স্থানীয় বা গ্রামীণ সামাজিক প্রেক্ষাপটে যে বিষয়সমূহ নেতৃত্বের মূল ভিত্তি বা উপাদান হিসেবে কাজ করে সেগুলি নিয্নে উপস্থাপন করা হলোঃ
১.বংশগত মর্যাদা : গ্রামীণ নেতৃত্বের,একটি বড় উপাদান হলাে বংশ মর্যাদা। গ্রামীণ সমাজে যে বংশে শিক্ষিত লােকের
সংখ্যা বেশি এবং উচ্চ পদস্থ চাকুরী করে সেই বংশ গ্রামীণ সমাজে ক্ষমতাবান | আবার যে বংশে সদস্যা সংখ্যা বড় সে বংশ ব্যাপক জনসমষ্টির উপর প্রভাব
বিস্তার করতে পারে।
২. ব্যক্তিগত
গুণাবলি : ব্যক্তির জ্ঞান, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা,জনপ্রিয়তা, ক্যারিশমা,
শিক্ষা, সততা ইত্যাদি গুণাবলির মাধ্যমে কোনাে ব্যক্তি নেতা হতে পারেন। তাছাড়াও সমাজের শিক্ষক, বুদ্ধিজীবি, চাকুরীজীবী
বা অন্য যে কোনাে উন্নত পেশার ব্যক্তিরা নেতৃত্বের আসন অলঙ্কত করতে পারেন।
৩. ভূমির মালিকানা : যে যত বেশি ভূমির মালিক সে তত্র বেশি সম্মানিত।
ভূমির মালিক ভার
কাজ করা বর্গাচা্যী, ভূমিহীনদের প্রভু হিসেবে মনে করে, তাই ভূমির
মালিকানা অতি সহজেই নেতা বা নেতৃত্ব তৈরি করে।
৪.পারিবারিক ঐতিহ্য : গ্রামীণ নেতৃত্বের অন্যতম একটি
প্রধান উপাদান পারিবারিক ঐতিহা। বিশেষ মর্যাদ্যার অধিকারী,ক্ষমতাশালী, অভিজাত,জমিদার /জমির মালিকেরা নেতা হিসেবে স্বীকৃত ।উদাহরণস্বরুপ-মিয়া বাড়ি, তালুকদার, খান, চৌধুরী বাড়ির প্রধান গ্রামের নেতা হন।
তাদের মৃত্যুর পর পরবর্তী পরিবার প্রধান নেতা হিসেবে স্বীকৃত পান।
৫.রাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের সাথে যোগাযোগ : সরকার তার কাজের
সুবিধার্থে গ্রামীণ কিছু নেতার সাহায্য নেয়। এ সময়ে যারা সরকারের সাথে সংযােগ
রক্ষা করে চলতে পারে তারা গ্রামীণ নেতৃত্ব পেয়ে যান। উদারহরণস্বরূপ- সরকারি বিভিন
কল্যাণমূলক কাজ যেমন- রিলিফ, অর্থ-সাহায্য,
খাদ্য-সাহায্য প্রদান করে, এ সময় যারা
সরকারের সাথে লিয়াজো করতে পারে তারা নেতৃত্ব পেয়ে যান।
৬.ধর্মীয় প্রাধান্য :
বর্তমানে মসজিদের ইমাম, পীর-মাশায়েয,
মাদ্রাসার শিক্ষক, মাওলানা, মৌলভী, পুরােহিতরা ধর্মীয় সমস্যার সমধান
ছাড়াও যে কোনাে বিরােধ মীমাংসা করে থাকেন। এভাবে তারা গ্রামীণ সমাজে নেতৃত্ব
পেয়ে যায়।
৭. আত্নীয়তার
সম্পর্ক : গ্রামীণ সমাজ কাঠামােতে যারা শহরে অভিজাত পরিবারের সাথে আত্মীয়তা করেন, গ্রামীণ সমাজে ঐ আত্মীয়তার সম্পর্ক কে কাজে
লাগিয়ে নেতা হয়ে বসেন। কারণ ঐ আত্মীয়ের মাধ্যমে তারা প্রশাসনিক বা আর্থিক
সুবিধা পেয়ে থাকেন। বিভিন্ন জরিপ বলছে, বড় বিয়ে বা
আত্মীয়তা করার সুবাদে অনেকেই নেতা হয়েছেন।
৮. সন্ত্রাস সৃষ্টির সামর্থ :
বর্তমান সময়ে গণতান্ত্রিক সমাজ কাঠামাে বিদ্যমান থাকলেও "জোর যার মুল্ুক তার
নীতিতে কাজ হচ্ছে। নেতা হওয়ার জন্য গ্রামীণ সমাজে কেউ কেউ সন্ত্রাসী পােষে। এরা
সন্ত্রাসের ভয় দেখিয়ে গ্ামীণ নেতৃত্ব কজ্বা করার চেষ্টা করে। তবে যে বা যারা এটা
করতে পারে দুভার্গ্যজনকভাবে এরাও সমাজের নেতা হয়ে যান।
৯. আনুষ্ঠানিক নেতৃত্ব : গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় কাঠামাের ভিতরেই যারা
ক্ষমতা ভােগ করে যেমন (UP চেয়ারম্যান,
মেম্বার) এরা সরকার এ আইনগতভাবে স্বীকৃত নেতা। রাষ্ট্রীয়
ক্ষমতার বলে এরা গ্রামীণ নেতৃত্বে প্রভাব বিস্তার করে।








No comments:
Post a Comment