সুমপিটার মডেলটি বর্ণনা কর

 

**বাণিজ্যবাদ : ষােড়শ শতাব্দীর শেষ ভাগ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগ (১৫৯০-১৭৮১০) পর্যন্ত দীর্ঘকাল যে চিন্তাধারা বা মতবাদের ভিত উঠে তাকে ভূমিবাদী চিন্তাধারা বলে। ষােড়শ শতাব্দীর শেষ ভাগ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগ (১৫৯০-১৭৮১০) পর্যন্ত ইতালি, ইংল্যান্ড, ফ্রান্সে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করে। এ অবস্থায় নতুন অর্থনৈতিক ভাবধারার সৃষ্টি হয়। এ সকল ভাবধারাকে বাণিজ্য তন্ত্র প্রথা,কালবার্ট,নিরোধ প্রথা,বাণিজ্য প্রথা বলা হয় সকল ধারণাকে একত্রে বাণিজ্যবাদ বলা হয়।

পাশ্চাত্যে বিভিন্ন ভাবধারা যখন ক্রমাগত জন্ম নিচ্ছিল তখন রাষ্ট্রশাসক ও রাজনীতিবিদগণ তাতে প্রকৃত সম্পদ বৃদ্ধি পাবে কিনা তা নিয়ে ব্যাখ্যা দিতে আরম্ভ করল। ব্যবসায়ী সমাজ বলতে লাগল যে, দেশে সােনা, রুপা ও অন্যান্য মূল্যবান সম্পদের আগমন ঘটলেই দেশ সমৃদ্ধ হবে। আবার সােনা, রুপা বা মূল্যবান দ্রব্যাদি তখনই দেশে আমদানি হবে যখন দেশে আমদানির তুলনায় রপ্তানি বেশি হবে।

**অথবা, সুমপিটার মডেলটি বর্ণনা কর।

সুমপিটার প্রদত্ত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তত্ত্ব : নিম্নে পুঁজিবাদ হতে সমাজতন্ত্র উত্তরণের প্রক্রিয়া আলােচনা করা হলাে : সুম্পিটার সর্বপ্রথম ১৯১১সালে Theory of Economic Development' নামে তার অথনৈতিক প্রবৃদ্ধি সম্পর্কিত তত্ত্ব প্রদান করেন। তার তত্ত্বে উদ্ভাবন এবং উদ্যোক্তা উন্নয়নের ক্ষেত্রে যে ভূমিকা রাখে তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এবং পুঁজিবাদ হতে সমাজতন্ত্রে উত্তরণের প্রক্রিয়া দেখানাে হয়েছে।

এ অবস্থায় কোনাে মুনাফা, সুদের হার, সঞ্জয়, বিনিয়ােগ অবস্থা অনিচ্ছাকৃত বেকারত্ব থাকবে না। এ অবস্থাকে সুমপিটার "বৃত্তাকার প্রবাহ" নামে ব্যাখ্যা করেন। অর্থাৎ প্রতিবছর একই ধরনের দ্রব্য, একই কৌশলে, একই পরিমাণ উৎপন্ন হয়। এক্ষেত্রে একই পরিমাণ চাহিদার জন্য একই যােগান এবং নির্দিষ্ট যােগানের জন্য এ পরিমাণ চাহিদা থাকবে এ বৃত্তাকার প্রবাহ সৃষ্টিতে সহায়তা করে ভূমি এবং শ্রমিক, যা আয় সৃষ্টি করে এবং এ আয় অভাব দূর করতে সাহায্য করে। তার মতে উন্নয়ন হচ্ছে বৃত্তাকার প্রবাহের একটি স্বতঃস্ূত এবং বিচ্ছিন্ন পরিবর্তন। যার ফলে ভারসাম্যাবস্থায় অস্থিরতা দেখা দেয় এবং ফলশ্রতিতে প্রাথমিক ভারসাম্য অবস্থার স্থানান্তর পরিবর্তন হয়। উন্নয়নের মাধ্যমে স্থির বা

অনড় অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার জন্য মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করবে উদ্ভাবন বা আবিষ্কার।

মডেলের ব্যাখ্যা : সুমপিটার তার মডেলকে কয়েকটি বিষয়ের সাহায্যে ব্যাখ্যা করেছেন।

১. উদ্যোক্তার ভূমিকা : সুমপিটারের মতে, ব্যবস্থাপনা দক্ষতাকে ছাড়াও ধীশক্তির অধিকারী উদ্যোক্তাই কেবল অর্থনীতিকে তেজী করতে পারে। কোথায়, কীভাবে পুঁজি ব্যবহার হবে তা একজন দক্ষ ও বুদ্ধিমান উদ্যাক্তাই নির্ধারণ করতে পারে । একজন দক্ষ উদ্যোক্তাকে মূলত নিম্নোেক্তভাবে অনুপ্রাণিত হতে হবে।

২. মুনাফার ভূমিকা :  সুমপিটারের মতে, প্রতিযােগিতামূলক ভারসাম্যের ক্ষেত্রে দ্রব্যের দাম উৎপাদন ব্যয়ের সমান হয় এবং কোনাে মুনাফা থাকে না। উদ্ভাবনের ফলে যে গতিশীল পরিবর্তন হয়, তাই মুনাফা সৃষ্টি করে, যতক্ষণ পর্যন্ত না উদ্ভাবন সাধারণ পর্যায়ে নেমে আসে ততক্ষণ পর্যন্ত এ ধারা চলতে

থাকবে।

৩. বাণিজ্যিক চক্র : ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে পুরাতন শিল্প দ্রব্যের চাহিদা যােগানের তুলনায় বৃদ্ধি পায়। এর দরুন দাম বৃদ্ধি পায় যা মুনাফা বৃদ্ধি করে এবং ফলস্বরূপ পুরাতন ফার্মগুলাে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করে। পুরাতন ঋণের সাথে নতুন ঋণ যুক্ত হয়ে অর্থনীতিতে একটি অগ্রগতির ধারা সৃষ্টি করে।

৪. চক্রাকার প্রবাহ ভাঙার উপায় :যখন উদ্যোক্তা মুনাফা অর্জনের জন্য নতুন দ্রব্য বাজারে ছাড়াবে তখনই এ অবস্থার সৃষ্টি হবে। বৃত্তাকার চক্র ভাঙার জন্য ব্যাংক ঋণ সম্প্রসারণের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের জন্য অর্থসংস্থান করা হয়। এজন্য সুদ প্রদান করা হয়।

৫. ঋণের ভূমিকা :  বাধ্যতামূলক সঞ্চয় নিঃসন্দেহে পুঁজি বৃদ্ধির সহায়ক। তবে সুমপিটার মডেলে পুঁজি বৃদ্ধির সীমাবন্ধতা স্বীকৃত। বিনিয়ােগ হতে প্রাপ্ত মুনাফা থেকে উদ্যোক্তাগণ ব্যাংক ঋণ পরিশােধ করে দেবে এবং এভাবেই ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে বিনিয়ােগ সম্প্রসারিত হবে বলে সুমপিটার মনে করেন।

৬. ভোগকারীর সার্বভৌমত্ব :ভােগকারীর রুচি এবং পছন্দের ভিত্তিতে উৎপাদনকারী দ্রব্য উৎপাদন করে না। বরং তার গতিশীল ভূমিকার মাধ্যমে ভােগকারীর রুচির পরিবর্তনে অথবা নতুন চাহিদা সৃষ্টির প্রচেন্টায় উৎপাদনকারী যথেষ্ট স্বার্থক বলে মনে করেন।

 

 


**অথবা, বাণিজ্যবাদী চিন্তাধারার ক্ষেত্রে টমাস মুন এর অবদান পর্যালােচনা কর।

 টমাস মুন (১৫৭১-১৬৪১) ছিলেন একজন বিখ্যাত ইংরেজ বাণিজ্যবাদী চিন্তাবিদ। তিনি তৎকালীন যুগে ইন্ডিয়া কোম্পানি পরিচালনা পর্ষদের একজন সদস্য ছিলেন। বাণিজ্যবাদী চিন্তাধারার ক্ষেত্রে, তার অবদান ছিল তাৎপর্যপ অন্যান্য বাণিজ্যবাদী চিন্তাবিদের থেকে মুনের চিন্তাধারা বেশি বৈচিত্র্যপূর্ণ।

০ বাণিজ্যবাদী চিন্তাধারার ক্ষেত্রে টমাস মুন এর অবদান : নিম্নে বিভিন্ন বিষয়ে তার মতামত অবদান আলােচনা করা হলো:

, সম্পদের ধারণা : মুন দেশের সম্পদ বলতে এমন সব জিনিস বুঝান যা কোনাে সমাজে মানুষের সভ্য জীবনের জ্য প্রয়ােজন হয়। কিছু বাণিজ্যবাদী সম্পদ বলতে অর্থের পরিমাণ বুঝতেন। তিনি বলেন কোনাে দেশের সম্পদ একদিকে যেমন প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে সৃষ্টি হয় অন্যদিকে তেমনি জনগণের শ্রম ও দক্ষতার ওপর নির্ভর করে। এত কিছু বলার পরও তিনি বলেন যে এগুলাে অনেকটা অনিশ্চিত এবং স্বল্প পরিমাণে হতে পারে।

২. বাণিজ্যের গুরুত্ব : উমাস মুন বলেন বৈদেশিক বাণিজ্য হলাে রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুতবপূর্ণ দিক। তার মতে বৈদেশিক বাণি্যের ওপর রাষ্ট্রের যাবতীয় ক্ষমতা, শক্তি, উন্নতি ও অগ্রগতি নির্ভর করে। তিনি বলেন দেশে ধনসম্পদ আসবে একমাত্র বৈদেশিবাণিজ্যের মাধ্যম। এজন্য আমদানি কম করতে হবে এবং এমন কথাও বলেন যে বিদেশ থেকে প্রয়ােজনে সম্তা দামে বিভিন্ন দ্রব্য ইংল্যান্ডে আমদানি করে সময় ও সুযােগমতাে ঐসব দ্রব্যাদি বেশি দামে অন্য দেশে রপ্তানি করতে হবে।

, বহুমুখী বাণিজ্য : টমাস মুন তৎকালীন ইংল্যান্ডের জন্য ত্রিমুখী বাণিজ্যের সুপারিশ করেন।

প্রথমত, কোনাে বিদেশি দেশ থেকে দ্রব্যাদি ক্রয় করে মজুত করে পরবর্তী সময়ে বেশি দামে অন্য দেশে সেগুলাে বিক্রি করে দেওয়া।

দ্বিতীয়ত, ইংল্যান্ড নিজের পণ্যাদি অপরাপর দেশে রপ্তানি করবে।

ভৃতীয়ত, বাণিজা দ্রব্যের সাথে প্রয়ােজনে মুদ্রাও বিদেশে রপ্তানি করা যায়। কারণ এভাবে মুদ্রা রপ্তানি করে বিদেশি দ্র্য কম দামে দেশে আনা সম্ভব হবে।

৪. অনুকূল বাণিজ্য ভারসাম্য : টমাস মুন মাঝে মাঝে বাণিজ্যের সুবিধার জন্য বিদেশ থেকে পছন্দ সই দ্রব্যাদি এনে ব্যবহারের পক্ষে মত প্রকাশ করলেও তিনি মনে করতেন আমদানি কমিয়ে রপ্তানি বাড়ানাে দরকার। এতে বাণিজ্য ভারসাম্য দেশের অনুকূলে আসবে। তিনি বিদেশি মূল্যবান দ্রব্য যতটা সম্ভব কম ব্যবহার এবং বায় সংকোচনের ও গুরুত্বারােপ করেন।

৫. ধনসম্পদ বাড়ানাের উপায় : দেশের ইংল্যান্ডের ধনসম্পদ বাড়ানাের জন্য টমাস মুন মিতব্যয়িতার ওপর জোর দেন।

, ব্যবসায়ী শ্রেণির গুরুত্ব/ভূমিকা : ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে মুন-এর ধারণা উচ্চ ছিল। তার মতে এ শ্রেণির লােকের অবস্থা ন্নত হলেই দেশের অবস্থা উন্নত হবে। তিনি বলেন বৈদেশিক বাণিজযে অবহেলা অথবা বিদেশিদের প্রতিঘাতের দরুন বৈদেশিক বাণিজ্য সংকোচন বা বনধ হয়ে গেলে ব্যবসায়ী শ্রেণি দরিদ্র হয়ে যাবে। এতে সদেশেরসমূহ ক্ষতি হবে। এ তিনি এ শ্রেণির জন্য সব ধরনের সুযােগ-সুবিধা রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রদানের সুপারিশ করেন।

Share:

No comments:

Post a Comment

slidebar

Total Pageviews

Abdullah Mondal

Powered by Blogger.

Blog Archive

Recent Posts

বাস্তবতা

জীবনের বাস্তবতা বড়ই নিষ্ঠুর। এটাই জীবন। জীবনের বাস্তবতার বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, যতই নিষ্ঠুর হউক বা যতই কষ্ট হউক তা সয়ে নিতে হয়, মেনে নিতে হয় জীবনের প্রয়োজনেই। জীবনে কষ্ট আসলে মানসিক ভাকে যতটুকু ভেঙ্গে পড়বে জীবন তার দ্বিগুন পিছিয়ে যাবে। জীবনের সকল দূঃখ কষ্ট ও বাস্তবতাকে জীবনের অংশ হিসাবে মেনে নিয়ে স্বাভাবিক ভাবে গ্রহন করার নামই হচ্ছে সুখ।

Pages