**আন্তর্জাতিক স্থানান্তর :
একদেশ থেকে অন্যদেশে গমনাগমনের মাধ্যমে অধিবাস পরিবর্তনের প্রক্রিয়াকে আ্তর্জাতিক
স্থানান্তর বলে। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক স্থানান্তর বলতে আমরা স্থানান্তরের সে
প্রক্রিয়াকে বুঝে থাকি, যে প্রক্রিয়ায় এক বযক্তি তার
স্বাধীন দেশের ভূখণ্ড বা সীমানা ত্যাগ করে অন্য একটি স্বাধীন দেশের ভূখণ্ডে
বসবাসের উদ্দেশ্যে স্থানান্তরিত হয়।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী, জনবিজ্ঞানী ও তাত্ত্বিক আন্তর্জাতিক স্থানান্তরের সংজ্ঞা প্রদান
করেছেন।
Hans Raj তাঁর 'Fundamentals of Demoxraphy, গ্রন্থে
বলেছেন, "যখন কোন একটি দেশের মানুষ অপর একটি দেশে
গমন করে এবং এভাবে কোন একটি স্বাধীন দেশে স্থানান্তর করাকে আন্তর্জাতিক বা
বহিঃস্থানান্তর বলে।
***বাংলাদেশে গ্রাম থেকে শহরে
স্থানান্তরের কারণ : বাংলাদেশে স্থানান্তরের যেসব ধরন বা প্রকারভেদ রয়েছে তার
মধ্যে গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তর অন্যতম। নিম়ে সংক্ষেপে বাংলাদেশের গ্রাম থেকে
শহরে স্থানাস্তরের কারণসমূহ উল্লেখ করা হলাে :
১. অর্থনৈতিক কারণ : অর্থনৈতিক সুযােগ সুবিধা, চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা প্রভৃতি গ্রামের তুলনায় আপেক্ষিকভাবে বেশি।
বস্তুত যেসব অর্থনৈতিক উপাদানে বা অর্থনৈতিক সম্পর্কিত বিষয়ের কারণে এদেশে গ্রাম
থেকে শহরে স্থানান্তরিত হয় সেসব অর্থনৈতিক
সম্পৃক্ত উপাদানসমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হলো :
ক. বেকারত্ব : বেকারত্বই বাংলাদেশের গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তরের
অন্যতম প্রধান কারণ। গ্রামীণ এলাকায় কর্মক্ষম মানুষের তুলনায় যথাযথ
কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকায় মানুষ শহরের দিকে কর্মসংস্থানের আশায়
স্থানান্তরিত হয়।
খ. কৃষিক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার : বাংলাদেশের গ্রামীণ
এলাকায় আয়ের এবং কর্মসংস্থানের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হচ্ছে কৃষি। এ কৃষিক্ষেত্রে
গ্রামীণ মানুষ তাদের শ্রম প্রদানের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু এ কৃষি
ব্যবস্থায় উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে গ্রামীণ মানুষের শ্রমের
প্রয়ােজনীয়তা কমে যায়। এমতাবস্থায় এ সকল কৃষি শ্রমিকরা শ্রমের
উদ্দেশ্যে শহর এলাকার দিকে স্থানান্তরিত হয়।
২. ডূমিহীনতা : বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকায় জনসংখ্যা যতই বাড়ছে, ভূমি মানুষের সম্পর্কের অনুপাত ততই কমছে। ফলে গ্রামে ক্রমবর্ধমান হারে
ভূমিইীনদের সংখ্যা বাড়ছে। এ সকল ভূমিহীনরা কোন উপায়ান্তর না দেখে শহরের দিকে
ধাবিত হয়।
৩ নগরায়ণ ও শিল্পায়ন : নগরায়ণ ও শিল্পায়ন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ
স্থানান্তর, বিশেষ করে গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তরের ক্ষেত্রে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এদেশ নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ফলে শহর এলাকায় প্রচুর
কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। এমতাবস্থায় গ্রামীণ বেকার ও দরিদ্র জনগােষ্ঠী নতুন
কর্মসংস্থানের আশায় শহরে স্থানান্তরিত হয়।
৪. যােগাযােগ ও যাতায়াত ব্যবসহ্থা : বাংলাদেশে গ্রামীণ এলাকায়
রাস্তাঘাট তথা যােগাযােগ ও যাতায়াত ব্যবস্থা বেশ অনুন্নত। পক্ষান্তরে, শহর এলাকায় যােগাযােগ ব্যবস্থা বেশ উন্নত। ফলে শিক্ষা, চিকিৎসা, জীবনযাত্রা
প্রভৃতি নগরে অনেকটা সুবিধাজনক ও আরামদায়ক। এ কারণে মানুষ উন্নত সুবিধা লাভের
আশায় নগরমুখী হয়।
***জনবিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব ও প্রয়ােজনীয়তা : নিম্নে জনবিজ্ঞান পাঠের
গুরুত্ব ও প্রয়ােজনীয়তা তুলে ধরা হলাে : ১. অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রণয়নের
ক্ষেত্রে : জনসংখ্যা সম্পর্ক একমাত্র জনবিজ্ঞানই সার্বিক তথ্য প্রদানে সক্ষম।
পরিকল্পনাবিদগণ জনসংখ্যা কাঠামাে, বয়স, লিঙ্গ ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে চায়। এগুলাে না জানা থাকলে যে কোন পরিকল্পনাই
ভেস্তে যেতে পারে।
২. সম্পদের সুষম বণ্টনের ক্ষেত্রে :
তাই আঞ্চলিক উন্নয়নে ভারসাম্য আনয়নের জন্য সম্পদের সুষম বণ্টন প্রয়ােজন।
এক্ষেত্রেও জনসংখ্যা একটা বিরাট Factor. আর জনসংখ্যা
সম্পর্কে সার্বিক তথ্য প্রদান করে
জনবিজ্ঞান।
৩. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান
প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে : লােকসংখ্যা অনুপাতেই স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, পার্ক,
খেলার মাঠ ইত্যাদি গড়ে তুলতে হয়। আর এ সম্পর্কিত তথ্য প্রদান
করে জনবিজ্ঞান। সুতরাং এসব সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তােলার ক্ষেত্রে
বাংলাদেশে জনবিজ্ঞান পাঠের প্রয়ােজনীয়তা রয়েছে।
8. বেকার সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে : বাংলাদেশের
প্রায় ৩৩% লােক বেকার। বেকারদের এ হার, তাদের বয়স কাঠামাে,
তাদের শিক্ষাগত অবস্থা ইত্যাদি জনবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমেই জানা
যায়।
আর এসব অবস্থা জেনে তাদের কর্মসংস্থানের
সুব্যবস্থাকরণের ক্ষেত্রে জনবিজ্ঞানের জ্ঞান কাজে লাগে।
৫. উৎপাদনের ক্ষেত্রে : একটি দেশের সার্বিক
জনসংখ্যার জন্য কোন কোন পণ্য কি পরিমাণে উৎপাদন করতে হবে তা জনবিজ্ঞান পাঠের
মাধ্যমে জানা যায়।
৬. খাদ্যের উৎপাদন : বাংলাদেশে কত
মেট্রিক টন খাদ্যশস্য দরকার তা জনসংখ্যার পরিমাণ জানা ছাড়া হিসাব করা সম্ভব নয়।
আর জনসংখ্যার পরিমাণ জানা যায় জনবজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে। তাই জনসংখ্যার পরিমাণ জেনে
দেশে বছরে কি পরিমাণ খাদ্যশস্য উৎপাদন করতে হবে সেক্ষেত্রে জনবিজ্ঞান পাঠের
প্রয়ােজনীয়তা রয়েছে।
৭. খাদ্যের যােগান নিশ্চিতকরণে : কোন
দেশের জনসংখ্যা অনুপাতে খাদ্য শস্যের উৎপাদন কম হলে বিদেশ থেকে আমদানির প্রয়ােজন
পড়ে। কত মেট্রিক টন খাদ্যশস্য আমদানি করলে দেশে খাদ্যের যােগান নিশ্চিত হবে সে
সম্পর্কিত জ্ঞান লাভের জন্য জনবিজ্ঞান পাঠের প্রয়ােজনীয়তা রয়েছে।
৮. মানবীয় সম্পদের কাম্য ব্যবহারের
ক্ষেত্রে : বাংলাদেশে শিক্ষিত, অশিক্ষিত, দক্ষ, অদক্ষ,
বেকার, চাকরিজীবী প্রভৃতি ধরনের মানুষ
রয়েছে। এসব মানুষকে সম্পদে রূপাত্তর করতে হলে আগে জানা প্রয়ােজন কোন প্রকারের
লােক কি পরিমাণ রয়েছে। নতুবা এসব লােকের সদ্ব্যবহার সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত
নেয়া সম্ভব নয়। আর এক্ষেত্রে জনবিজ্ঞানের জ্ঞান
কাজে লাগে।
৯. প্রশাসনিক নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্র
: জনসংখ্যার আকার, শিক্ষাগত যােগ্যতা,
তাদের চাহিদা ও মনােবৃত্তি ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে প্রশাসনিক
নীতিপ্রণয়ন করতে হয়। জনবিজ্ঞান জনসংখ্যার আকার, শিক্ষাগত
যােগ্যতা, তাদের চাহিদা ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্য প্রদান
করে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলােচনা শেষে বলা
যায়, বাংলাদেশে জনসংখ্যা নীতি প্রণয়ন, আঞ্চলিক বৈষম্য দূরীকরণ, বেকার সমস্যা হ্রাস,
মানব সম্পদের উন্নয়ুন, খাদ্যের যােগান
নিশ্চিতকরণ প্রভৃতির জন্য জনবিজ্ঞান পাঠের প্রয়ােজনীয়তা রয়েছে। জনবিজ্ঞানের
তথ্যের উপর ভিত্তি করেই সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে এবং দেশের সুষম
উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে।








No comments:
Post a Comment