****শিশুমৃত্যু : সাধারণত
জন্মের পর এক বছরের মধ্যে জীবিত সন্তানকে শিশু বলে। এক বছর পর্যন্ত জীবিত জন্মগ্রহণকারী
শিশুরমৃত্যু হলে তাকে শিশুমৃত্যু বলে। শিশুমৃত্যু জন্মের অব্যাহতির পর অথবা এক
সপ্তাহ বা এক মাস কিংবা এক বছরের মধ্যে হতে পারে। সংকীর্ণ অর্থে এটিই হচ্ছে
শিশুমুত্যু। শিশুমৃত্যুকে দু'ভাগে ভাগ করা যায়। যথা :
১. নবজাত
শিশুরমৃত্যু : যেসব শিশু ভূমিষ্ট হবার পর ২৮ দিন বা একমাসের মধ্যে মৃত্যুবরণ করে
তাদেরকে নবজাত শিশুমৃত্যু বলে।
২. জন্মােত্তর শিশুমৃত্যু : একমাসের উপরে এবং প্রথম জন্ম বার্ষিকী
সময়ের মধ্যে শিশুমৃত্যুকে জন্মােত্তর শিশুমৃত্যু বলা হয়।
দেশে শিশুরমৃতুযু ঘটে কোথাও কম আবার কোথাও বেশি। উন্নত ও অনুন্নত সকল
দেশেই
***শিশুমৃত্যু উচ্চ হওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। শিশুমৃত্যু উচ্চ হলে তাকে
এক কথায় ভয়াবহ বলা যায়। শিশুমূত্যু উচ্চ হওয়ার কারণসমূহ নিম্নে আলােচনা করা
হলাে ।
১. জন্মের সাথে সম্পর্কিত কারণ : জন্মের সাথে সম্পর্কিত যেসব কারণে
শিশুমৃত্যু হয় পূর্ণ গর্ভবতী সময়ের পূর্বে যেমন বিকলাঙ্গতা বা অঙ্গবিকৃতি, জন্মক্ষত বা জন্ম আহত, শ্বাসরােধ মৃত্যু,
সময়মতাে চিকিৎসার অভাব, দেরিতে চিকিৎসা
সাহায্য ইত্যাদি।
২. নিম্ন জীবনযাত্রার মান : পিতামাতার উচ্চ আয় সন্তানের জনা মঙ্গল বয়ে
আনে। অন্য কণায় অথনেতিক অবস্থা ভাল হলে
শিশুর মৃত্যুহার কমে যায়। অর্থাৎ শিশুমৃত্যু এবং অর্থনৈতিক বা আর্থিক অবস্থা
বিপরীতভাবে নির্ভরশীল।
৩, শিক্ষার অভাব :
অশিক্ষিত দম্পত্তির ক্ষেত্রে শিশুমৃত্যু তুলনামূলকভাবে বেশি। অর্থাৎ অশিক্ষিত
দম্পতি শিশু রােগ সম্পর্কে জ্ঞাত নয় বলে মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
৪. টিকিৎসা সুযােগ সুবিধা : পল্লি অঞ্চলের লােক অশিক্ষিত, বিস্তহীন এবং দারিপ্র্য সীমার নিচে বসবাস করে তারা এসব সুযােগ সুবিধা
নাগাল পায় না। চিকিৎসা সতর্কতা অবলম্বন করলে শিশু রােগ নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়
এবং শিশু মৃত্যুহার হ্রাস পায়। বিপরীত অবস্থায় বৃদ্ধি পায়।
৫. উচ্চ জন্মহর : ঘন ঘন সন্তান জন্ম মাতু স্বাস্থ্যের উপর রিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। বেশি সন্তান জন্ম হলে অতিরিক্ত শিশু সন্তান
লালন পালনের জন্য ব্যয় বেশি পড়ে। ফলে কোনাে শিশু রােগে আক্রান্ত হলে যত্ন ও প্রতিষেধকের প্রতি গুরুত্ব কম থাকে
তার জন্য শিশুমৃত্যু বৃদ্ধি পায়।
৬. মাতৃ মৃত্যু : উচ্চ শিশুমৃত্যুর আরেকটি প্রধান কারণ হলাে মাতৃ
মৃত্যু। মায়ের মৃত্যুর কারণে শিশুরা মায়ের বুকের দুধ পায় না। মায়ের বুকের দুধ থেকেই শিশু রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা পায়।
অপুষ্টির কারণে মায়ের মৃত্যু হলেই শিশুর মৃত্যু অবধারিত।
৭. অবৈধ জন্ ও মৃত্যু : অবৈধ ভান্ম ও মৃত্যু গ্রাম অঞ্চলের তুলনায়
শহর অঞ্চলে বেশি লক্ষ করা যায়। সামগ্রিকভাবে অবৈধ সন্তান মৃত্যু সবারা দেশের
মৃত্যুহারকে বৃদ্ধি করে। উন্নত বিশ্বে এসব মৃত্যুহার বেশি।
৮, নবজাত
শিশুমৃত্যু : নবজাত শিশুমৃত্যু শিশুমৃত্যুর অন্যতম কারণ। শিশুর ওজন কম থাকলে, জন্ম মুহূর্তে আঘাত পেলে, হাম, ধনুষ্ট্কার এবং
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ নবজাত উচ্চ শিশুমৃত্যুর অন্যতম কারণ।
**অতিরিক্ত প্রজনন হারের কারণগুলাে উল্লেখ কর।
**বাংলাদেশে জনসংখ্যাবৃদ্ধির কারণসমূহ
*প্রজনন হার বৃদ্ধির কারণ :
বাংলাদেশ তথা বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশের প্রজনন হার বৃদ্ধির কারণগুলাে নিম্নে দেওয়া হলাে : ১. জলবায়ু ও ভৌগােলিক অবস্থান : উন্নত দেশসমূহের অবস্থান সাধারণত শীতপ্রধান। তাই উন্নত দেশের প্রজনন হার কম। তাছাড়া
যেসব দেশ গ্রীষ্মপ্রধান ও বহু বৃষ্টিপাত অঞ্চল
সেখানে জন উর্বরতা বেশি।
২. দারিদ্র :দারিদ্রতায় বেকারত্বের কারনে বিভিন্ন
কাজকর্ম থেকে বঞ্চিত থাকে। যার ফলে
অনিয়ন্ত্রিত
মিলনে প্রজনন হার বৃদ্ধি পায়।
৩. শীঘ্র ও
বাল্যবিবাহ : উন্নয়নশীল দেশের আবহাওয়া এবং অতি পুষ্টির কারণে মেয়েরা কম বয়সে
যৌবন প্রাপ্ত হয়। ফলস্বরূপ প্রজনন শক্তি সৃষ্টি হয়। তাছাড়া অনেক
উন্নয়নশীল দেশে বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে বাল্যবিবাহ প্রথা প্রচলিত আছে। যার ফলে একের পর এক সন্তান জন্ম হতে থাকে। তাই বলা যায়, প্রজনন বৃদ্ধিতে বাল্যবিবাহ বিশেষ ভূমিকা রাখে।
৪. জন্ম
নিয়ন্ত্রণে অসচেতন : অনুন্নত দেশের জনগণ জন্ম নিয়ন্ত্রণে অসচেতন এবং উদাসীন
থাকার কারণে প্রজনন বৃদ্ধি পেতে
থাকে। নানা কুসংস্কারের অজুহাতে অনুন্নত দেশের পিতামাতারা ক্রমেই অধিক সন্তান জন্ম
দিতে থাকে। যার ফলে প্রজনন হার বৃদ্ধি পায়।
৫. শ্ত্রী
শিক্ষার অভাব : অনুন্নত দেশে উচ্চ প্রজননের কারণ হলাে নারী শিক্ষার অভাব। শিক্ষার
অভাবের কারণে নারীরা জন্ম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে
ইতস্তত বােধ করে এবং অপ্রয়ােজনীয় মাতৃত্ব গ্রহণ করে প্রজননকে বৃদ্ধি করে
৬, অপর্যাপ্ত টিতবিনােদন : অনুন্নত সামাজিক অবকাঠামাের কারণে উন্নয়নশীল দেশের
নারী পুরুষ সাংস্কৃতিক শিক্ষামূলক
চিত্রবিনােদন থেকে বৃঞ্চিত হয়। চিত্তবিনােদনের পরিবর্তে অনিয়ন্ত্রিত যৌনমিলনকে
বেছে নেয়। তাছাড়া পারবার পরিকল্পনা সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকে না।
৭. ক্রুটিপূর্ণ
পরিবার পরিকল্পনা কার্কক্রম : অদক্ষ প্রশাসন, অদক্ষ ও দায়িত্বহীন কর্মক্যর্তা এ কর্মচারীর কারণে অনুন্নত দেশের জনগণ অসচেতন
থাকে। তার ফলস্বর প্রজনন হার বৃদ্ধি পায়।
৮. সম্ভানের
অর্থনৈতিক মূল্য : কৃষি ভিত্তিক পরিবারগুলাে ভবিষ্যতের নিরাপত্তার আশায় এবং
বাড়তি আর্থিক সরিধা পাওয়ার জন্য অধিক সন্তানের জন্ম দেয়। ফলে তাদের মধ্যে প্রজনন
হার অধিক বৃদ্ধি পায়।
৯,স্বল্পব্যয় সম্পন্ন শিশু পালন : উন্নয়নশীল দেশের প্রজনন
হার বৃদ্ধির অন্য একটি কারণ হলাে স্বল্প ব্যয়ে শিশু লালন পালন করা যায়। উন্নয়নশীল দেশে শিশুদের জন্য খব বেশি পুষ্টিকর খাবার দিতে
হয় না, তাদেরকে ভালাে কাপড় দিতে হয় না, শিক্ষার জন্য তেমন ব্যয় করে না এবং উনয়নশীল দেশের জনগণের ধারণা শিশুর জন্য
ব্যয় কম, লাভ বেশি।
১০. উচ্চ শিশু
মৃত্যুহার : উন্নয়নশীল দেশে শিশু মৃত্যুহার বেশি। তাই উচ্চ মৃত্যু হার জন্মহার
বৃদ্ধি করে। অধিক শিশু সন্তান জন্ম নিলে ভবিষ্যতে নিরাপত্তার তেমন
বাঁকি থাকে না। সেই প্রত্যাশা থেকে পিতামাতারা অধিক সন্তানের জন্ম দেয়। ফলে উন্নয়নশীল দেশে প্রজনন হার বৃদ্ধি পায়।
১১. সামাজিক
কুসংস্কার : প্রজনন হার বৃদ্ধিতে সামাজিক কুসংস্কার প্রভাব বিস্তার করে।
উন্নয়নশীল দেশে কন্যাসন্তানের চেয়ে পুত্র সন্তানকে অধিক গুরুত্ব দেয়। যার ফলে
পুত্র সন্তানের আশায় অধিক প্রজনন হয়।








No comments:
Post a Comment