অর্থনীতিতে অদৃশ্য হাত কাকে বলে?

 

*** ্যালথাস তত্ত্ব :১৯৭৮ সালে 'An Eassay on the Principle of Population' a জনসংখ্যাবৃদ্ধি ও খাদ্য উৎপাদন সংক্রান্ত একটি তত্ত্ব প্রদান করেন। এ তত্ত্বের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য নিম্নে প্রদান করা হলাে ।

১. মানুষের জীবনধারণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রয়ােজনীয় উপাদান খাদ্যআর জনসংখ্যার উপর খাদ্যের যােগান গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে। অন্যদিকে, জনসংখ্যা খাদ্যের যােগান দ্বারা সীমাবদ্ধ থাকতে বাধ্য।

২. মানবজাতির প্রজনন ক্ষমতা ও সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি। তাই জনসংখ্যা জ্যামিতিক হারে যেমন- ২, , , ১৬, ৩২, ৬৪ ইত্যাদি হারে বৃদ্ধি পায়, অথাচ খাদ্য উৎপাদন গাণিতিক হারে, যেমন- ১, , , , , ৬ ইত্যাদি হারে বৃদ্ধি পায়। সুতরাং পৃথিবীর জনসংখ্যা প্রতি ২৫ বছরে দ্বিগুণ হওয়ার ফলে জনসংখ্যা ও খাদ্য উৎপাদনের মধ্যে ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গেলে খাদ্য সংকট দেখা দেবে।

৩. কোনাে প্রতিরােধ ব্যবস্থা না থাকলে খাদ্য বৃদ্ধির ফলে জনসংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে। খাদ্য উৎপাদন এবং জনসংখ্যাবৃদ্ধির পার্থক্যের ফলে ম্যালথাসের মতে, কোনাে দেশে অতিরিক্ত জনসংখ্যা দেখা দিতে বাধ্য। এ পার্থক্যের মূল কারণসমূহ নিম্নরূপ

১. খাদ্য জনসংখ্যা প্রবৃদ্ধি যেমন- যেসব উপাদান দ্বারা নির্ধারিত হয় সেগুলাে পরস্পর স্বাধীন

২. জনসংখ্যার পুনঃসংযােজন হার উচ্চ এবং তা অব্যাহতভাবে পরিলক্ষিত হয়।

৩. জমির উর্বরতা স্থির থাকে না। কারণ একই জমিতে বার বার শ্রম নিয়ােগ করা হলে খাদ্য উৎপাদন ক্রমশ কম হারে বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।

ম্যালথাস তাঁর তত্ত্বে জনসংখ্যাবৃদ্ধির প্রবণতাকে দু'ভাবে প্রতিরােধ করার কথা বলেছেন।

 যথা : ক. প্রতিরােধমূলকব্যবস্থা,

 খ. প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতা।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলােচনা শেষে আমরা বলতে পারি, ম্যালথাসের তত্ত্টি নানা ধরনের বৈশিষ্ট্য এবং

দুর্বলতার সমন্বয়। ম্যালথাস মনে করেন, খাদ্য উৎপাদন জনসংখ্যাবৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে চলতে পারছে না। ফলে সৃষটি হচ্ছে এক ধরনের শুন্যতা বা ভারসাম্যহীনতা। ফলে ঘটে যায় বিভিন্ন ধরনের বিপর্যয় যােগাযােগ ও জ্ঞানবিজ্ঞানের উন্নতি গর্ভনিরােধক প্রযুক্তির আবিষ্কার, চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতির ফলে জনসংখ্যাবৃদ্ধির হারকে যে নানাভাবে প্রভাবিত করে তা ম্যালথাস স্বীকার করেননি। ম্যালথাসের তত্ত্বের দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে ম্যালথাসের তত্ত্বটি বেশ কার্যকর।

***


অর্থনীতিতে অদৃশ্য হাত কাকে বলে
?

অদৃশ্যহাত : অদৃশ্য হাত বলতে মূলত কোনাে প্রকার হস্তক্ষেপবিহীন মুক্ত বাজার প্রক্রিয়া বুঝায়। এ প্রক্রিয়ার বাজা চাহিদা ও যােগান দ্বারা দ্রব্য, সেবা এবং উপকরণের দাম নির্ধারণ হবে। এক্ষেত্রে চাহিদা, যােগান ও দামের ওপর কোনাে বাহ্যিক হস্তক্ষেপ থাকবে না। এরূপ প্রক্রিয়ায় ব্যক্তিস্বার্থে উৎপাদন, বিনিময়, বণ্টন এবং ভােগের কাজ সম্পাদন হবে।

মুক্তবাজার ব্যবস্থায় অর্থনৈতিক কার্যাবলি স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত হয়। কেননা এক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বার্থকে সমান রেখে উৎপাদক, বিনিয়ােগকারী এবং ভােক্তা বিভিন্ন অর্থনৈতিক কাজকর্ম সম্পাদন করে। যেমন ভােত্তারা সীমিত আয় দ্বারা দ্রব্যসামগ্রী ভােগের মাধ্যমে উপযােগ সর্বাচ্চ করবে। উৎপাদক এবং বিনিয়ােগকারীরা তাদের বাজেটেসাপেক্ষে দ্রব্য উৎপাদন করে তা বিক্রি করে মুনাফা সর্বোচ্চ করার চেষ্টা করবে। এক্ষেত্রে বাজার দাম অদৃশ্য হাত হিসেবে কাজ করে। যে দ্রব্য বা সেবার দাম বেশি তার উৎপাদন বেশি হবে।

 

**কেইসের কার্যকর চাহিদা : কার্যকর চাহিদা আবার নির্ভর করে দেশের সামগ্রিক চাহিদা ও যােগানের ওপর। দেশের সামগ্রিক চাহিদা বলতে মােট ভােগ চাহিদা ও বিনিয়ােগ চাহিদার সমষ্টিকে বুঝায়। সমাজে আয় ও নিয়ােগের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে মােট চাহিদা ও বাড়ে। ফলে জাতীয় আয়ের বিভিন্ন স্তর অনুযায়ী চাহিদার মাত্রা বিভিন্ন হয়ে থাকে। কিন্তু চাহিদার সকল স্তর কার্যকর চাহিদা নয়। কারণ চাহিদার সকল স্তর বা পরিমাণই যােগানের সমান হয় না।

কেইনসের মতে, নিয়ােগ কার্যকরী চাহিদা দ্বারা নির্ধারিত হয়। কার্যকরী চাহিদা মােট চাহিদা এবং মােট যােগান অপেক্ষক দ্বারা নির্ধারিত হয়। কেইনস মােট চাহিদা অপেক্ষক বলতে বিভিন্ন নিরাপত্তার এবং মােট চাহিদা মূল্যের মধ্যে সম্পর্ক দেখান। কোনাে নির্দিষ্ট নিয়ােগ স্তরে পণ্যের প্রত্যাশিত বিক্রয় আয়কে চাহিদা মূল্য বলা যায়। এজন্য বিভিন্ন নিয়ােগ স্তরে বিভিন্ন চাহিদা মূল্য পাওয়া যায়। একে মােট চাহিদা অপেক্ষক বলা যায় কেইনস এভাবে মােট চাহিদা অপেক্ষকের ব্যাখ্যা দেন।

**র্থনৈতিক চিন্তাধারার বিকাশে কেইনসের অবদান বর্ণনা কর।

কেইনস তাঁর লিখিত গ্রন্থের মাধ্যমে ক্লাসিকা্যাল অর্থনীতিবিদদের চিন্তাধারার মুলে কঠোর আঘাত হানেন। তাছাড়া নতুন নতুন অসংখ্য তত্ত্বের বিকাশ সাধন করেন। কেইনসের লিখিত গ্রন্থটি প্রকাশিত হবার পর সমসাময়িক অনেক অর্থনীতিবিদ কেইনসের চিন্তাধারার উপর ভিত্তি করে নতুন নতুন গবেষণা পরিচালনা করেন। ফলে অর্থনৈতিক চিন্তাজগতে কেইনসের প্রভাব প্রতিপত্তি বদ্ধি পায়। এটাই পরবর্তীকালে কেইনসীয় অর্থনীতি নামে পরিচিত। কেইনসীয় চিন্তাধারার ওপর ভিত্তি করে, ক্লাসিক্যালদের বিপরীত যে পরিবর্তন সুচিত হয় তাই কেইনসীয় বিপ্লব নামে পরিচিত।

০ অর্থনীতির ইতিহাসে কেইনসের অবদান : আধুনিককালে সামষটিক অর্থনীতির বিষয়বস্তু মূলত লর্ড কেইনসের চিন্তাধারাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। নিয়ে সামষ্টিক অর্থনীতিতে কেইনসের অবদান সম্পর্কে আলােচনা করা হলাে।

১. সরকারি হস্তক্ষেপের প্রয়ােজনীয়তা : কেইনস অর্থনীতির মন্দা অবস্থাকে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখেন যে, অর্থনীতি যেহেতু আপন নিয়মে পূর্ণ নিয়াগে পৌছে না সেহেতু অর্থনীতিতে সরকারি হস্তক্ষেপের প্রয়ােজন রয়েছে। অথচ ক্লাসিক্যাল অর্থনীতিবিদরা মনে করতেন যে, অর্থনীতিতে যদি ব্যক্তিস্বান্ত্রযবাদ বিরাজ করে তবে অর্থনীতি আপন নিয়মে পূর্ণ নিয়ােগে পৌছাবে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যাপী মহামন্দা দেখা দিলে তা ভুল প্রমাণ হয়।

২. মুদ্রামায়া সম্পর্কে ধারণা : ক্লাসিক্াযাল অর্থনীতিতে মুদ্রামায়া সম্পর্কে কোনাে ধারণা পাওয়া যায় না। কিন্তু কেইনসীয় অর্থনীতিতে মুদ্রামায়া সম্পর্কেক ধারণা পাওয়া যায়। কেইনস মনে করতেন, অর্থনীতিতে মজুরির পরিমাণ বৃদ্ধি সাথে সাথে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়। যে হারে মজুরি বৃদ্ধি পান সমহারে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিলে প্রকৃত মজুরি অপরিবর্তিত থাকে। কিন্তু তবুও শ্রমিক শ্রেণি মজুরি বৃদ্ধি করতে চায়। কখনও হাস করতে চায় না। এর কারণ এই যে, শ্রমিক শ্রেণির মজুরি বৃদ্ধি করা যায়, কখনও হ্রাস করা যায় না। অর্থাৎ শ্রমিকেরা মুদ্রামায়ার ভােগে। কেইনস -এর এ ধারণা বাস্ত বসম্মত।

, ঘাটতি বাজেট গ্রহণ : ক্লাসিক্যাল অর্থনীতিবিদরা সবসময় উদ্ভৃত্ত বাজেটকে সমর্থন করতেন। কিন্তু যখন বিশ্বব্যাপী মহামন্দা দেখা দেয় তখন ক্লাসিক্যাল তত্ত্বের কার্যকারিতা হাস পায়। এ অবস্থায় কেইনসীয় তত্ত্বে বলা হয় যে, মহামন্দার সময় অর্থনীতিতে ঘাটতি বাজেট বিশেষ কার্যকর। কারণ ঘাটতি বাজেটের ভিতর দিয়ে সরকারি ব্যয়ের পরিমাণকে বৃদ্ধি করা হলে অর্থনীতিতে গতিশীলতার সঞ্চার হয়।

, আয় ও নিয়ােগ তত্ত্বের সাথে মুদ্রাতত্ত্বর সংমিশ্রণ : ক্লাসিক্যাল চিন্তাবিদরা মনে করতেন যে, আয় ও নিয়ােগ তত্বে সাথে মুদ্রাতত্ত্বের আলাদা বিশ্লেষণ করা প্রয়ােজন। কারণ দুটি তত্ত্বের বিশ্লেষণ ও কার্যাবলি ভিন্নকিন্তু কেইনস মনে করতেন, মুদ্রাতত্ত্ব হলাে আয় ও নিয়ােগ তত্ত্বের অভভুক্ত। এ দুই ত্ত্বকে একই সাথে আলােচনা করা প্রয়ােজন।

৫. নিয়ােগ তত্ত্বের পৃথক বিশ্লেষণ : ক্লাসিক্যাল অর্থনীতিবিদরা নিয়ােগ তত্ত্বকে পৃথকভাবে বিশ্লেষণ করেননি। কিন্তু কেইনস নিয়ােগ বিষয়ক আলাদা তত্ত্ব প্রদান করে অর্থনৈতিক চিন্তাধারার পরিধিকে ব্যাপক করেন।

Share:

No comments:

Post a Comment

slidebar

Total Pageviews

Abdullah Mondal

Powered by Blogger.

Blog Archive

Recent Posts

বাস্তবতা

জীবনের বাস্তবতা বড়ই নিষ্ঠুর। এটাই জীবন। জীবনের বাস্তবতার বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, যতই নিষ্ঠুর হউক বা যতই কষ্ট হউক তা সয়ে নিতে হয়, মেনে নিতে হয় জীবনের প্রয়োজনেই। জীবনে কষ্ট আসলে মানসিক ভাকে যতটুকু ভেঙ্গে পড়বে জীবন তার দ্বিগুন পিছিয়ে যাবে। জীবনের সকল দূঃখ কষ্ট ও বাস্তবতাকে জীবনের অংশ হিসাবে মেনে নিয়ে স্বাভাবিক ভাবে গ্রহন করার নামই হচ্ছে সুখ।

Pages