**কল্যাণমূলক অর্থনীতির ২x ২ x ২ মডেল কি?
সমাজে দু'জন ব্যক্তি (দু'জন ভােক্তা ও উৎপাদনকারী) দুটি উপকরণের
ব্যবহার এবং দুটি পণ্যের উৎপাদন ও ভােগ অনুমান করে সর্বোচ্চ কল্যাণকর অবস্থা
নির্ণয়ের প্রচেষ্টাকে ২x ২x ২ মডেল বলা হয়। অন্যভাবে বলা যায় যে, এ মডেলের অনুমানের উপর ভিত্তি করে কাম্যতার তিনটি প্রান্তিক
শর্ত বিশ্রেষণ করা হয়েছে। নিম্নে ২x২x২ মডেলের অনুমিত শর্তাবলি প্রদত্ত হলাে
:
১. সমাজে দু'জন উৎপাদনকারী ও দু'জন ভােক্তা থাকবে (মূলত দুজন ব্যক্তি
নিয়ে একটি সমাজ কল্পনা করা হয়েছে। যারা একই সাথে উৎপাদনকারী আবার উপকারীও
বটে)
২. উৎপাদনকারীগণ দুটি উপকরণ ব্যবহার
করে।
৩. ভােক্তাগণ দুটি পণ্য ভােগ করে।
৪. উৎপাদনকারী ফার্ম দুটি পণ্য উৎপাদন
করে।
৫. ভােগকারী নিরপেক্ষ রেখা এবং
উৎপাদনকারীর সমউৎপাদন রেখা মূল বিন্দুর দিকে উত্তল।
৬. উপকরণের যােগান নিয়ে এসব উপকরণ
সমজাতীয় এবং সম্পূর্ণ বিভাজ্য।
৭. উৎপাদনের উপকরণ পরস্পর বিকল্প ও
বিভাজ্য।
৮. মাত্রাগত উৎপাদন স্থির থাকে।
৯. উপকরণ ও পণ্য বাজারে পূর্ণ
প্রতিযােগিতা বজায় থাকে।
১০. ভােগ ও উৎপাদনকারী যুক্তিশীল আচরণ
করে। ভােক্তা উপযােগ সর্বোচ্চ করতে চায় এবং উৎপাদনকারী মুনাফা সর্বোচ্চ করতে
চায়।
১১. বিচার বুদ্ধির মূল্যায়ন সম্ভব তবে
আত্মব্যক্তিক উপযােগ তুলনা করা যায় না।
১২. অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সরকারি বা
কোনাে প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে থাকবে না।
**কল্যাণমূলক অর্থনীতির ২x ২ x ২ মডেল কি?
ঐতিহাসিক স্কুল : অর্থনৈতিক
চিন্তাধারায় ক্লাসিক্যালদের মতের বিরােধিতা করেন একদল জার্মান অর্থনীতিবিদ। তারা ক্লাসিক্যালদের দর্শন এবং পদ্ধতির
সমালােচনা করেন। অর্থনৈতিক ঘটনা বিশ্লেষণে ক্লাসিক্যালদের অবরােহ পদ্ধতির বদলে আরােহ পদ্ধতি প্রবর্তন করেন।
ইতিহাসের আলােকে তারা অর্থনীতির ব্যাখ্যা করেন। তারা অর্থনৈতিক বিধিবিধানের ক্ষেত্রে কোনাে চরম মতবাদ
মেনে নেন নাই। এসময় তাদের সাথে কিছু ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ সংহতি প্রকাশ করেন। এভাবেই যে নতুন মতবাদের জন্ম হয়
তাই ঐতিহাসিক স্কুলের মতবাদ।
ক্লাসিক্যাল অর্থনৈতিক মতবাদের বিপরীতে
মূলত, জার্মান অর্থনীতিবিদদের চিন্তাধারার
প্রেক্ষিতে যে মতবাদ বা চিন্তাধারা গড়ে ওঠে, তাকে ঐতিহাসিক স্কুলের মতবাদ বা
জার্মান ঐতিহাসিক স্কুলের মতবাদ বলে।
***প্রান্তিক বিশ্লেষণ যেভাবে অর্থনৈতিক
বিশ্লষণে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছিল : প্রান্তিক বিশ্লেষণ যেভাবে অর্থনৈতি বিশ্লেষণ বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছিল তা
নিয়নে আলােচনা করা হলাে :প্রাপ্তিক বিশ্লেষণের জন্মাদাতা ছিলেন মার্শাল, পিগু, ওয়ালরাস এবং বম-বওয়ার্কের মতো অর্থনীতিবিদগণ। বিভিন্ন বিযয় তাদের মতামত বা বিশ্লেষণ হতে প্রান্তিক
বিশ্নেষণের অবদান বুঝা যাবে। মার্শাল পূর্ণপ্রতিযােগিতামূলক বাজারের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরােপ
করেন। তাছাড়া বাজার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পদ উৎপাদিত দ্রব্যের বণ্টন হলে তা দক্ষতা
প্রকাশ করে এ মতবাদ প্রকাশ করেন। মার্শালের এই চিন্তাধারা গ্রহণ করে
। অর্থনীতিবিদ পিগু বলেন, "পূর্ণপ্রতিযােগিতামূলক বাজার ব্যবস্থার অধীনে একমাত্র অর্থনৈতিক
কল্যাণ সম্ভব হতে পারে তিনি আরও বলেন, প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিজের তুপ্তি
সর্বোচ্চ করতে চায় এবং এভাবে তুপ্তি সর্বোচ্চ হতে পারে। মানুয
সাধারণত
ভবিষ্যতের তুপ্তির চেয়ে বর্তমানের তুপ্তিকে বেশি পছন্দ করে। এজন্য মানুষ কর্তৃক
সম্পদের বণ্টন তাদের অযৌক্তিক পছন্দের ভিত্তি হতে পারে। এ
পর্যায়ে পিগু বলেন,
যদি
প্রান্তিক ব্যক্তিগত নিট উৎপাদনের মূল্য প্রান্তিক সামাজিক
নিট
উৎপাদনের মূল্যের সমান হয়। তবে কোনাে নির্দিষ্ট সময়ে অর্থনৈতিক সম্পদের নিয়ােগ
দ্বারা জাতীয় আয় সর্বোচ্ হতে পারে। এ শর্ত
পূর্ণপ্রতিযােগিতার অধীনে কার্যকর হতে পারে যা মার্শাল তার লেখনীতে আগেই তুলে ধরেন,। মার্শাল জাতীয় আয় বণ্টনের ক্ষেত্রে গুরুত্ব
আরােপ করেন। তার মতে,
এক্ষেত্রে
শ্রমিকরা তাদের মজুরি পুঁজিপতিরা বিনিয়ােগের বিনিময়ে সুদের হার এবং উৎপাদক মুনাফা
পাবে। তবে প্রতিটি উৎপাদনের চাহিদা ও যােগানের ওপর জাতীয় আয়ের
ক্ষেত্রে
তাদের শেয়ার নির্ভর করে। তার মতে, মজুরি শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মানের ওপর নির্ভর করে। পক্ষান্তরে, সুদভোগ করা থেকে বিরত থাকার পুরস্কার
যা বিনিয়ােগের কারণে দেওয়া হয়। দ্রব্যমূল্যের পরিবর্তনহেতু মুনাফা প্রভাবিত
হয়।
এ পর্যায়ে মার্শালের বক্তুবা সম্প্রসারণ ঘটিয়ে পিগু যুক্তি দেন যে, জাতীয় উৎপাদনকে কল্যাণের একটি মাপকাকাঠি
হিসেবে
বিবেচনা করা হয়।
**ব্যয় বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি
প্রতিরােধের উপায়সমূহ আলােচনা কর:ব্যয় বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতির পশ্চাতে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির
দাবি অন্যতম কারণ। তাছাড়াওউংপাদনকারীর অব্যবস্থাপনার কারণে উৎপাদন ব্যয় বাড়তে
পারে। উৎপাদন ক্ষেত্র কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতির দাম বাড়লে বায়জনিত মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়। এ
ধরনের মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয্নোক্ত বিষয়সমূহ আলােচনা করা হয়েছে।
১. নিয়ন্ত্রিত মজুরি : শ্রমিকদের
অযৌক্তিক মজুরি বদ্ধির দাবি রােধ করা প্রয়ােজন। বর্তমানে শ্রমিকসংঘ অত্যন্ত শক্তিশালী। প্রায়ই মজুরি বৃদ্ধির দাবি
উঠে। তাই শ্রমিকসংঘের উপর নৈতিক চাপ প্রয়ােগ প্রয়ােজন, যাতে তারা অযৌক্তিক দাবি প্রত্যাহার করে নেয়। শ্রমিক নেতাদের
শ্রমিকের প্রান্তিক উৎপাদনশীলতা সম্পর্কে সচেতন করা প্রয়ােজন। সরকার এমনভাবে আইন প্রণয়ন করতে পারেন যাতে
প্রান্তিক উৎপাদনের চেয়ে কেউ বেশি মজুরি দাবি করতে না পারে।
২, দাম নিয়ন্ত্রণ: শ্রমিক সংঘ দ্রব্যসামগ্রীর দাম
বৃদ্ধির অজুহাতে মজুরি বৃদ্ধির দাবি করে। এজন্য
মুদ্রাস্ফীতির সময় সরকার বিভিন্ন দ্রব্যের দামের সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দিতে পারেন। আবার
খােলা বাজারে ন্যায্য মূল্যে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিক্রয় করতে পারেন। পাশাপাশি নিত্য
প্রয়ােজনীয় দ্রব্যের রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে পারেন।
৩, একচেটিয়া কারবারের উপর ট্রাস্ট বিরােধ
আইন প্রয়ােগ: এ দেশে একচেটিয়া কারবার থাকলে উৎপাদন ও বিক্রয়ের উপর একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ
থাকে। নানা অজুহাতে একচেটিয়া কারবারি দাম বাড়ানাের সুযােগ নেয়। অতিরিক্ত মুনাফার প্রত্যাশা একচেটিয়া কারবারিকে
দাম বৃদ্ধি করতে উৎসাহ যােগায়। এমতাবস্থায় সরকারের আইন প্রণয়ন করা উচিত যাতে একচেটিয়া কারবারের দাম
বৃদ্ধির প্রবণতা রােধ করা যায়।
৪. উৎপাদনশীল সম্পদে সুষ্ঠু ব্যবহার :
সম্পদের অপচয় অনেক সময় দ্রব্যসামগ্রীর উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি করে। এ অবস্থায় উৎপাদকগণ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির
পায়তারা করে। এজন) সরকার রাজস্ব ও আর্থিক হাতিয়ার এমনভাবে প্রয়ােগ করবে যাতে সম্পদের সুষ্ঠু ও কাম্য
বাযবহার নিশ্চিত হয়।
৫. নির্বাচনমূলক আমদানি নীতি : অনেক
সময় অপরিকল্পিতভাবে বিদেশ হতে কাঁচামাল এবং মূল্যবান যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ব্যয় বেশি পড়ে। তাছাড়া
অনেক সময় দেশে কার্যরত বিদেশি বহুজাতিক সংস্থা নিজ দেশ থেকে কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতির আমদানি ব্যয়
বেশি দেখিয়ে দ্রব্যমূল্য বেশি নির্ধারণের চেষ্টা করে। এই অশুভ প্রবণতা ন্যূনতম স্তরে রাখার জন্য নির্বাচিত দ্রব্যসমূহ
সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে আনার ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
৬, মজুরি মূল্যসূচক পদ্ধতি : সরকার
দ্রব্যমূল্য সূচকের সাথে সংগতি রেখে শ্রমিকদের উৎপাদন দক্ষতার আলােকে মজুরি সূচক নির্ধারণ করতে পারেন। উৎপাদনের
সাথে সংগতি রেখে এভাবে মজুরি বৃদ্ধি করালে শ্রমিকদের প্রকৃত আয় বাড়বে। তারা এই অবস্থায় অযৌক্তিকভাবে মজুরি বৃদ্ধির
দাবি করবে না। তাছাড়া উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে
মুদ্রাস্ফীতির মাত্রাও এক্ষেত্রে কমে আসবে।
৭, আর্থিক ব্যবস্থা অবলম্বনের দ্বারা
ব্যয় বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস : দেশে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে
যখন দামস্তর বাড়ে, তখন উৎপাদন কাজে নিয়ােজিত উপকরণেও
আ্থিক আয় বাড়ে। আ্থিক আয় বাড়লে জনগণের লেনদেন বাবদ অর্থের চাহিদাও বাড়ে। অর্থের যােগান
স্থির থেকে অ্থের চাহিদা বাড়লে সুদের হার বাড়ে। সুদের হার বাড়লে মূলধনের চাহিদা কমে। ফলে সামগ্রিক চাহিদা কমে এবং মুদ্রাক্ষীতি
নিয়্ত্রিত হয়।








No comments:
Post a Comment