ইবনে খালদুনের ইসলামিক চিন্তাধারা

 

**ইসলামি অর্থনৈতিক চিন্তাধারায় উন্নয়ন বলতে কি বুঝ : মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষকে তার প্রতিনিধি হিসেবে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। যাতে তারা দুনিয়ায় একটি নির্দিষ্ট জীবনকাল অতিবাহিত করে দুনিয়ার কল্যাণ অর্জন এবং আখিরাতের মুক্তির পাথেয় সংগ্রহ করে আবার তার কাছে ফিরে আসতে পারে সেজন্য তিনি যুগে যুগে অসংখ্য নবী ও রাসূল পাঠিয়েছেন। সেই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ নবী ও রাসুল হিসেবে ইসলামের বাণী নিয়ে আগমন করেন হযরত মুহাম্মদ (সা.)। সেই থেকেই শুরু ইসলামি অর্থনৈতিক চিন্তাধারার উন্নয়ন। তার মাধ্যমে মহাজ্ঞানী আল্লাহ তায়ালা মানুষের জীবনে উদ্ভূত সকল সমস্যার যথাযথ সমাধান পবিত্র কুরআনে বাতলে দিয়েছেন। সে হিসেবে মানুষের সকল অর্থনৈতিক যথা, উৎপাদন, ভােগ, মূল্য, উপাদান ব্যবহার, বাজার পদ্ধতি, চাহিদা, যােগান, সরকারি আয় ও ব্যয়, মজুদদারী, একচেটিয়া কারবারী ইত্যাদি সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান পবিত্র কুরআন ও হাদিসে প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষভাবে দেওয়া আছে। এখন প্রত্যক্ষ বিষয়গুলি অনেকেই বুঝতে পারে এবং সে মতে চলতে পারে কিন্তু পরােক্ষভাবে দেওয়া সমাধানগুলি সকলে বুঝতে ও বাস্তবায়ন করতে পারে নাএর ফলেই প্রয়ােজন হয় ইসলামি অর্থনৈতিক চিন্তাধারার উন্নয়নের।


**ইবনে খালদুনের ইসলামিক চিন্তাধারা

১. ইবনে খালদুন বহু বিষয়ে গ্রন্থ রচনা করেন। এর মধ্যে ইতিহাস প্রধান হলাে তিনি রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ে অনেক বেশি গ্রন্থ ও আলােচনা প্রকাশ কারেন। তিনি সমাজবিজ্ঞান সম্পর্কে তার বিশদ চিন্তাধারা লিপিবদ্ধ করে যান।

২. তার গ্রন্থের পঞ্চম অধ্যায়ে তিনি জীবন ধারনের উপায় এবং কিভাবে ইহা ধারণ করা যায়, কিভাবে ধনার্জন করা যায় এ নিয়ে তিনি তার আলােচনা ব্যক্ত করেন। তিনি, ব্যবসা-বাণিজ্য চাহিদা ও সরবরাহ, মূল্য এবং এদের অবস্থা সাধারণভাবে আলােকপাত করেন।

৩. ইবনে খালদুন অর্থনীতির যে বিষয়গুলাে সম্বন্ধে আলােচনা করেছেন তা সমাজের প্রত্যেক লােকের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ, যেমন : অন্ন, বস্ত্ৰ ও অত্যাবশকীয় ভােজ্য দ্রব্য ইত্যাদি। তার বক্তব্যে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনীতির বিভিন্ন দিক যেমন কৃষি, বয়ন, ধাত্রীবিদ্যা ইত্যাদি প্রধান্য পায়। তিনি রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি সম্পর্কে তেমন কোনাে আলােচনা বা তার মতামত ব্যক্ত করেননি।

৪. ইবনে খালদুন সমাজবিজ্ঞানের কথা বলতে গিয়ে তিনি রাজনীতি ও অর্থনীতি সম্পর্কে কথা বলেন। তার এ ধারণাকে একেবারে অবৈজ্ঞানিক বলা যায় না। এখন পর্যন্ত তার ধারনা বিজ্ঞানের বিষয়বস্তু।

, সমাজ, অর্থনীতি, দর্শন, রাজনৈতিক অর্থনীতি প্রভৃতি বিষয়ে তিনি বাস্তব আলােচনা তার লেখুনিতে পাওয়া যায়। তার আলােচনার প্রসারিত অবস্থা বর্তমানে প্রতিফলিত হচ্ছে।

৬. খালদুন অর্থনীতির বিষয়বস্তু এবং বয়স সম্পর্কে এবং প্রখ্যাত কয়েকজন অর্থনীতিবিদ এর মতামত নিয়ে আলােচনা করেন। অর্থুনীতির বয়স যদি একশত বা দুইশত বছর হয়, তবে একথা সত্য যে তিনি অর্থনীতি সম্পর্কে যে মতামত এবং ধারনা ব্যক্ত করেছেন সেগুলাে পর্যালােচনা করলেই অর্থনীতি সম্পর্কে তার মতাদর্শ খুঁজে পাওয়া যাবে।

৭. খালদুনের অর্থনৈতিক আলােচনার বিষয়বস্তু হলাে জীবনধারণ, ধনসম্পদ অর্জন, বাণিজ্য ও সরবরাহ, চাহিদা একচেটিয়া ব্যাবসা দ্রব্যমূল্য, ব্যবসা ও এর শাখা প্রশাখা এবং ঔষধপত্র ইত্যাদি বিষয় ছিল তার অর্থনৈতিক চিন্তধারার ভাবধারা।

, খাদ্য, বস্ত্র ও আবাস মানুষের সর্বাপেক্ষা জরুরি চাহিদা এবং ইবনে খালদুন এ তিনটি অত্যবশ্যকীয় প্রব্যের বিষয় আলােচনা করেন। একজন অর্থনীতিবিদ বলেছেন, গােটা অর্থনৈতিক শান্ত্রকে দুটি শব্দ দ্বারা প্রকাশ করা যায়, চাহিদা, সরবরাহ। ইবনে খালদুন এ দুটি প্রায়ই বিশদভাবে আলােচনা করেছেন।

, আবার কৃষির সঙ্গে বাসস্থান, দালানকোটা ও বয়নের কথা উল্লিখিত হওয়ায় এটাই প্রমাণিত হয় যে, খালদুন মানুষের সামাজিক জীবনে সর্বাপেক্ষা দরকারী তিনটি দ্রব্য-খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের কথাই বলেছেন। আবার ধাত্রীবিদ্যাও ওৗষধপত্রের কথা আলােচনা করতে খালদুন আরও দুটি অত্যাবশ্যকীয় বিষয় অর্থনীতির আওতায় ফেলেছেন। অব্য বর্তমানে অর্থনীতিশান্ত্রের বিষয় বস্তু অনেক ব্যাপক।

**ইসলামি অর্থনীতির প্রয়ােজনীয়তা লেখ।

মানুষ সামাজিক জীব। মানুষ পরস্পর মিলেমিশে থাকতে গেলে জীবিকার তাগিদে যে লেনদেন করে তাতে অর্থব্যবস্থার প্রতিফলন হয়। এই ব্যবস্থাপনা যাবতীয় অন্যায় ও জুলুম মুক্ত রাখতে এর ইসলামিকীকরণ অত্যন্ত জরুরি।

০ অর্থনীতিতে ইসলামের গুরুত্ব : নিম্নে অর্থনীতিতে ইসলামের গুরুত্ব ও প্রয়ােজনীয়তা আলােচনা করা হলাে :

১. অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা : সামাজিক শান্তিশৃঙ্খলা নির্মাণে অর্থনৈতিক ভারসাম্যের গুরুত্ব অত্যধিক। অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে না পারলে সমাজে দেখা দিবে ধনীগরিব বিভেদ। এখানে কেউ অঢেল ধনসম্পদের মালিক হবে, আবার কেউ নিঃস্ব হবে এমনটি হওয়ার নয়। কেননা ধনীদের সম্পদে গরিবদের অংশ রাখা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, "এবং তাদের (বিজত্তবানদের) অর্থ সম্পদে অধিকার রয়েছে সাহায্য প্রার্থী ও বঞ্জিতদের।

২. সুষ্ঠ বন্টনব্যবস্খা প্রবর্তন : ইসলাম জাকাত, ফিতরা, বায়তুলমাল ইত্যাদির ব্যবস্থা করেছে। কুরআন মাজিদে এ সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, "সমাজে ধনসম্পদ তােমাদের বিত্তশালীদের মধ্যে যেন কুক্ষিগত হতে না পারে।" (সুরা হাশর : ৭]

.অবধ ব্যবসায় বাণিজ্য নিষেধ:শোষণমুক্ত সমাজ পতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইসলাম ঘুষ, মজুতদারি, মুনাফাখোরি, কালােবাজারিসহ অন্যান্য নৈতিকতাবিরােধী ব্যবসায় বাণিজ্যকে হাবাম তথা নিষিদ্ধ, ঘােষণা করেছেরাসুল (সা.) বলেছেন, "সর্বোত্তম উপার্জন বৈধ পদ্থায় অর্জন।

৪. ভ্রাতৃত্ব সম্পর্ক গড়া : ইসলামি অর্থনীতি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে একে অপরের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সৃষ্টি হতে বাধ্য। এ প্রসঙ্গে মহানবি (সা.) বলেছেন, "এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। ইসলামি অর্থনীতি মুসলিমদের মধ্যে বিশ্বভাতৃত্বের সৃষ্টি করে।

৫. আদর্শ সমাজ গঠন : আদর্শ সমাজ গঠনে ইসলামি অর্থব্যবস্থার প্রয়ােজনীয়তা অনস্বীকার্য। কেননা ইসলামি অর্থব্যবস্থা সামাজিক জীবনে অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করে। ফলত একটি আদর্শ সমাজ গড়ে ওঠে।

৬. আখিরাতে কল্যাণ লাভ : আখিরাতে সফলতার অন্যতম মাধ্যম হলাে অর্থসম্পদ মহান আল্লাহর পথে খরচ করা। আর এর সর্বোত্তম পন্থা হলাে ইসলামি অর্থব্যবস্থা। আল্লাহ তা'আলা বলেন, "আল্লাহ তােমাদেরকে যা কিছু দিয়েছেন তা দিয়ে। আখিরাত তালাশ কর।"

পরিশেষে বলা যায় যে, সমাজের মানুষের ইহ ও পরকালীন মুক্তির জন্য ইসলামি অর্থব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। অতএব আমাদের উচিত ইসলামি অর্থনীতি অধ্যয়ন করা।


 

Share:

No comments:

Post a Comment

slidebar

Total Pageviews

Abdullah Mondal

Powered by Blogger.

Blog Archive

Recent Posts

বাস্তবতা

জীবনের বাস্তবতা বড়ই নিষ্ঠুর। এটাই জীবন। জীবনের বাস্তবতার বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, যতই নিষ্ঠুর হউক বা যতই কষ্ট হউক তা সয়ে নিতে হয়, মেনে নিতে হয় জীবনের প্রয়োজনেই। জীবনে কষ্ট আসলে মানসিক ভাকে যতটুকু ভেঙ্গে পড়বে জীবন তার দ্বিগুন পিছিয়ে যাবে। জীবনের সকল দূঃখ কষ্ট ও বাস্তবতাকে জীবনের অংশ হিসাবে মেনে নিয়ে স্বাভাবিক ভাবে গ্রহন করার নামই হচ্ছে সুখ।

Pages