অর্থর্নীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডেভিড বিকার্ডোর অবদান আলােচনা করা হলো

 

**ক্লাসিক্যাল অর্থনৈতিক চিন্তাধারা : শ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে অর্থনৈতিক চিন্তাধারার পরিবর্তন আসতে থাকে এসময়ে অর্থাৎ ১৭৭৬সালে এডাম স্মিথের লিখিত বিখ্যাত গ্রন্থ  প্রকাশিত হয়। এ পুস্তকে দেওয়া অর্থনীতির সঙ্গে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ, অবাধ বাণিজ্য শ্রমবিভাগ ইত্যাদি বিষয়ে এডাম স্মিথের বক্তব্য জনপ্রিয়তা অর্জন করে।

এভাবে পরবর্তীতে ডেভিড রিকার্ডো, টমাস ম্যালথাস, জে. বি. সে'রসহ ইংল্যান্ড, জার্মানি ও ফ্রান্সের বিভিন্ন অর্থনীতিবিদগণ এডাম স্মিথের বক্তব্যের সমর্থনের পাশাপাশি সেগুলাের পরিবর্তন, সংশােধন ও পরিবর্ধনে প্রয়াসী হন

সুতরাং বলা যায়, অন্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে একদল চিন্তাবিদ অর্থনৈতিক চিন্তাধারাকে সুশৃঙ্খল খ করেন। আর এটিই ক্লাসিক্যাল অর্থনৈতিক চিন্তাধারা বিশগ্লেষণ ও উন্নয়নের জন্য ইউরােপের বিভিন্ন দেশে কতিপয় সংগঠন গড়ে ওঠে এগুলােকে অর্থনীতির ক্লাসিক্যাল স্কুল বলে। তৎকালীন সময়ে মূলত তিনটি ক্লাসিক্যাল স্কুল গড়ে উঠেছিল।

যথা : ক, ইংল্যান্ডভিত্তিক স্কুল, খ. ফ্রান্সভিত্তিক স্কুল এবং গ. জার্মানভিত্তিক স্কুল।

মােটকথা ক্লাসিক্যাল অর্থনৈতিক চিন্তাধারার মূল বস্তব্য হলাে ব্যক্তিম্বাতন্ত্যবাদ, পূর্ণপ্রতিযােগিতামূলক বাজার, সরকারি কার্যক্রমের সীমিত পরিধি এবং মুক্ত বাজার ব্যবস্থার মাধ্যমে সকল অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান সম্ভব।

 

**


র্থর্নীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডেভিড বিকার্ডোর অবদান আলােচনা করা হলো:

১. শ্রমভিত্তিক মূল্যতত্ত্ব : রিকার্ডো মনে করেন পুঁজি ও ভূ-সম্পত্তির সূচনার পরেও অর্থনৈতিক অবস্থা একই রকম থাকে। অর্থাৎ উৎপাদন খরচ বলতে একমাত্র শ্রমের পরিমাণই বােঝায়। তাঁর মতে, মজুরি, মুনাফা ও জমির খাজনা আপেক্ষিক দ্রব্যশিল্পের উৎপাদন মূল্য এবং আর বিনিময় মূল্য নির্ধারিত হয় কি পরিমাণ শ্রম খরচ হয় তার ভিত্তিতে। মজুরি, খাজনা ও পুঁজি কি পরিমাণ খরচ

হচ্ছে তা ধর্তব্য নয়। রিকার্ডোর এ ভাবধারার জন্যই তাকে শ্রমের মূল্য তত্ত্বের জনক বলে অভিহিত করা হয়।

২. রিকার্ডোর খাজনা তত্ত্ব ভূমির খাজনা কীরূপে নির্ধারিত হয় তা বর্ণনা করতে গিয়ে রিকার্ডো বলেন, ভূমির উৎপাদন ক্ষমতার ওপর ভূমির খাজনা নির্ভর করে। ভূমির উৎপাদনের ক্ষমতা আছে বলে একে ভূমির আদি ও অবিনশ্বর ক্ষমতা বলা হয়। অএব, ভূমির আদিম ও অবিনশ্বর ক্ষমতার জন্য ভূমির মালিককে যে পরিমাণ অর্থ প্রদান করতে হয় তাই খাজনা। পৃথিবীর সকল ভূমির উৎপাদন ক্ষমতা সমান নয়। এর ফলে খাজনার উৎপত্তি হয়।

, বন্টনতত্ত্ব । রিকার্ডোর মতে, রাজনৈতিক অর্থনীতির মূল সমস্যা হচ্ছে বন্টন। অর্থাৎ উৎপাদন খাজনা, মুনাফা এবং মজুরি আকারে বণ্টন হবে। তবে কি অনুপাতে বন্টন হবে তা মূলত সমাজের উন্নয়নের বিভিন্ন সুতরের উপর নির্ভর করবে যা মূলত জমির উর্বরতা, মলধন গঠন, জনসংখ্যা, শ্রমিকের দক্ষতা এবং কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রপাতির সংখ্যার উপর নির্ভর করে।

, মজুরি তত্ত্ব :  যদি ভরণপােষণের জন্য প্রয়ােজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পায় তবে শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ শ্রমিকের স্বাভাবিক মুল্য বাড়বে। বিপরীতভভাবে জীবন ধারণের জন্য প্রয়ােজনীয় প্রব্যাদির দাম হ্রাস পেলে শ্রমিকের মজুরি হ্রাস পাবে। ফলে শ্রমিকের স্বাভাবিক দরও হ্রাস পাবে।

৫. মূল্যত্ত্ব: রিকার্ডোর দ্রব্যের ব্যবহারিক মূল্য বা উপযােগ এবং বিনিময় দামের মধ্যকার পার্থক্য দেখান।তিনি বিশ্বাস করতেন, দ্রব্যের যােগান বৃদ্ধি পেলেই মূল্য আবশ্যিকভাবে কমবে না। যেমন দুষ্প্রা্য পুস্তক, মুদ্রা, ছবি ইত্যাদির মূল্য এদের উৎপােদনের ব্যয়িত শ্রমের উপর স্বাধীন বলা যায়।

৬. মুনাফা ও সুদত্ত্ব: রিকার্ডোর মতে, উৎপাদনের পরিমাণকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। এই দুই ভাগের মধ্যে একভাপায় পুঁজিপতি আর অপর ডাগ পায় শ্রমিকেরা। যেহেতু শ্রমিকদেরকে প্রয়ােজনীয় মজুরি প্রদান করতে হয় সেহেতু পুঁজিপতি কৃষকদের মুনাফা কমে। শ্রমিকদেরকে বেশি মজুরি দিলেও প্রকৃতপক্ষে শ্রমিকের কোনাে লাভ হয় না। কারণ শ্রমিককে অধিক দামে দ্রব্য ক্রয় করতে হয়। এ কারণে শ্রমিকদের প্রকৃত মজুরি পরিবর্তন হয় না।

৭. আন্তর্জাতিক বাণিজ্য : ডেভিড রিকার্ডো মুক্ত বাণিজ্যের পক্ষপাতি ছিলেন। ম্যালথাসের মতাে তিনি সংরক্ষণ নীতি সমর্থন করেননি। তাঁর মতে আপেক্ষিক ব্যয় সুবিধার কারণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য হতে পারে। কারণ একই দ্রব্য উৎপাদন করতে বিভিন্ন দেশের আপেক্ষিক ব্যয় সুবিধা ভিন্ন হতে বাধ্য। তাই শ্রম বিভাগের সম্প্রসারণ করে পণ্য উৎপাদনে বিশ্লেষণ করলে মুক্ত বাণিজ্য কল্যাণকর হতে পারে এভাবে তিনি তাঁর পূর্বসূরি এ্যাডাম স্মিথের বাণিজ্য সম্পর্কিত পরম ব্যয় সুবিধা নীতি সংশাধন করেন। তার এ মতবাদ আজও যথেষ্ট গুরুত্বের দাবি রাখে।

**অদৃশ্য হাত কিভাবে কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক সমস্যাবলির সমাধান করে তা ব্যাখ্যা কর।

অদুশ্য হন্তের ভিতর দিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক সমস্যাবলি : আধুনিক অর্থনীতিবিদরা মনে করেন যে, একটি অর্থনৈতিক সমাজ ব্যবস্থায় তিনটি কেন্দ্রীয় সমস্যা দেখা যায়। এগুলাে হলাে ।

কি কি দ্রব্য উৎপাদন করা প্রয়ােজন? কিভাবে উৎপাদন করতে হবে? কার কার জন্য উৎপাদন করতে হবে?

যদিও আধুনিক অর্থনীতিবিদদের মতে, তিনটি সমস্যা কেন্দ্রীয়ভাবে বিদ্যমান; তবুও এ্যাডাম ন্মিথের আলােচনায় দেখা যায়, অর্থনীতির সব বিষয়ই কেন্দ্রীয় সমস্যার আওতাভুক্ত। এ সকল সমস্যা সমাধান কিভাবে হয় তা নিয়ে আলােচনা করা হলাে ।

১. শ্রম বিভাগ দ্রব্যের চাহিদার উপর নির্ভরশীল : এ্যাডাম স্মিথ মনে করতেন, একটি দেশের বাজার এবং উৎপানন ক্ষেত্রে শ্রম বিভাগ সাধারণত পণ্যের চাহিদার উপর নির্ভরশীল। তিনি মনে করতেন, নিজ থেকে অরথনীতিতে শ্রম বিভাগ সৃষ্টি হয়। তাছাড়া চাহিদা সম্প্রসারণের ভেতর দিয়ে যেমন বাজার সম্প্রসারণ হয়, তেমনি শ্রম বিভাগও হয়ে থাকে।

, শ্রম দ্বারা দাম নির্ধারণ । এ্যাডাম স্মিথ বিশ্বাস করতেন, শ্রমের ফলে মূল্য নির্ধারণ হয়। যে সকল দ্রব্যের উৎপাদনে অধিক শ্রমের প্রয়ােজন হয় এ সকল দ্রব্যের দাম ও আধিক। আবার দ্রব্য উৎপাদনে কম শ্রমের রকার হলে দ্রব্যের মূল্যও কম হয়। তাহলে শ্রমই হলাে উৎপাদনের আসল মূলা নির্ধারক।

৩. দ্রব্যের স্বাভাবিক দর ও বাজার দর নির্ধারণ : এাডাম শ্মিথ মনে করতেন, প্রব্যের চাহিদার ভিত্তিতে বাজার দাম নির্ধারিত হয়, যােগানের দ্বারাৎপাদন ও চাহিদা স্বাভাবিক মূল্য স্থির করে। বাজার দাম স্বাভাবিক দামের তুলনায় কমবেশি হলেও বাজার মুল স্বাভাবিক মূল্যের দিকে এগিয়ে যায়।

৪. শ্রমিকের মজুরি নির্ধারণ : মজুরি নির্ধরণের ক্ষেত্রে দেখা যায়, মালিক শ্রমিককে মজুরি কম দিতে চায় বার শ্রমিক যথাসম্ভবজুরি বেশি নিতে চায়। অবশেষে মজুরি নির্ধারণ হয় মালি ও শ্রমিকের চুক্তির মাধ্যমে অর্থাৎ শ্রমের চাহিদা ও যােগানের দ্বারা মজুরি নির্ধারিত হয়।

, মুনাফার হার নিধার্রণ :  সুদের হার বৃদ্ধি পেলে মুনাফার হার বৃদ্ধি পায়। যার কারণে বেশি সুদ দিতে প্রস্তুত হয়। সুতরাং কেউ যদি ব্যবসায় অর্থ বিনিয়ােগ করে বেশি মুনাফা করতে পারে তাহলে সে বেশি সুদ দিবে, অন্যথায় সুদ কম দিবে।

**কেইনসের অর্থের চাহিদা/তারল্য পছন্দ তত্ত্ব : জে এম কেইনসের মতে, নগদ অর্থের তারল্যতা সবচেয়ে বেশিতাই মানুষ নগদ অর্থ হাতে ধরে রাখতে চায় । নগদ অর্থের চাহিদা ও তার্য পছন্দ সম্পর্কিত যে ব্যাখ্যা কেইনস প্রদান করেছেন তাই কেইনসের অথের চাহিদা তত্ত্ব বা তারল্য পছন্দ তত্ত্ব নামে পরিচিত।

.অর্থের লেনদেনজনিত চাহিদা : মানুষের দৈনন্দিন জীবনে দ্রব্যসামগ্রী ক্রুয়-বিক্রয় এবং অন্যান্য লেনদেনের জন্য অথের প্রয়ােজন হয়। এসব লেনদেনজনিত চাহিদা মিটানাের জন্য মানুষ যে পরিমাণ অর্থ তার নিজের হাতে ধরে রাখতে চায় তাকেই অর্থের লেনদেনজনিত চাহিদা বলে। লেনদেনজনিত চাহিদা আয়ের ওপর নির্ভর করে। সুদের হার নির্ধারণে এর কোনাে ভূমিকা থাকে না।

২. অর্থের সতর্কতামূলক চাহিদা : মানুষ বর্তমান সম্পর্কে কিছুটা নিশ্চিত হলেও ভবিষ্যতে রােগ, ব্যাধি, দুর্ঘটনা ইত্যাদি পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে। তাই ভবিষ্যতের সংকট মােকাবিলা করার জন্য সতর্কতা হিসেবে মানুষ কিছু নগদ অথ হাতে ধরে রাখতে চায়। অর্থের এরূপ চাহিদাও আয়ের ওপর নির্ভর করে। কাজেই সুদের হার নির্ধারণে অথের সভর্কতামূলক চাহিদার ভূমিকা নেই।

, অর্থের ফটকা চাহিদা : দৈনন্দিন লেনদেন ও ভবিষ্যতের অপ্রত্যাশিত সংকট মােকাবিলা ছাড়াও মানুষ ফটকা কারবারের উদ্দেশ্যে নগদ অর্থ হাতে ধরে রাখতে চায়। বস্তুত ফটকা কারবারের উদ্দেশ্যে মানুষ যে পরিমাণ অর্থ হাতে ধরে রাখতে চায় তাকে অর্থের ফটকা চাহিদা বলে। অর্থের ফটকা চাহিদা সুদের হারের ওপর নির্ভরশীল। সুদের হার বাড়লে বা কমলে নগদ অর্থের চাহিদা যথাক্রমে কমে বা বাড়ে। তাই অর্থের ফটকা চাহিদা রেখা বাম থেকে ডান দিকে নিম্নগামী। অর্থের যােগান স্থির থাকলে নগদ অর্থের ফটকা চাহিদাই সুদের হার নির্ধারণে মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে।

Share:

No comments:

Post a Comment

slidebar

Total Pageviews

Abdullah Mondal

Powered by Blogger.

Blog Archive

Recent Posts

বাস্তবতা

জীবনের বাস্তবতা বড়ই নিষ্ঠুর। এটাই জীবন। জীবনের বাস্তবতার বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, যতই নিষ্ঠুর হউক বা যতই কষ্ট হউক তা সয়ে নিতে হয়, মেনে নিতে হয় জীবনের প্রয়োজনেই। জীবনে কষ্ট আসলে মানসিক ভাকে যতটুকু ভেঙ্গে পড়বে জীবন তার দ্বিগুন পিছিয়ে যাবে। জীবনের সকল দূঃখ কষ্ট ও বাস্তবতাকে জীবনের অংশ হিসাবে মেনে নিয়ে স্বাভাবিক ভাবে গ্রহন করার নামই হচ্ছে সুখ।

Pages