***
ভূমিবাদরে উদ্ভবেরে কারণসমূহ :
ভূমিবাদী মতবাদ উদ্ভবের কারণসমূহ আলােচনা করা হলো:
১. রাজাদের বিলাসিতা ও অতিব্যয় :
অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে ফ্রান্সের অবস্থা অত্যন্ত শােচনীয় হয়ে পড়ে।এ অবস্থায়
জনসাধারণের উপর
করভার বৃদ্ধি করা হয়। এ করভার বহন করতে গিয়ে কৃষকদের অবস্থা শােচনীয় হয়ে।
পড়ে। এ অবস্থায় বাণিজ্যবাদ ভেঙে পড়ে। ফলে নতুন মতবাদের তত্ত্ব আসন্ন হয়ে পড়ে। এর
পরিপ্রেক্ষিতে ভূমিবাদ তত্ত্বের উদ্ভব হয়।
২. ফরাসি অর্থনীতির স্থবিরতা : বিভিন্ন
আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক-কারণে অর্থনীতিতে মূলধন গঠন, উৎপাদন ক্ষমতা ইত্যাদি স্থবির অবস্থায় উপনীত
হয়। এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার জন্য ফরাসি বুদ্ধিজীবীরা কৃষিকে কেন্দ্র করে অর্থনীতি পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে
মতামত প্রকাশ করেন,
যা
শেষ পর্যন্ত ভূমিবাদের জন্ম দেয়।
৩. সমাজের পরিবর্তন : অষ্টাদশ শতাব্দীর
মধ্যভাগে ফ্রান্সের কিছু চিন্তাবিদ ফ্রৌক্তিক আইন (Rational Iaws)-এর উপর গুরুত্ব দিয়ে মতবাদ প্রকাশ করে। খাদ্য
দ্বারা মানুষের মানবিকতা রক্ষা পায়। আর
খাদ্য আসে কৃষি থেকে। এ কারণে ভূমি ও কৃষিকে গুরুত্ব দিয়ে এক নতুন মতবাদ
গড়ে উঠে, যা পরবর্তীতে ভূমিবাদী চিন্তাধারা নামে
পরিচিতি লাভ করে।
৪. বাণিজ্যের উপর বিরূপ
প্রতিক্রিয়া: তৎকালীন সময়ে ফ্রান্সে
ব্যবসায়-বাণিজয শােচনীয় অবস্থায় উপনীত হয়। বিভিন্ন ধরনের কর আরােপের ফলে ব্যবসায়
বাণিজ্যসমূহ ক্ষতি হচ্ছিল। আবার দেশের এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে
দ্রব্য
চলাচলের উপর অতিরিক্ত কর আরাপ থাকায় অভ্যন্তরীণ ব্যবসায়-বাণিজ্যেরও গতি ব্যাহত
হয়। ফলে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ অবস্থায় দেশের
বুদ্ধিজীবীরা এগিয়ে এসে এর প্রতিবাদে লেখনী ধারণ করে। ফলে ভূমিবাদী চিন্তাধারার উদ্ভব ঘটে।
৫. কৃষি বিপ্লবের প্রভাব : বাণিজ্যবাদী
চিন্তাধারার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বিদেশ থেকে সােনা, রূপা আমদানি করে তা সংরক্ষণ করা। এর ফলে ইংল্যান্ডে জনগণের
অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। এ কারণে বাণিজ্যবাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে চিন্তাবিদরা সন্দিহান হয়ে পড়ে। এ
সময়ে ইংল্যান্ডে কৃষি বিপ্লব আরম্ভ হয়। ফলে ভূমিবাদী চিন্তাধারার উৎপত্তি ঘটে।
৬. ধর্মযাজকদের জমি : ফ্রান্সের নিয়ম অনুসারে, মােট জমির ৪০% ছিল ধর্মযাজকদের। তারা কখনাে জমিতে সরাসরি উৎপাদন কাজে নিয়ােজিত হতাে না। তাঁরা জমি বর্গা দিতাে। কিন্তু তাদের অত্যाচারে কৃষকেরা জমি চাষের প্রতি তেমন মনােযােগী ছিল না। এভাবে তৎকালীন সময়ে ফ্রান্সে কৃষি উৎপাদনে নিয়ােজিত থাকা সন্তব ছিল না। অবস্থায় কৃষি সম্পর্কিত নতুন নীতি নির্ধারণের প্রয়ােজন তীব্র হয়ে দেখা দেয়,
যা ভূমিবাদী চিন্তাধারা উড়ভবের পক্ষে কাজ করে।**অথবা, মধ্যযুগীয় অর্থনৈতিক চিন্তাধারার
বৈশিষ্ট্যসমূহ বর্ণনা কর।
মধ্যযুগীয় অর্থনৈতিক চিন্তাধারার
বৈশিষ্ট্যসমূহ নিযমনে মধ্যযুগের অর্থনৈতিক চিন্তাধারার বৈশিষ্ট্যগুলাে
আলােচনা করা হলাে :
১. দাস প্রথা ও অর্থনৈতিক বিধান :
মধ্যযুগে প্রতিটি শ্রেণি অনুসারে এক একটি পেশা বাছাই করা ছিল। তখনকার সময়ে রােম
সাম্রাজ্যে একটি আইন প্রচলিত ছিল। আইনটি ছিল এই যে, যেসব দাস খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত হত
তাদের মুক্ত করে দেয়া হতাে। এতদসত্বেও দাসরা বিভিন্ন প্রকার
অর্থনৈতিক কাজকর্মে নিয়ােজিত ছিল।
২. শ্রমের মর্যাদা ছিল অবহেলিত : মধ্যযুগীয় পরিবেশে খ্রিস্টান ধর্মের
প্রভাবেও শ্রমের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। অবশ্য মধ্যযুগে তখনকার সময়ে খ্রিস্টান ধর্মযাজকগণ নিজেরাই নানা
প্রকার পেশা অবলম্বন করতে পারতেন। এর ফলে ধর্মযাজকদের অবস্থার যেমন পরিবর্তন হয়, তেমনি শিল্পের কিছুটা উন্নতি সাধন হয়।
৩. ব্যবসা-বাণিজ্যের মতাে অর্থনৈতিক
কাজগুলি অবহেলিত : শুধু ব্যবসা-বাণিজ্য নয়, কৃষিকাজসহ অন্যান্য কাজগুলি তখনকার যুগে অবহেলার চোখে দেখা হতাে। এ
সকল কারণে মধ্যযুগে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। এসব প্রেক্ষাপটের
কারণে মধ্যযুগীর সমাজে প্রায় এক হাজার বছর অর্থনৈতিক উন্নয়নের দ্বারা রহিত ছিল।
৪. অর্থনীতি ও জাতীয়তাবাদের উপর
প্রভাব :বিশেষ করে মুসলমানদের ইউরােপ বিজয়ের সময়, মুসলমানদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তােলার জন্য খ্রিসটানরা তাদের
মধ্যে জাতীয়তাবাদী ভাব ধারা গড়ে তোলে। তারা ইউরােপের
সমস্ত খ্রিস্টান রাজা ও সামন্তদের আহবান জানায় একই মঞ্চে মিলিত হবার জন্য। যার ফলে খ্রিস্টানদের মধ্যে
জাতীয়তাবাদী চেতনা গড়ে উঠে। এ জাতীয়তাবাদী চেতনা থেকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রয়াস চালানাে হয়।
৫. অর্থনৈতিক চিন্তাধারায় এরিস্টটল ও
ধর্মযাজকদের প্রভাব : মধ্যযুগে অর্থনৈতিক অবস্থা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বিভিন্ন অর্থনীতিবিদগণের অর্থনৈতিক
চিন্তাধারা পরিলক্ষিত হয়। তাঁরা এমন এক ধরনের মিশ্র মতবাদ প্রকাশ করেন, যে মতবাদে গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল ও
বাইবেলের মতবাদ স্থান পায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এরিস্টটলের মতবাদের সাথে ধর্মযাজকদের মতবাদের ভিন্নতা
পরিলক্ষিত হয়। যেমন- বিজ্ঞানী এরিস্টটল দাসকে সম্পদের অংশ হিসেবে মনে করতেন।
কিন্তু মধ্যযুগের খ্রিস্টান মতবাদে একে বিরােধিতা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
**সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার মূল
বৈশিষ্ট্যসমূহ : সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা হলাে এমন এক ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে দেশের যাবতীয় সম্পদ এবং
উৎপাদনের উপকরণসমূহ সামাজিক তথা রাষ্ট্রীয় মালিকানায় থাকে।
১ সম্পদের রাষ্ট্রীয় মালিকানা :
সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় জমি, কলকারখানা, খনি
ও অন্যান্য সম্পদের ওপর রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক মালিকানা বজায় রাখে।সরকার
রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানে এবং দেশের জনপণের সার্বিক কল্যাণের উদ্দেশ্যে
দেশের সব ধরনের সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
জনগণ রাষ্ট্রীয় নির্দেশে সরকারি সম্পদ বৃদ্ধিতে নিজস্ব শ্রম নিয়ােগ করে।
২. জাতীয় আয়ের সুসম ব্টন :জাতীয়
সম্পদ বন্টনে যে নীতি গ্রহণ করা হয় তা হলাে, শ্রমিক তার সামর্থ্য ও যােগ্যতা অনুযায়ী কাজ করবে এবং তার কাজ অনুযায়ী সে পারিশ্রমিক গ্রহণ
করবে। এরূপ বণ্টন ব্যবস্থার ফলে সমাজে
ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়।
৩. কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা : দেশে কোন দ্রব্য কী পরিমাণে এবং কী
পদ্ধতিতে উৎপাদিত হবে এ সকল বিষয়সমূহ পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে। এ ধরনের অর্থব্যবস্থায়
সব ধরনের অর্থনৈতিক কার্যকলাপ কেন্দ্রীয় পরিকল্পনার মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
8. কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা : সমাজতন্ত্রে
যেহেতু উৎপাদন কার্য কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা অনুসারে হয়ে থাকে এবং নাগরিকের সকল প্রকার নিরাপত্তার দায়িত্ব
রাষ্ট্র বহন করে সেহেতু কোনো নাগরিকের কর্মসংস্থানের অভাব হয় না।
৫.শোষণহীন সমাজ : সব ধরনের উৎপাদন কার্যক্রম সরকার কর্তৃক পরিচালিত হয়
বলে এ ধরনের অর্থব্যবস্থায় কোনাে ব্যক্তি সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলতে পারে না। সব সম্পদের মালিক হিসেবে সরকার জনগণের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত
করতে সর্বদা আগ্রহী থাকে। ফলে সমাজতান্ত্রিক সমাজ শােষণহীন সমাজে পরিণত হয়।
৬. শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষা :
সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় সরকার শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণে বদ্ধপরিকর।
শ্রমিকদের সুস্থ ও স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ জীবন, নিয়ন্ত্রিত মজুরি, সম্যাজিক নিরাপত্তা প্রভৃতির প্রতি সরকার সতর্ক দৃষ্টি রাখে।
৭. ভােক্তার চাহিদার ওপর নিয়ন্ত্রণ :
কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা
কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা অনুযায়ী দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদিত হয় এবং বাজারে বিক্রির
জন্য ছাড়া হয়। সমাজতন্ত্রে ভোক্তার স্বাধীনতা সীমিত থাকে।
৮, মুনাফার অনুপস্থিতি : সমাজতন্ত্রে
ব্যক্তি মালিকানা স্বীকৃত নয় বলে ব্যক্তিগত মুনাফা অর্জনের কোনাে সুযােগ থাকে না। এক্ষেত্রে সামাজিক কল্যাণসাধনই
রাষ্ট্রের মূল উদ্দেশ্য।
উপর্যুক্ত
আলােচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সমাজতন্ত্রে ব্যক্তিগত মুনাফার কোনাে সুযােগ থাকে না। সার্বিক
সামাজিক
চাহিদার
দিক লক্ষ্য রেখে উৎপাদন, বণ্টন
ও ভােগ ব্যবদ্থা নিয়ন্ত্রিত হয়। এই ধরনের অর্থব্যবস্খাকে পরিকল্পিত অর্থব্যবস্থা বলা হয়ে থাকে। কার্ল
মার্কস এবং এনজেলস সমাজতন্ত্রের প্রধান প্রবক্তা
।








No comments:
Post a Comment