***গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামাের উপাদান বা উৎসসমূহ আলােচনা করা হলো:
১.অর্থনৈতিক সচ্ছলতা :কার্ল মার্কস এর মতে,
সমাজে প্রভাব সৃষ্টি করতে হলে অবশ্যই ব্যক্তিকে অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল
হতে হবে।" গ্রামে বাস্তবিকপক্ষে দেখা যায়, যার
অর্থসম্পদ বেশি তার ক্ষমতাও বেশি। গ্রামীণ মানুষ তাদের মান্য করে চলে।
২. ভূমিমালিকানা : জমি যার শক্তি তার এটাই হলাে গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামাের
মূলসূত্র। যার যত বেশি ভূমি আছে, সে তত
বেশিদিন মজুরকে নিয়ন্ত্রণ করে। এ কারণেই ড. জিহাদুল করিম এক জরিপে দেখিয়েছেন যে,
"গ্রামীণ সমাজে যাদের জমি ২.৫ থেকে ৭.৫ একর পর্যন্ত তাদের
মধ্যে ৫৮% লােক ক্ষমতা কাঠামাের সাথে জড়িত।
৩. চাকরি : চাকরিজীবীদেরকে গ্রামীণ লোকজন মান্য করে। তারা মনে
করে তাদের সাথে শহরের যোগাযোগ তাই তারা ক্ষমতাশালী। আর এ কারণে গ্রামীণ মানুষ
বিভিন্ন তথ্য ও খবরাখবর নিতে তাদের কাছে আসে। বিদ্যমান, এক্ষেত্রে
চাকরিজীবীরা মিডিয়া ম্যান হিসেবে কাজ
করে।
8. শিক্ষা : শিক্ষিত শ্রেণি, গ্রামীণ অজ্ঞ ও
নিরক্ষর মানুষকে বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানদান করে এবং গ্রামীণ মানুষও বিভিন্ন বিষয়ে
তাদের দ্বারস্থ হয়।
৫. বংশ :
গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামাের একটি নামিদামি বংশের নেতার অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।
নামিদামি বৃহৎ বংশের নেতৃত্ব অর্থ হচ্ছে ব্যাপক আকারে জনসমষ্টির উপর নিয়ন্ত্রণ। এটি অনেকগুলাে
গােষ্ঠীর সাথে সংযােগ স্থাপনে বেশ ভূমিকা বাখে।
৬. নিজস্ব
গুণাবলি : যদি কেউ ব্যক্তিগত গুণাবলির জন্য গ্রামে সুপরিচিত হয়, তাহলে গ্রামের লােকজন তাকে শ্রদ্ধা করেও মেনে চলে। নিজস্ব গুণাবলির সাহায্যেই মানুষ ক্ষমতার অধিকারী হয়ে
থাকে।
৭. রাষ্ট্রের
সাথে যোগসূত্র : রাষ্ট্র গ্রামীণ জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। দমনমূলক প্রতিষ্ঠান, পুলিশ বাহিনী রাষ্টর নিয়ন্ত্রণ করে
থাকে।
৮. সমাজ
নেতৃত্ব : সমাজ হলাে একটি সনাতন গ্রামীণ প্রতিষ্ঠান, যার নেতৃত্ব
দিয়ে থাকেন গ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যারা বিশাল ভূমির মালিক। অনেকটা উত্তরাধিকারসূত্রেই
তারা এ নেতৃত্বটা ভােগ
করে থাকেন।
৯. ধর্ম :
ধর্মীয় জ্ঞানার্জন করার মাধ্যমে মৌলবি, মােল্লা, পুরােহিত ব্রাহ্মণ হলে ধর্ম অনেক সময় গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামাের উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়। এখানে মৌলবি, মােল্লা, পুরােহিতরা
অদৃশ্য ক্ষমতা ব্যবহার করে থাকে।
১০. জ্ঞাতি
সম্পর্ক : বংশের মত জ্ঞাতি গােষ্ঠীর সম্পর্কও গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামাের
গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এর ডিত্তি হলাে বৈবাহিক
সংযােগ। বিভিন্ন জ্ঞাতি গােষ্ঠীর সমর্থন ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের সময়
গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। যাদের আত্মীয়স্বজন
চেয়ারম্যান বা অন্য কানাে ক্ষমতায় থাকে তারাও সে বলে ক্ষমতা ব্যবহার করে থাকে।
***স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকার
ব্যবস্থায় পরিকল্পনার প্রয়ােজনীয়তা : সামাজিক, রাজনৈতিক
বাস্তবতার নিরিখে প্রতিটি স্বতন্ত্র
বৈশিষ্ট্যপূর্ণ অঞ্চলগুলোর বিশেষ ধরনের প্রয়ােজনের প্রকৃতির উপর গুরুত্ব দিয়ে অঞ্চলভিত্তিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করে, কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বয়ের মাধ্যমে যে
পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয় তাকে বলা হয় আঞ্চলিক পরিকল্পনা বা স্থানীয় পর্যায় পরিকল্পনা। স্থানীয়
পর্যায়ের পরিকল্পনা হচ্ছে সামগ্রিক পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশবিশেষ। এছাড়া কোনাে ভৌগোলিক এককের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের উপায়
হিসেবে নতুন একটি ধারণা হচ্ছে স্থানীয় সরকার, যদিও এ বিষয়টি জনগণের অংশগ্রহণ ও
সম্পদের ব্যবহারের সাথে একান্তভাবে জড়িত। তথাপি এরূপ পরিকল্পনার কতকগুলাে স্বতন্ত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
রয়েছে।








No comments:
Post a Comment