়ে শ্রমিক যে মূল্য সৃষ্টি করে তা হলাে উদ্বৃত্ত মূল্য।

মনে করি,

L = মােট আবশ্যক শ্রম সময় (ঘণ্টা);

L = মােট উদ্বৃত্ত শ্রম সময় (ঘণ্টা) ;

L শ্ৰম সময়ে তৈরি পণ্যের বাজার মূল্য;

S = উদ্বৃত্ত মূল্য ও

P=প্রতি ঘণ্টায় তৈরি পণ্যের চলতি বাজার মূল্য।

এ অবস্থায় বলা যায় :

TR, = LP                   (a)

TRH = LHP               (b)

S = (TRH - TR,) = (L.P-LP) = P(L-L) = P(L)                (C)

উপরের (c) নং সমীকরণ থেকে দেখা যায়, উদ্বৃত্ত মূল্য উদ্বৃত্ত শ্রম সময়ে তৈরি পণ্যের চলতি বাজার মূল্য। এই উদ্বৃত্ত মূল্য দাস প্রথা, সামন্তবাদী ও পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।

সর্বোপরি বলা যায়, পুঁজিপতিরা শ্রমের ঘনত্ব বা তীব্রতা তথা শ্রমিকদের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়ে আবশ্যকীয় শ্রম সময় কমিয়ে উদ্বৃত্ত শ্রম সময় তথা উদ্বৃত্ত মূল্য বাড়াতে পারে। কার্ল মার্কস একে "আপেক্ষিক উদ্বত্ত মূল্য" হিসেবে আখ্যায়িত করেন।


**ইসলামি অর্থনৈতিক চিন্তাধারার উন্নয়নে ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.) এর অবদান আলােচনা কর।

উত্তর : ভূমিকা : ইসলামি অর্থনীতির ক্রমবিকাশে যেসব প্রখ্যাত মনীষী ও চিন্তাবিদ অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.) এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাঁর রচিত "কিতাব আল-খারাজ" ইসলামি অর্থনৈতিক ইতিহাসের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল।

১. রাট্ট্রের অর্থনৈতিক দায়িত্ব : ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.)এর মতে রাষ্ট্রের প্রতিটি নারিকের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা প্রভৃতি মৌলিক চাহিদা পুরণের ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের অপরিহার্য দায়িত্ব। যাকাতের অর্থ থেকে এই ব্যয়ভার নির্বাহ করা সম্ভব না হলে ধনীদের ওপর তিনি অধিক হারে কর আরােপের সুপারিশ করেন।

২. সরকারি অর্থব্যবস্থা :  বহুমুখী ব্যয়ভার পূরণের জন্য যে অর্থ প্রয়ােজন তা শুধুামাত্র ধনী

ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেই আদায় করা হতাে। আবু ইউসুফ (রহ.) সরকারি আয় বৃদ্ধির জন্য কৃষি ভুমির ওপরও কর আরােপের সুপারিশ করেন। এটি সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধির ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ ।

৩. কৃষি উন্নয়ন :  কৃষির উন্নতির ওপরই অর্থনৈতিক উন্তি নির্ভরশীল।

তাই আবু ইউসুফ (রহ.) কৃষি উন্নয়নের ওপর জোর দেন। প্রয়ােজনীয় সেচের অভাবে অনেক জমিতে ফসল উৎপন্ন হয় না। এজন্য তিনি সেচ ব্যবস্থার সম্প্রসারণের সুপারিশ করেন।

৪. সেতু ও বাঁধ নির্মাণ:  রাস্তাঘাট উন্নত হলে দ্রব্যাদি একস্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তর স্বল্প ব্যয়ে ও সহজে করা সম্ভব হয়। এর ফলে অর্থনৈতিক উন্নতি ত্বরান্বিত হয়এ কারণে আবু ইউসুফ (রহ.) সেতু, বাঁধ প্রভৃতি অবকাঠামাে নির্মাণের তাগিদ দেন।

৫. কর নির্ধারণে ন্যায় বিচার : ধনীদের ওপর প্রগতিশীল হারে কর আরােপ করে গরিবদের ওপর করের বােঝা কমিয়ে  আনতে তিনি সুপারিশ করেন। প্রয়ােজনে গরিবদেরকে কর থেকে অব্যাহতি দেয়া এবং তাদেরকে যাকাতের অর্থ দিয়ে

সাহায্য করা যেতে পারে।

৬. দাম নির্ধারণ ও দাম নিয়ন্ত্রণ :  জনকল্যাণের স্বার্থে দাম নির্ধারন সরকারি হস্তক্ষেপ অপরিহার্য বলে অভিমত ব্যক্ত করেন ও নিয়ন্ত্রণে তিনি সরকারী হস্তক্ষেপ অপরিহার্য বলে মনে করেন

৭. মুদারাবা : এক পক্ষের মূলধন এবং অপর পক্ষের শ্রম , মেধা ও অভিজ্ঞতা দ্বারা যে ব্যবসা বা উৎপাদন কর্মকান্ড পারিচালিত হয় তাকে মুদারাবা বলে। আবু ইউসুফ (রহ.) এরূপ পদ্ধতির ওপর গুরুত্ব আরাে করেন। এজন্য বৈপায়ে উভয়ের অর্থোপার্জন, বিশেষ করে মূলধন থেকে বঞ্চিত লােকটিকে তার পরিশ্রমের লে লাভ করার জন্য সন্ধ্যবরহারপারস্পরিক সহযােগিতার এটি একটি উত্তম পদ্ধতি।

৮. যােগান ও দামের সম্পর্ক: আধুনিক অর্থনীতিবিদগণ যােগান বিধি আবি্কার করার বহু পূর্বে আবু ইউসুফ (রহ) যােগান ও দামের সম্পর্ক নির্ণয় করেন। তিনি বলেন, দাম বাড়লে বিক্রেতা বা উৎপাদনকারীগণ অধিক মুনাফার আশায় বেশি করে দ্রব্যাটি উৎপাদন করে। ফলে বাজারের দ্রব্যের সরবরাহ বেড়ে যায়।

৯. অংশীদারিত্বমূলক কারবার : ব্যবসা-বাণিজ্য ও উৎপাদন কর্মকাণ্ডের প্রচলিত বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে অংশীদারী কারবারের ব্যাপারে আবু ইউসুফ (রহ.) গুরুত্ব দেন। এরূপ কারবারে ঝুঁকি বণ্টন করা যায় বলে এতে উৎপাদনকারী বা ব্যবসায়ীর নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।

.*পুঁজিবাদের অভ্যন্তরেই এর ধ্বংসের বীজঅন্তর্নিহিত থাকে

**পুজিবাদ হতে সমাজতন্ত্রের উত্তরণ : সুমপিটার, মার্কসের ন্যায় বিশ্বাস করেন যে, পুঁজিবাদের সাফল্যের মধ্যে তার ধ্বংসেরবীজ নিহিত এবং এর অনিবার্য পরিণতি হচ্ছে সমাজতন্ত্র। তিনি মনে করেন যে, অত্যধিক অগ্রগতির কারণেই পুঁজিবাদ ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। অর্থাৎ জনগণের বৃহদাংশের ক্রমবর্ধমান দুরবস্থার কারণে নয় বরং পুঁজিবাদের নিজস্ব ব্রমবর্ধমান অগ্রগতির ফলেই এর ধ্বংস অনিবার্য।

সুমপিটারের মতে, পুঁজিবাদের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ভিত্তিসমূহ উদ্যোক্তার কর্মকাণ্ডের অধঃপতন, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামাের বিলুপ্তি এবং সংরক্ষণশীল রাজনৈতিক কাঠামাের নিষ্ক্রিয়তার কারণে ধুলিসাৎ হবে। উদ্যোক্তার ব্যবসা এত বিরাট হয়ে থাকে যে, সেখানে উদ্ভাবনের বিষয়টি বেতনভােগী ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে একটি আমলাতান্ত্রিক রুটিন হয়ে দাঁড়ায়। ব্যবস্থাপক শ্রেণির মধ্যে কর্মচারীসুলভ প্রবৃত্তি বিস্তার লাভ করে। ফলে মালিকদের সাথে তাদের স্বার্থের সংঘাত ঘটে।

 

**অথবা, প্যারেটোর কাম্যতার সংজ্ঞা দাও।

উত্তর : ভূমিকা : আধুনিক কালে সকল রাষ্ট্রই মূলত কল্যাণমূলক রাষ্ট্র। তাই বর্তমান কালে অর্থনৈতিক কল্যাণসম্পর্কে চিন্তাভাবনা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কিভাবে পরিচালিত হলে সমাজের কল্যাণ বৃদ্ধি পাবে এনিয়ে অর্থনীতিবিদগণ গবেষণা করেন। ক্লাসিক্যাল ও নয়া ক্লাসিক্যাল তত্বের উপর ভিত্তি করেই আধুনিক অর্থনীতিবিদদের চিন্তাভাবনা সম্প্রসারিত। আধুনিক তত্ত্বগুলাের মধ্যে প্যারেটো কাম্যতা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে ইতালির অর্থনীতিবিদ V. Pareto অর্থনৈতিক কল্যাণ সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন। প্যারেটোর মতে,

 সামাজিক কাম্যতা এমন একটি অবস্থা যেখানে উপাদান উৎপাদনের পুনর্বণ্টনের দ্বারা কোনাে ব্যক্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে অপর ব্যক্তির কল্যাণ বৃদ্ধি করা যায় না। প্যারেটোর এই সামাজিক কাম্যতার অবস্থাটি একটি চূড়ান্ত কাম্যাবস্থা এ অবস্থায় যদি কারাে কল্যাণ বৃদ্ধি করতে হয় তবে অপর ব্যক্তির ক্ষতি করেই কেবল মাত্র সেই কল্যাণ বৃদ্ধি সম্ভব। তাই প্যারেটোর মতে চূড়ান্ত কাম্যাবস্থায় পৌছানাের পর অপর কোনাে অবস্থায় স্থানান্তরের মাধ্যমে কল্যাণ বৃদ্ধি অসম্ভব।


 

Share:

No comments:

Post a Comment

slidebar

Total Pageviews

Abdullah Mondal

Powered by Blogger.

Blog Archive

Recent Posts

বাস্তবতা

জীবনের বাস্তবতা বড়ই নিষ্ঠুর। এটাই জীবন। জীবনের বাস্তবতার বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, যতই নিষ্ঠুর হউক বা যতই কষ্ট হউক তা সয়ে নিতে হয়, মেনে নিতে হয় জীবনের প্রয়োজনেই। জীবনে কষ্ট আসলে মানসিক ভাকে যতটুকু ভেঙ্গে পড়বে জীবন তার দ্বিগুন পিছিয়ে যাবে। জীবনের সকল দূঃখ কষ্ট ও বাস্তবতাকে জীবনের অংশ হিসাবে মেনে নিয়ে স্বাভাবিক ভাবে গ্রহন করার নামই হচ্ছে সুখ।

Pages