1**কোন সময়কালকে আন্তর্জাতিক নারী দশক
বলা হয় ১৯৭৬-১৯৮৫ ।
**'Feminism' শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন কে?
উত্তর : উনবিংশ
শতাব্দীর প্রথম দিকে ফরাসি সমাজতন্ত্রী চার্লস ফুরিয়ার সর্বপ্রথম 'Feminism'
শব্দটি আবিষ্কার
করেন।
**নারীর ভােটাধিকার প্রয়ােগ হয় সর্বপ্রথম নিউজিল্যান্ডে।
**'কেউ নারী হয়ে জন্মগ্রহণ করে না, নারী হিসেবে তৈরি হয়'- উক্তিটি : সিমন দ্য ব্যুভেয়ার।
** Eco Feminism : পরিবেশ নারীবাদ।
**WID - Women in
Development.
**WAD -Women And
Development.
**বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ
মহিলাদের জন্য কতটি আসন
সংরক্ষিত আছে: ৫০টি।
**মালালা ইউসুফজাই পাকিস্তানের নাগরিক
**বিশ্ব মানবাধিকার দিবস কত তারিখ:
১০ ডিসেম্বর।
**PFA-Parent Faculty
Association.
**কৃষ্ণাঙ্গ নারীবাদ কি?
উত্তর : জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ ও শ্রেণিগত বৈষম্য ও
নিপীড়ন থেকে
মুক্ত করার জন্য যে নারীবাদী আন্দোলন পরিচালিত তাই কৃষ্ণাঙ্গ নারীবাদ।
**The Second Sex গ্রন্থটির লেখক কে?
উত্তর : ফরাসি
দার্শনিক ও সক্রিয় রাজনৈতিক সিমন দ্য বুভেয়ার (১৯৪৯ সালে প্রকাশিত হয়)।
**বিধবা বিবাহ
ইশ্বরচন্দ্র
বিদ্যাসাগর প্রচলন করেন **বাংলাদেশে কতসালে যৌতুক নিরােধ আইন পাস
হয়: ১৯৮০ সালে।
**বেইজিং প্লাস টেন সম্মেলন কবে অনুষ্ঠিত
হয়?
উত্তর : ২০০৫
সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১১ মার্চ পর্যন্ত
**বাংলাদেশের কত শতাংশ নারী
পুষ্টিহীনতায় ভােগে: ৭০ শতাংশ।
**সালিস: গ্রামের মুরুবী সমাজ এর ক্ষমতাশালী ব্যক্তিবর্গ এবং বিবাদমান পক্ষসমূহ যে স্থানে মিলিত
হয়ে সে বিবাদ নিম্পত্তির আয়ােজন করা হয় তাই সালিস।
**CEDAW --Convention on
Elimination of all forms of Discrimination Against Women.
**Betty Freidan এর বিখ্যাত বইয়ের নাম: The
Feminine Mystique.
**ফতােয়া কি?
উত্তর : ফতােয়া
শব্দের অর্থ ধর্মীয় বিধি-বিধান। ইসলাম ধর্মীয় বিশেষজ্ঞ বা মুফতি কর্তৃক প্রদত্ত বিধি-বিধানকে ফতােয়া বলে।
**কোন বছরকে আন্তর্জাতিক নারীবর্ষ বলা
হয়:১৯৭৫ সালকে ।
**বৃটিশ ভারতে নারীরা কখন ভােটাধিকার লাভ
করে :১৯২১ সালে ।
**PFA কি?
উত্তর : বেইজিং PFA হচ্ছে চীনের রাজধানী বেইজিং এ অনুষ্ঠিত চতুর্থ বিশ্ব নারী সম্মেলনের
মূল দলিল। PFA এর পূর্ণরূপ হচ্ছে- Baijaing Platform for Action
**মুসলিম বিবাহের চারটি শর্ত হলাে- ১.
দেনমােহর নির্ধারণ ও প্রদান, ২. দুজন পুরুষ স্বাক্ষী, ৩. বিবাহের রেজিস্ট্রেশন ও ৪. বর ও কনের সম্পত্তি।
**চতুর্থ বিশ্বনারী সম্মেলন কোথায়
অনুষ্ঠিত হয়:চীনের রাজধানী বেইজিং এ
১৯৯৫ সালে ।
** "A Vindication
of the Right of Woman" কার লেখা:বইটি মেরী ওলস্টোনক্র্যাফট এর লেখা।
**নারী উন্নয়নের দুটি পত্রের নাম হলাে-
১. WID ও2. WAD I
**বাংলাদেশে মহিলাদের জন্য পৃথক
মন্ত্রাণলয়টি
হলাে- মহিলা ও
শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
**বিশ্বে প্রথম নারী অধিকার বিষয়ক সম্মেলন
নিউইয়র্কের
সেনেকা ফলস- এ অনুষ্টিত হয়।
**নারীর দ্বৈত ভূমিকা: গৃহ ও গৃহক্ষেত্রের বাইরে নারীর
দায়িত্ব পালন করাকে নারীর দ্বৈত ভূমিকা বলে।
**আদর্শ নারী: যে নারী সন্তান ধারণ, এবং পালনে যথাযথভাবে ভুমিকা পালন করতে পারে ভাকে আদর্শ নারী
বলে।
**জেন্ডার কী: নারী ও পুরুষ সম্পর্কীয়
মনস্তাত্ত্বিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বােধ হচ্ছে জেন্ডার।
**Feminism শব্দটি ফরাসি শব্দ Femme থেকে এসেছে।
**মার্কসীয় নারীবাদের মূল লক্ষ্য:
পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় শােষিত ও নির্যাতিত নারীদের মুক্তিই মার্কসীয় নারীবাদের মূল
লক্ষ্য।
**নারী অপহরণের সর্বোচ্চ শাস্তি
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
বা চৌদ্দবছর
পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড। এবং সেই সাথে
জরিমানা করা
যেতে পারে।
**আন্তর্জাতিক নারী দিবস কখন পালিত হয়?
উত্তর : :
আন্তর্জাতিক নারী দিবস ৮ মার্চ পালিত হয় ।
**সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করেন:লর্ড উইলিয়াম বেন্টিং
**চারজন নারী রাষ্ট্রপ্রধানের নাম হলাে-
১. শেখ
হাসিনা, ২. খালেদা জিয়া, ৩. জুলিয়া গিলার্ড ও ৪. চক্ডিকা কুমারা তুঙ্গা।
**নারীবাদ কি: নারীবাদ হলাে এক ধরণের
মতবাদ যা সামাজিক আন্দোলনের
মাধ্যমে নারী সম্পর্কিত গতানুগতিক দৃষ্ঠিভঙ্গি পরিবর্তন করে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য
বিলােপ এবং পুরুষের
মত নারীর সমান
অধিকার অর্জনে প্রায়াসি।
** GAD- Gender And
Development.
**আমূল নারীবাদী গুলামিথ ফায়ারস্টোনের
দৃষ্টিতে
ইতিহাসের মূল
চালিকাশক্তি প্রজননমূলক সম্পর্ক।
**Betty Freidan -এর বিখ্যাত বইয়ের নাম হলাে-
The Feminine Mystiqe
**বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদে সংরক্ষিত
মহিলা আসন
সংখ্যা তিন জন।
** বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রীর
নাম হলাে-
বেগম খালেদা
জিয়া।
**The Subjection of
Women' লেখক -জন স্টুয়ার্ট মিল।
**Epistemology : জ্ঞানতত্ত্ব।
**NBFO - National Black
Feminist Organization.
**SDG - Sustainable
Development Goal.
**পৃথিবীর প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী
শ্রিমাভাে বন্দর নায়েকে।
**দু'জন নারীবাদী লেখকের নাম কী?
উত্তর : দুজন
নারীবাদী লেখক হলেন- ওলন্দাজ লেখিকা মার্গারেট লুকাস ও মেরি ওলস্টোসক্রাফট।
**নারীবাদের উৎপত্তি ঘটেছিল পশ্চিম
ইউরােপ ও অমেরিকার উদার
ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ঐতিহ্যের মাধ্যমে।
**পিতৃতন্ত্রের তিনটি সংস্থার নাম হলাে-
১. পরিবার, ২. সমাজ ও ৩. রাষ্ট্র।
**যৌতুক কী: পাত্রপক্ষ কনে পক্ষের কাছে দাবী জানিয়ে
যে সমস্ত স্থাবর
ও অস্থাবর
সম্পত্তি আদায় করে তাকেই
এক কথায় যৌতুক বলে।
**বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের তিনটি কারণ
হলাে-
১. ধর্মীয়
কুসংস্কার, ২. দারিদ্র্য ও ৩. যৌতুক প্রথা।
**নারীর ক্ষমতায়নের দুটি কৌশল হলাে- ১.
অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও ২. নারীর কর্মসংস্থানের
সুযােগ সৃষ্টি।
**সিডো : সিডাে হলাে নারীর প্রতি সকল প্রকার
বৈষম্য দূর করার একটি আন্তর্জাতিক সনদ।
**বাংলাদেশে কত সালে যৌতুক নিরােধ আইন
পাস হয়েছিল?
উত্তর : ১৯৮০
সালে।
**নারীর ক্ষমতায়ন হলাে বস্তুগত, মানবিক ও
বুদ্ধিবৃত্তিক
সম্পদের উপর নারীর নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা।
**২০১৯ সালের আন্তর্জাতিক নারী দিবসের
প্রতিপাদ্য কী?
(What is the theme of
Internat Women Day 2019?)
উত্তর : ২০১৯
সালের আন্তর্জাতিক নারী দিবসের
প্রতিপাদ্য হলাে
"সবাই মিলে ভাবাে, নতুন কিছু করাে,
নারী পরুম সমতার
নতুন বিশ্ব গড়াে।
**ফেমিনিজমের অর্থ কি?
উত্তর :
ফেমিনিজমের অর্থ হলাে- নারীবাদ।
**পিতৃতন্ত্র কি?
উত্তর :
পিতৃতন্ত্র এমন একটি মতাদর্শ যা পুরুষকে নারীর
তুলনায় শ্রেষ্ঠ
ও শক্তিশালী মনে হয়।
**নারীর ক্ষেত্রে থিগুণ বােঝা বলতে কি
বুঝ?
উত্তর : পরিবার
ও পরিবারের বাহিরে কাজ করাকে বােঝায়।
**বাংলাদেশে নারীমুক্তির অগ্রদূত কাকে
বলা হয়?
উত্তর : বেগম
রােকেয়াকে।
**বাংলাদেশে কত সালে মহিলা ও শিশুবিষয়ক
মন্ত্রণালয়
গঠিত হয়?
উত্তর : ১৯৭২
সালের ২০ জানুয়ারি।
**'সুলতানার স্বপ্ন গ্রন্থটির রচয়িতা কে?
উত্তর : বেগম
রােকেয়া।
**প্রথম নারী সম্মেলন কোথায় অনুষ্ঠিত
হয়?
উত্তর :
মেক্সিকো সিটিতে (১৯৭৫ সালে)।
**তারামন
বিবি ছিলেন মহান
স্বাধীনতা যুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযােদ্ধা
**বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য
সংরক্ষিত ৫০ আসন
।
***বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে নারীবাদের উদ্ভব ও বিকাশ : দুনিয়ার সব দেশে একই রূপে, একই মাত্রায় নারীবাদী চেতনার উন্মেষ
ঘটেছে। নানা দেশের আর্থসামাজিক
বাস্তবতায় নানাভাবে নারীবাদী আন্দোলন বিকশিত হয়েছে। এ আন্দোলন কোনাে কোনাে সময়ে জোরেসােরে আবার কখনাে ধীরগতিতে সংগঠিত
হয়।
সূচনা
পর্ব/প্রাথমিক পর্যায় : উনবিংশ শতাব্দীর গােড়া থেকে আমাদের বাংলাদেশ তথা তৎকালীন
অবিভক্ত ভারতবর্ষে নারীবাদী
চিন্তাচেতনা শুরু হয়।
নারীর শােচনীয়
দুরবস্থার বিরুদ্ধে এবং নারীর অধিকারের সপক্ষে প্রথম সােচ্চার হন একজন নারীবাদী
পুরুষ রাজা রামমােহন রায়। ১৮১৮ সালে তিনি
কলকাতায় সহমরণ বা সতীদাহ প্রথা বিলােপের উদ্যোগ নেন, যার ফলে ১৮২৯ সালে লর্ড বেন্টিঙ্ক সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ
করে আইন পাস করেন।
অন্যদিকে, নারীকে ধর্মশাস্ত্রের উৎপীড়ন থেকে
রক্ষা করতে সচেষ্ট হন আরেক মহৎ পুরুষ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনি প্রথমে নারী শিক্ষার অধিকার
প্রতিষ্ঠার জন্য মেরি ককের সাথে মিলে মােট ৪৩টি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন। পরবর্তীতে তিনি ১৯৫০-৫৫ এ সময়ে
বিধবাবিবাহের সপক্ষেও তীব্র আন্দোলন গড়ে তােলেন এবং ১৮৬৭ সাল নাগাদ নিজে ৬০টি বিধবাবিবাহের আয়ােজন করেন।
২য় পর্ব: নারী সংগঠন ও নারীদের সম্পূকতা :১৮৮৯ সালে ভারতবর্ষের প্রথম সংগঠিত নারীবাদী
আন্দোলনের রূপক মহারাট্র পঞ্তিত রমাবাঈ প্রকাশ আন্দোলনে নামেন এবং পুনরায় নারীমুক্তি সম্বন্ধে
বক্তৃতা প্রদান করেন। অন্যদিকে, বাংলার
প্রথম নারীবাদীরূপে খ্যাত সরলাদেবী চৌধুরানী ১৯১০ সালে সর্বভারতীয় নারী সংগঠন ভারত স্ত্রী মহামগ্ডল' প্রতিষ্ঠিত করেন। তৎকালীন ভারতবর্ষে কতিপয় শক্তিশালী
নারী সংগঠন গড়ে উঠে
১. ব্রাক্ষ্মিকা সমাজ,২. সখী সংঘ,৩. আর্য মহিলা সমিতি,৪. ভারত স্ত্রী মহামগডল,৫, গুজরাট স্ত্রী মণ্ডল,
৬. মহিলা সেবা
সমাজ,৭. উইমেন্স ইন্ডিয়ান এসােসিয়েশন,৮, ন্যাশনাল কাউন্সিল অব উইমেন ইন ই্িয়া,৯, অল ইঞ্ডিয়া উইমেন্স কনফারেন্স,১০. বঙ্গীয় প্রাদেশিক মহিলা আত্মরক্ষা
সমিতি।
চূড়ান্ত বা সমত্র সংঘর্ষ পর্ব:বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে ১৯৪৭ এর ব্রিটিশ শাসনের অবসান ও দেশ বিভাগ
অবধি নানা নারী সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে এবং অসংব্য নারী স্বদেশপ্রেমে উদ্দুদ্ধ হয়ে ব্রিটিশ
বিরােধী জাতীয় মু্তি সংগ্রামের বিভিন্ন ধারায় সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়।
ব্রিটিশবিরােধী
সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে প্রীতিলভা ওয়াদ্দেদার, কল্পনা দত্ত,
শান্তি ঘােষ, সুনীতি চৌধুরী, রীনা দাস, ননী বালা, দুকড়ি বালা দেবী, চারুশীলা দেবী।
কমিউনিস্ট ও শ্রমিক আন্দোলন- স্াকিনা বেগম, প্রভাবতি দাস গুপ্ত, সান্তোষ কুমারী দেখী, দুঃখুমত বিবি।
কৃষক আন্দোলন-
রানী গুহ, হিরন্ময়ী ঘােষ, মনােরমা বসু, কনক মুখার্জী, হেনা দাস, চারুলতা ঘােষ প্রমুখ।
১৯১৭ সালে
তুৎকালীন ভারতে নারীদের ভেটাধিকারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয় এবং ১৯১৯ সালে এ
দাবিতে নারীদের একটি প্রতিনিধিদল ব্রিটেনে গমন
করেন। অবশেষে বাংলাদেশ তথা অবিভক্ত ভারতবর্ষের মহিলারা ১৯২৩ সালে ভােটাধিকার লাভ করে।
**কৃষ্ণাঙ্গ নারীবাদ : প্রচলিত নারীবাদ হতে কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের সমস্যা তুলে ধরার জন্য
কৃষ্ণাঙ্গ নারীবাদের উদ্ভব ঘটেছে। কৃষ্ণাঙ্গ নারীবাদ কৃষ্ণাঙ্গ
নারীদের সমস্যা সম্পর্কে আলােচনা করে। তার আত্মজীবনীর ভূমিকায় আমেরিকার় কৃষ্ষাঙ্গ নারীবাদী বেলডুক বলেন, "শ্বেতাঙ্গ নারীদের চাইতে কৃষ্ণাঙ্গ নারীগণ বেশি
আত্মর্যাদাশীল। কৃষ্ণাঙ্গ নারীগণ বেশি ইতিবাচক। বেশি কথা বলে এবং আস্থাশীল।
আমেরিকার দক্ষিণ অঞ্চলের নারীগণ বেশি সচল এবং বেশি মর্যাদাশীল। আমাদের বাবা মা এবং শিক্ষকগণ আমাদের
সঠিকভাবে চলতে এবং পরিক্ষারভাবে কথা বলতে শেখান।.
কৃষ্ণাঙ্গ
নারীবাদ ইতিহাসের শিক্ষা গ্রহণ করে এবং এর আলােকে বর্তমান সমস্যা সমাধানের চেষ্টা
করে। আমেরিকার
নারীবাদীগণ
তাদের পূর্বপুরুষদের জীবনে দাসত্বের প্রভাব, অত্যাচার এবং নাগরিক অধিকার আন্দোলন এবং জেন্ডার বৈষম্যের উপর জোর দেয়। তারা তুলে ধরে
কৃষ্ণাঙ্গদের উপর শ্বেতাঙ্গদের অত্যচার। তারা নারীর অধিকার সমর্থন করে। কিন্তু তারা নিজ সম্প্রদায়কে অস্বীকার
করে না। কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের জাতপাত ও জেন্ডার বৈষম্যের বিরুদ্ধে সােচ্চার কণ্ঠে প্রতিবাদ জানায়। বর্তমানে কৃষ্ণাঙ্গ
নারীগণ আন্দোলনমুখী নয়, কারণ নারী বলতে কোন জাতপাত নেই।
শ্বেতাঙ্গ নারী ও
অশ্বেতাঙ্গ নারী
একই। এই ধারণা তাদের চিন্তায় এসেছে। তাছাড়া, বর্ণবৈষম্যের চেয়ে এটা তীব্র নয়।
**নারীর অধস্তনতার সামাজিক কারণসমূহ :
নিম্নে অধস্তনতার সামাজিক কারণসমূহ উল্লেখ করা হলাে : ১. পুরুষতান্ত্রিক সমাজ : নারী যে
সমাজে বসবাস করে এবং বেড়ে উঠে তা পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। পুরুষতান্ত্রক সমাজে পুরুষ প্রভু এবং নারী তার দাসী।
নারীর কাজ পুরুষের সেবা করা। পুরুষতান্ত্রিক নারীকে ভােগ্যপণ্য হিসেবে মনে করা হয়। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারী
বিয়ের পর স্বামীর বাড়ি আসে। কিন্তু বিয়ের পর নারীকে চিরচেনা আপন জায়গা ছেড়ে স্বামীর ভিটেকে আঁকড়ে থাকতে
হয়। বিয়ের পর নারী তার পিতামাতার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়। ইসলাম ধর্মে সম্পত্তিতে নারীর অধিকার থাকলেওনারী তা
ভােগ করতে পারে না। ফলে নারী স্বামীর প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।
২. নৈতিবাচক
সামাজিকীকরণ : নারী অধস্তনতার অন্যতম কারণ নারীর নৈতিবাচক সামাজিকীকরণ। নারীর কোন সত্তা বিকাশের জন্য সামাজিকীকরণ হয়
না। কন্যাশিশু মায়ের কাছ থেকে প্রথম তার সামাজিকীকরণ শুরু হয়। মায়ের মাধ্যমে সে জানতে পারে সে মেয়ে মানুষ।
পুরুষ ছেলে থেকে সে আলাদা। বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার বিচরণ ক্ষেত্র সীমিত হয়ে পড়ে। নারী যতই শিক্ষিত ও
উপার্জনকারী হােক না কেন স্বামীকে তোয়াজ করে চলতে হবে। এভাবে নারীর সামাজিকীকরণের ফলে নারী পরনির্ভরশীলতা
হয়ে পড়ে।
৩. বিবাহ :
নারীর অধস্তনতার অন্যতম কারণ বিয়ে। পুরুষতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলাের মধ্যে বিয়ে নামক সামাজিক প্রতিষ্ঠানটি গুরুত্বপূর্ণ। নারী হিসেবে জন্ম নিলে তাকে
বিয়ের পিড়িতে বসতেই হবে। সব ধর্মে নারীর বিয়েকে অপরিহার্য বলে মনে করা হয়। বিয়ের মাধ্যমে নারী তার
স্বাধীনতা হারায়। নারী তার স্বাধীনতা ফিরে পেতে চায় পুত্র সন্তান জন্মদানের মাধ্যমে। কিন্তু নারীর এ আশা
পূর্ণ হয় না। বিয়ের মালা পরিয়ে নারীকে পরাধীনতার শিকলে আবদ্ধ করা হয়।
৪.
শিক্ষাক্ষেত্রে পশ্চাৎপদতা : নারীর অধস্তনতার অন্যতম কারণ শিক্ষা ক্ষেত্রে
পশ্চাৎপদতা। নারী শিক্ষাকে প্রয়োজনীয় বলে মনে করা হতাে। বর্তমানে নারী
শিক্ষার প্রসার ঘটেছে। উন্নয়নশীল দেশে নারী শিক্ষার হার বেড়েছে। শিক্ষিত মেয়েরা চাকরি করে পরিবারের হাল
ধরবে এ আশা পরিবার করে না। মেয়ে শিক্ষিত বা অশিক্ষিত হােক বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে রান্নার হাড়ি টানতে
হয়। অনেক শিক্ষিত মেয়ে বিয়ের পর স্বামী ও সন্তানের জন্য চাকরি করে না।স্বামীর আদেশ নির্দেশ ও স্বামীর সংসারকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে।
**বিভিন্ন গণমাধ্যমে নারীকে যেভাবে
উপস্থাপন করা হয় : আমাদের দেশে প্রচলিত প্রধান
গণমাধ্যম্ডলাে
হচ্ছে সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ইত্যাদি। গণমাধ্যমে নারীর যে
চিত্র দেখা যায় তা নারীর জন্য অবমাননাকর এবং সেটা তার অধস্তনতাকে নির্দেশ করে। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রধান গণমাধ্যমে
নারীকে কিভাবে উপস্থাপন করা হয় তা নিচে
আলােচনা করা হল ।
সংবাদপত্রে নারী : ১. নির্যাতিত হিসেবে নারী :
সংবাদপত্রের পাতায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নির্যাতিত হিসেবে নারীদের দেখে থাকি। সমাজে নারী নির্যাতনের ভয়াবহতার
প্রতিফলন ঘটছে মূলত জাতীয় সংবাদপত্রগুলাের মাধ্যমে। এর ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দিক উভয়ই আছে। এছাড়া
সংবাদপত্রে অপরাধীর বদলে নির্যাতিত নারীর ছবি ও
পরিচয় প্রকাশের কারণে নির্যাতিত নারীরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অন্যান্য খবরের চেয়ে নির্যাতনের খবর বেশি
প্রকাশিত হওয়ায় পাঠকদের এ মানসিক ধারণা হয় যে, নারীদের নির্যাতন করাই যায়, তাদের জন্ই নির্যাতিত হওয়ার জন্য। তাই সংবাদপত্রে নির্যাতিতা
হিসেবেই নারীদের বেশি দেখা যায়।
২. অসহায় ও
দুর্বল হিসেবে নারী : বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুযােগ, বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, জলােচ্ছাস, দুর্ভিক্ষের ক্ষেত্রে সংবাদপত্রে নারীদের ছবিই প্রাধান্য
পায়। এক্ষেত্রে নারাদের দুবল ও অসহায় হসেবে উপস্থাপন করা হয়। এছাড়া এসব দুর্যোগে ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে
অসহায় নারীদের ছাবিই সংবাদগঞ্লােতে দেখা যায়। এর অতিরিক্ত কিছু আছে যা রুচির আওতায় পড়ে না।
৩.আদর্শ ও সুন্দরী নারী : বর্তমানে বিভিন্ন
সংবাদপত্রে নারীদের জন্য আলাদা পাতা থাকে এটাকে বলে নারীপাতা। এ নারীপাতায় নারীর সনাতনী
ভূমিকাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। তাই দেখা যায়, এসব পাতার বেশিরভাগ অংশ জুড়ে থাকে রান্নাবান্না এবং ঘর সাজানাোর কথা। এছাড়া থাকে নারীদের
সাজুগুজু এবং রূপচর্চার কথা। আর পত্রিকার সৌন্দর্য বাড়ানাের জন্য থাকে সুন্দর
সুন্দর নারী মডেল এর ছবি। নারীর সৌন্দর্যকে এখানে গুরুত্ব দেওয়া হয় অন্যান্য বিষয়ের চেয়ে। রমণীয়, কমনীয়, স্নেহশীল আদর্শ নারীর চিত্রও এখানে দেখা যায়। তবে বর্তমানে কিছু
কিছু পত্রিকায় নারী অধিকার, নারী আন্দোলন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে লেখা হয়।
যেমন- দৈনিক প্রথম আলাের নারী মঞ্চ পাতা।
৪. খেলার পাতায়
নারী ; খেলার পাতায় নারীদের খবর থাকে খুব কম।
নারী খেলােয়াড়দের খেলার খবরের চেয়ে তাদের মােহময়ী ভঙ্গির ছবি প্রকাশ করার দিকে বেশি আগ্রহ দেখা যায়।
যেমন সানিয়া মিজা, শারাপােভা, আনা কু্নিকোভার মত গ্লামারাস খেলােয়াড়দের
ছবিই সংবাদপত্রে বেশি দেখা যায়। তাদের সৌন্দর্যকে এখানে পুঁজি করা হয় পত্রিকার কাটতি বাড়ানাের জন্য।
৫. পত্রিকার
বিজ্ঞাপনে নারী : সংবাদ হিসেবে নারীকে সংবাদপত্রের পাতায় বেশি দেখা না গেলেও
পত্রিকার বিজ্ঞাপনগুলােতে নারীর ছবি দেখা যায়।
এখানেও সৌন্দর্যকে প্রাধান্য দেওয়া হয় পণ্যের প্রচারের জন্য। নারী হয় সৌন্দর্য সর্বস্ব।
গণমাধ্যম হিসেবে
রেডিওতে নারীকে উপস্থাপন : রেডিওতে প্রচারিত মহিলাদের অধিকাংশ অনুষ্ঠান
পত্রিকার মহিলা
পাতার বিষয়বস্তুর কার্বন কপি। সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীন রেডিওতে নারীদের নিয়ে
সাধারণত যেসব অনুষ্ঠান হয় তার মধ্যে রয়েছে পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক অনুষ্ঠান। রেডিওতে
পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক অনুষ্ঠানে মুখ্য ভূমিকা থাকে নারীর। কেননা নারীকে সহজেই
জন্মশাসন পদ্ধতির ভােক্তায় পরিণত করা যায়। পরিবার পরিকল্পনা বিজ্ঞাপনের
বেলায়ও
একই কথা প্রযােজ্য। বার বার পরিবার পরিকল্পনা বিজ্ঞাপন মনে করিয়ে দেয় যে, জন্মদান ব্যতীত নারীর দ্বিতীয় কোন ভূমিকা প্রায় নেই-ই। নারীকে সমাজ
রূপান্তরের কর্মে ভূমিকা রাখতে হবে এই সত্য নারীদের জন্য বরাদ্দ সাপ্তাহিক অনুষ্ঠানেও উচ্চারিত হয়
**গণমাধ্যম : সাধারণ অর্থে, গণমাধ্যম বলতে জনগণের সাথে।
যােগাযােগের মাধ্যমসমূহকে বুঝায়। বিভিন্ন বাষ্ট্রবিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে
গণমাধ্যমের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। যেমন-
R.P. Molo এর মতে, "যে প্রক্রিয়ার দ্বারা কোনাে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সরকার জনসাধারণের সাথে মাধ্যম রক্ষা করে তাকে গণমাধ্যম বলে।"
Aggee, Adult and Emery
বলেন, "বৃহৎ আকারের ও নানাধর নের
শ্রোতামণ্ডলীর নিকট কোনাে বিষয়ে তথ্য, সংবাদ, ধারণা ও মনােভাব কতিপয় নির্দিষ্ট
মাধ্যমের সাহায্যে প্রেরণ করার ও প্রক্রিয়াই হলাে গণমাধ্যম।
**নারী উন্নয়নে গণমাধ্যমের ভূমিকা :
গণমাধ্যমগুলাে যেভাবে নারী উন্নয়নে ভূমিকা পালন করছে তা নিম্নে আলােচনা করা হলাে :
১. নারীদের
অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা : বর্তমানে বিভিন্ন গণমাধ্যম যেমন- টিভিতে নারীদের
অধিকার বিষয়ক
খণ্ডনাটক, নাটিকা বিভিন্ন ধরনের আলােচনা অনুষ্ঠান
ইত্যাদি হচ্ছে। ফলে নারীরা তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হচ্ছে।
২. নারীদের
শিক্ষা সম্পর্কে সচেতন করरा : শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষা ছাড়া
কোনাে জাতি উন্নতি করতে পারে না। আর জাতির সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য এমনকি নারীদের নিজেদের
উন্নয়নের জন্য শিক্ষা ছাড়া কোনাে বিকল্প নেই। বিভিন্ন গণমাধ্যম নারী শিক্ষার গুরুত্ব
সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয় প্রচার ও প্রকাশ করছে ফলে নারীদের মধ্যে শিক্ষা সম্পর্কে
সচেতনতা বুদ্ধি পাচ্ছে।
৩. জনমত গঠন :
যে কোনাে বিষয়ে জনমত গঠনে গণমাধ্যমণ্ডলাে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে| নারী অধিকার, নারী নির্যাতন, পিতৃতান্ত্রিক মূল্যবােধ ইত্যাদি
সম্পর্কে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে গণমাধ্যমণগুলাে এসব বিষয়ে জনমত গঠনে সাহায্য করে। যে কোনাে বিষয়ে ইতিবাচক জনমত
গঠিত হলে তা বিষয়ের নেতিবাচক দিক দূরীকরণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
৪. নারীদের
বিভিন্ন সমস্যার সমাধান : বর্তমানে বিভিন্ন গণমাধ্যম যেমন টিভিতে রেডিওতে নারীদের
সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন আলােচনা সমালােচনা প্রচার করে
থাকে। এ থেকে নারীরা তাদের বিভন্ন সমস্যা যেমন- তাদের স্বাস্থ্য, অসখ-বিসুখ, পারিবারিক সমস্যা, আইনগত সমস্যা ইত্যাদি সমস্যার সমাধান
পেয়ে থাকে।
**CEDAW কী? : CEDAW শব্দের
পূর্ণরূপ হচ্ছে Convention
on the Elimination of All Forms of
Discriminaion Against
Women. অর্থাৎ, নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলােপ
সনদ। উল্লেখ্য যে, 'নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলােপ সনদ বা CEDAW কে নারীর জন্য 'ম্যাগনা কার্টা এবং 'বিল অব রাইটস' বলা হয়। জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রসমূহ এ সনদটি
নিজ নিজ দেশে বাস্তবায়নে অঙ্গীকার বা চুক্তিবদ্ধ।
CEDAW এর ভূমিকা : নারীর প্রতি সকল প্রকার
বৈষম্য দূর করা এবং সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সকল ক্ষেত্রে নারী পুরুষের
সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতিসংঘ সনদ বা চুক্তি হচ্ছে CEDAW. CEDAW সনদের মূল বাণী হলাে মানবসমাজ, সভ্যতার বিকাশ ও উন্নয়নে যুগ যুগ ধরে
নারী সমাজ যে গঠনমূলক ভূমিকা
পালন করে আসছে তার যথাযথ স্বীকৃতি দান। মানুষ হিসেবে নারীর নিজের উন্নয়ন ও
বিকাশের জন্য প্রয়ােজনীয় পরিবেশ তৈরি করা। CEDAW সনদের
মূল লক্ষ্য হলাে মানুষের মৌলিক অধিকার, মর্যাদা ও মূল্যবােধের ক্ষেত্রে নারী পুরুষের সমতার নিশ্চয়তা বিধানের আবশ্যকীয়তা
এবং নারীর অধিকারের মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দান।
** নারী ও রাজনীতি পাঠের গুরুত্ব উপস্থাপন কর।
নারীরাও এ
স্বাধীন দেশের নাগরিক, অথচ আমানের সমাজে নারীরা এখনাে পুরুষ
কর্তৃক অবদমিত ও অবহেগিত। তাই নারীর প্রতি এই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দূর করে একটি
সুধম সমাজ গড়ে তুলে স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি আলাদা বিষয় হিসেবে নারী ও রাজনীতি অধ্যয়ন করা
প্রয়োেজন। নিয়ে এ সম্পর্কে আলােচনা করা হলাে ।
১. দৃষ্টিভঙ্গির
পরিবর্তন :পুরুষ আধিপত্য বেড়েই চলছে। এর মূল কারণ নারীর প্রতি নেতিবাচক
পৃষ্টিঙ্গি পােষণ। নারী ও রাজনীতি অধ্যয়নের ফলে সমাজের এ দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে সম্ভব। এ জন্যই বাংলাদেশের
প্রক্ষিতে নারী বিষয় বুদ্ধিযুত্তিক চর্চা খুবই জরুরি।
২, নারী সচেতনতা বৃদ্ধি : নারীরা তাদের অধিকার ও কর্তব সম্পর্কে পুরােপুরি সচেতন নয়। তাই নারী
অধ্য়নের মাধ্যমে নারীদের অনগ্নাসরতার কারণগুলাে চিহ্নিত করে নারী উন্নয়ন
তুরাস্বিত করা সম্ভব। এ কারণেই নারী অধ্যয়ন খুবই
গুরুত্বপূর্ণ।
৩, নারী ক্ষমতায়ন :নারী ক্ষমতায়ন
নিশ্চিত করতে হলে পরিবার;
সমাজ ও রাষ্ট্রে নারীর ভূমিকা আরাে বাড়াতে
হবে। নারী ক্ষমতায়নের এ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা এবং নারীর ক্ষমতায়নের পথে
প্রতিবন্ধকতাসমূহ
দূর করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে নারী অধ্যয়ন খুবই ভারুরি
৪. নির্যাতন
প্রতিরােধ :অধিকাংশ নারীনির্যাতন হয়ে থাকে যৌতুক সংত্রান্ত কারণে। এছাড়া এসিড
নিক্ষেপ, রাস্তাঘাটে নারীরা ইভটিজিং এর শিকার হয়ে থাকে, ধর্ষিত হয়ে থাকে। নারী নির্যাতনের কারণসমূহ চিহ্নিতকরণ ও সমাধানের উপায়
জানার জন্য নারী
রাজনীতি অধ্যয়ন
আবশ্যক। আর এজন্য বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে নারী অধ্যয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৫, জেন্ডার বৈষম্য দুর করা : নারী সম্পর্কে
সমাজে বিদ্যমান নেতিবাচক দৃষ্টিভলি থেমন- নারী দুর্বল, ইীন, পুরুষের অধস্তন, মেধাহীন
ইত্যাদি নারী-পুরুষের বৈষম্য
বাড়িয়ে দেয়। নারী অধ্যয়নের মাধ্যমে একাডেমিকভাবে জেভার বৈষন্যের কারণ, ক্ষতিকর প্রভাবসমূহ জানা যায়।
৬, ইতিবাচক সামাজিকীকরণ :আমরা লক্ষ্য
করাছি যে নারী উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ও সম্পর্কে শুধু পুরুষই নয় বরং অনেক নারীও নেতিবাচক মনােভাব
পােষণ করে। এর মূল কারণ নেতিবাচক সামাজিকীকরণ। নারী ও রাজনীত অধ্যয়নের ফলে এই নেতিবাচক
সামাজিকীকরণের গ্রভাব দূর করে ইতিবাচক সামাজিকীকরণ করা সম্ভব।
৭. সামাজিক
নিরাপত্তা : বিশেষ করে ধর্ষণ, রাহাজানি, শ্লীলতাহানী, অবাধে রাস্তাঘাটে চলাচল ইত্যাদি বন্ধ
না হলে নারী গৃহের বাইরে যেতে পারে না। তাই নারী অধ্যয়নের মাধ্যমে এ বিষয় বিস্তারিত
জানা যাবে যা নারীর জন্য সামাজিক নিরাপত্তার বেষ্টনী তৈরিতে সহায়তা করবে।
৮.
মাতৃস্বাস্থ্য সুরক্ষা : সুস্থ মা দিতে পারে সুস্থ সন্তানের নিশ্চয়তা আমাদের দেশে
অধিকাংশ নারী বাচ্চা প্রসবকালীন সময় বা মাতৃত্বজনিত জটিলতায় মারা যান। তাই এ অবস্থা থেকে নারীকে সুস্থ ও
স্বাভাবিক জীবনের নিশ্চয়তা দিতে পারে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে নারী ও রাজনীতি অধ্যয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৯. নারী শিক্ষা
নিশ্চিত করা :বাংলাদেশে নারী শিক্ষার পথে ব্যাপক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। যেমন-
পারিবারিক
নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, ধর্মীয় গোঁড়ামি, মৌলবাদ, দারিদ্র্য ইত্যাদি। নারী অধ্যয়নের মাধ্যমে নারী শিক্ষার পথে এসব প্রতিবন্ধকতাসমূহ চিহ্নিত করা যায়
এবং প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে নারী শিক্ষা নিশ্চিত করা যেতে পারে।
১০. নারী
উন্নয়ন ও দাতা সংস্থার ভূমিকা :বাংলাদেশে নারী উন্নয়নের লক্ষ্যে দাতাগােষ্ঠী ও
এনজিও কর্তৃক
গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে এবং বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।
এসব প্রকল্পে নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন হচ্ছে বলে দাবি করা হয়। নারী অধ্যয়নের মাধ্যমে এসব দাবির
সত্যতা যাচাই করা যেতে পারে।
**১. গণমাধ্যমে নারীর রূপায়ণ :
বাংলাদেশের গণমাধ্যমে নারী যেভাবে চিত্রিত হয় তাকে যদি দুটি শব্দে সংক্ষিপ্ত
করতে হয় তবে
শব্দ দুটি হবে : 'প্রান্তিক' ও 'নেতিবাচক'। গণমাধ্যমসংক্রান্ত
বিভিন্ন গবেষণায় নারী উপস্থাপনের যে চিত্র ফুটে উঠে তা হলাে :
১. সংবাদ
মাধ্যমে নারীকে স্থান দেয়া হয় অত্যন্ত কম। মনে করা হয়, পুরুষই ঘটনার সংঘটক, নারী ঘটনার অক্রিয় অংশ।
২. সংবাদ
মাধ্যমে নারী যখন উপস্থিত হয়, তখন
তাকে বেশি পাওয়া যায় দুটি ক্ষেত্রে, অপরাধ ও বিনােদন। অপরাধের ক্ষেত্রে নারী এর শিকার এবং বিনােদনের ক্ষেত্রে সামগ্রী।
৩. সংবাদ
মাধ্যমে নারী বিষয়ক সংবাদের সংখ্যা পরিমাণগত দিক থেকে বৃদ্ধি পেলেও গুণগত দিক
থেকে সংবাদে নারীর যথাযথ মর্যাদা প্রদানের বিষয়টি
এখনাে প্রশ্নসাপেক্ষ রয়ে গেছে। অপরাধ বিষয়ক সংবাদে এখনও অপরাধীর চেয়ে সংশ্লিষ্ট নারীর
ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে অধিকতর তথ্য প্রকাশ, কিংবা ধর্ষণের মতাে অপরাধের ক্ষেত্রেও উত্তেজক বর্ণনা দেয়ার
প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়।
৪. বিনােদন
মাধ্যমে নারীকে কিছু সীমিত,
গৎবাঁধা ভূমিকায়
দেখা যায় যেমন- কন্যা, প্রেয়সী, জায়া ও জননী। নারীর প্রকৃতিকে দেখানাে হয় গৃহমুখী, দুর্বল ও পরনির্ভর।
৫. চলচ্চিত্রে
ধর্ষণওযৌন নিপীড়নের মতো গুরুতর অপরাধকে বিনােদনের উপজীব্য করে
তোলা হয়।
৬. বিজ্ঞাপনে
নারী সরাসরিভাবে পণ্য।
গণমাধ্যমে নারীর
এভাবে উপস্থাপনের সমস্যা হলাে এই যে, নারীর অধস্তন অবস্থানের যারা পরিবর্তন চায়, তারা সবাই উপলব্ধি করে যে, সমাজে জেন্ডার যেভাবে নির্মিত হয়, সে নির্মাণের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আনা
দরকার।
**নারী আন্দোলনের মূল প্রত্যয় :
বর্তমানে বাংলাদেশে নারী আন্দোলনের দুটি প্রত্যয় রয়েছে। যথা :
ক.Uniform code of law.
খ, CEDAW এর প্রতিটি ধারাকে রাষ্ট্ কর্তৃক গ্রহণ
করা।
উপর্যুক্ত
প্রত্যয় ব্যতীত বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের চিহ্নিত যেসব প্রত্যয় রয়েছে সেগুলাে
নিম্নে উপস্থাপন করা হলাে : ১. পারিবারিক নির্যাতন : নারী আন্দোলনের মূল কারণ পারিবারিক নির্যাতন।
নারীরা প্রথম পরিবার থেকে নির্যাতিত হয়। পরিবারেই প্রথমে ছেলেমেয়ের বৈষম্য দেখানাে হয়।
২.শিক্ষাক্ষেত্রে নির্যাতন : নারীনির্যাতনের
দ্বিতীয় স্তর হলাে শিক্ষা ক্ষেত্রে নির্যাতন। ছােট থেকেই ছেলেদের শিক্ষার ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়া হয়, মেয়েদের ব্যাপারে অবহেলা করা হয়। ফলে
মেয়েরা বঞ্চিত হয় উচ্চ শিক্ষা থেকে।
৩ অর্থনৈতিক
ক্ষেত্রে নির্যাতন : সমাজেজ মেয়ে ছেলেদের পাশাপাশি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ
করে কিন্তু তাদের দেয়া হয় না উপযুক্ত মজুরি। ফলে
তারা অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে যাচ্ছে যার কারণে জেগে উঠছে নারী আন্দোলন।
৪.স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যা : নারীরা
স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন সমস্যায় পতিত হয়। আমাদের সমাজে পুরুষদের স্বাস্থ্যের প্রতি যেভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়
নারীদের স্বাস্থ্যের প্রতি সেভাবে গুরুত্ব দেয়া হয় না। ফলে তাদের মধ্যে দেখা
দেয় আন্দোলনের মনােভাব।
উপসংহার :
উপরযুক্ত কারণগুলাে নারী আন্দোলন সৃষ্টি করেছে; যা কোন সভ্য সমাজে কাম্য নয়। তাই উচিত জীবনের সকল ক্ষেত্রে নারী পুরুষ বৈষম্য
দূর করে সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা; যেখানে সবার জন্য সমান অধিকার রক্ষিত থাকবে। কেউ কারাে প্রতি বৈষম্য করতে
পারবে
***বিশ্বের কয়েকটি নারী রাষ্ট্রপ্রধানদের
ভূমিকা ।
১. বেশম খালেলা জিয়ার সেতৃত্ব : স্বামীর
উত্তরাধিকারসূত্রে খালেদা জিয়া রাজনীতিতে আসেন। স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়ার মৃত্যুতে ১৯৮২ সালে এক
সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে রাজনীতিতে সম্পূর্ণ অনভিঙ্গ অবস্থায় খালেদা জিয়া BNP এর হাল ধরেন। তিনি দীর্থ নয় বছর দ্বৈরাচারী সরকারের
বিরুদ্ধে তায়
দলসহ সাত দলের জোটের নেতৃত্ব দেন। খালেদা জিয়ার পক্ষে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক বিজয় ছিল আপােশহীন সংগ্রামের মাধ্যমে এরশাদ বিরােধী দলীয় আন্দোলনকে গণঅভ্যুথানে পরিণত করার বলিষ্ঠ ভুমিকা পালন। এটা অবশেষে এরশাদ সরকারের পতন ঘটায় এবং গণতান্ত্রিক নির্বাচনের পথ প্রশস্ত করে তার দলকে
ক্ষমতায় আনে।
২. কোরাজন
অ্যাকিনোর নেতৃত্ব : ফিলিপাইনের গ্রথম মহিলা
শ্রেসিডেন্ট কোরাজন আকিনাের ভূমিকা ছিল অসামান্য। তিনি ক্ষমতায় আসেন অগণতান্ত্রিক সরকারের দীর্ঘ স্বৈরাচারী
শাসন ও জানগণের ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুথানের মাধ্যমে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লক্ষে
ফিলিপাইনের সংবিধান ব্যাপক সংশােধনের মাধ্যমে প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে মানবাধিকার, শিক্ষা ও সংরক্ষণের উপর বিশেষ
গুরুত্বারােপ করেন।
৩. শ্রীমা্ডো বন্দরনায়েকের নেতৃত্ব : শ্রীমাভো
বন্দরনায়েকের স্বামীর মৃত্যুর পর ১৯৬০ সালে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্রী নির্বাচিত হওয়ার পর বহু টানাপড়েনের
সম্মুখীন হন।তিনি কঠোর হস্তে মার্কসবাদী
বিদ্রোহীদের দমন করেন। শ্ৰীলঙ্কার ইতিহাসে তিনিই প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী। কেবল তাই নয়, তিনি বিশ্বের প্রথম মহিলা
প্রধানমন্ত্রী।
৪. চন্দ্রিকা
কুমারাতুন্গার নেতৃত্ব : শ্রীমা্তো বন্দরনায়েকের কন্যা শ্রীলঙ্কার সাবেক
প্রেসিডেন্ট চন্দ্রিকা কুমারাতুলগা। যদিও তিনি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই গৃহযুদ্ধ ও অভ্যন্তরীণ শান্তি
স্থাপনের প্রচেষ্টায় পর্যুদন্ত, তা
সত্ত্বেও দেশের রাষ্র সংকটকালে
বৃহত্তর জনগণ তাকেই পুনর্বার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করেছে।
৫. মেঘবতী
সুকর্ণ পুত্রীর নেতৃত্ব : ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রদূত ও জাতীয়তাবাদের জনিকামেঘবর্তী
সুকর্ণ পুত্রী। ইন্দোনেশিয়ার মেঘवর্তী সুকর্ণ পুত্রী দীর্ঘকাল সামরিক শাসনের
বিরুদ্ধে সংমাম করে অবশেষেগণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রষ্ট্রপতি হতে পেরেছেন।
৬, ইন্দিয়া গান্ধীর নেতৃত্ব : দক্ষিণ এশিয়ার নারী
নেত্রীদের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘকাল ক্ষমতায় থেকেছেন শ্রীলঙ্কার শ্ৰীমাডাে বন্দরনায়েকে ও ভারতের
ইন্দিরা গাদ্ধী। অভ্যন্তরীণ শাসনেও ইন্দিরা গান্ধী তাঁর
পূর্বসুরি পুরুষ নেতাদের তুলনায় অধিক দক্ষতা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন।
৭. গোল্ডামেয়ারের নেতৃত্ব : ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী
গােল্ডামেয়ার রাষ্ট্র পরিচালনায় অসীম দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।তিনি ইসরাইল রাষ্ট্রকে মধ্যপ্রাচ্যের
আধুনিক ও শিল্পোন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করেন। তাই নারীদের
রাষ্ট্রীয় অংশগ্রহণে মধ্যপ্রাচ্যের মডেল হিসেবে তিনি ভূমিকা পালন করেন।
৮, মার্গারেট থ্যাচারের নেতৃত্ব : কেন্ট প্রদেশের ডাটফোর্টের রক্ষণশীল দলের
স্থানীয় শাখার সভানেত্রী হিসেবে তিনি ১৯৪৯ সালে মনােনিত হন। লন্ডনের উল মধ্যবিত্ত অধুখ্যিত অঞ্চলের নির্বাচনী
এলাকা থেকে ১৯৫৯ সালে তিনি পার্লামেন্ট নির্বাচনে অংশ নেন এবং বিপুল ভোেটে বিজয় লাত করেন। রক্ষণশীল সল ১৯৭০ সালে
আবার ক্ষমতায় এলে মার্গারেট থ্যাচার শিক্ষা ও বিজ্ঞান বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে
মনােনয়ন লাভ করেন। ১৯৭৫ সালে সলের নেতা নির্বাচনের ভােটাভুটিতে মার্গারেট থ্যাচার
এডওয়ার্ড হিথকে পরাজিত করে রক্ষণশীনদলের সভানেত্রী হিসেবে মনােনীত হন।
**যৌতুক
কী: যৌতুক একটি
ঘৃণ্য সামাজিক প্রথা। অতি প্রাচীনকাল থেকে এ প্রথা মেনে চলা হচ্ছে। কখনাে নারী কোন পুরুষকে বিবাহ করার জন্য পণ
পেতাে, আবার কখনাে কোন পুরুষ নারীকে বিবাহ করার জন্য পণ বা
টাকা বা অন্য কোন সম্পদ গ্রহণ করে। এ প্রথাই
সমাজে যৌতুক প্রথা নামে অভিহিত।
**যৌতুকের কারণ : যদিও সচেতনতা বৃদ্ধির
সাথে সাথে যৌতুক ব্যবস্থা ভেঙ্গে ফেলার জন্য নানাবিধ আইন প্রণয়ন করা হয়েছে তবুও এ প্রথা থেকে
সমাজকে মুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। নিয়নে এর কারণগুলাে তুলে ধরা হলাে :
১. দারিদ্র :
আর্থিক ও মানসিক দারিদ্র্ আমাদের সমাজে যৌতুক প্রথার একটি বড় কারণ। দরিদ্র
পরিবারগুলাে সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার
করতে বিবাহকালে যৌতুক দাবি ও গ্রহণ করে।
২. বেকারত্ব :
কর্ম ও কর্মক্ষেত্রের অভাব হেতু পুরুষেরা বিবাহ কালে যৌতুক দাবি করে যাতে সে নিজের
মতাে করে কোন কর্মকান্ড বা ব্যবসায় বাণিজ্য করে
উপার্জন বৃদ্ধি করতে পারে।
৩. ছেলেদেরকে
অধিকমূল্যবান, মনে করা : আমাদের সমাজে ছেলেদেরকে অধিক
মূল্যবান মনে করা হয়। পিতামাতা বিবাহকালে ছেলেকে বড়াে করতে যা ব্যয় করেছেন তা আদায় করে
নিতে চান। ফলে দেখা যায় যে ছেলে যত শিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত তার যৌতুকের দাবিও তত বেশি।
৪. অশিক্ষা :
শিক্ষা-দীক্ষার স্বল্পতা যৌতুক প্রথা টিকে থাকার অন্যতম কারণ। যে প্রথাটি আইনে
নিষিদ্ধ, ধর্মীয়ভাবে বর্জনীয়, সামাজিকভাবে ঘৃণ্য সে প্রথা এড়িয়ে
চলার জন্য যে শিক্ষাদীক্ষা থাকা দরকার তা আমাদের সমাজে নেই।
৫. অন্যান্য :
বিবাহের ব্যয় মেটানাে, আপ্যায়ন খরচ, নতুন ঘর বা আবাসন তৈরি, ব্যবসা বা চাকরি লাভের জন্য ঘুস বা অন্যান্য বিষয় মােকাবিলা করার
ক্ষেত্রে যৌতুক একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
**ইউনিয়ন পরিষদে নারীর অংশগ্রহণ : নারীর
ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ইউনিয়ন পরিষদে যথেষ্ট পরিমাণ নারী প্রতিনিধি না থাকলেও বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদে
নারী প্রতিনিধিত্ব একেবারে কম নয়। নিম্নের ছকের মাধ্যমে তা সহজেই ফুটে উঠে ।
|
নির্বাচিত
বছর |
ইউ.
পির সংখ্যা |
মহিলা
প্রার্থী |
মহিলা
চেয়ারপারসন |
|
১৯৭৩ |
৪,৩৫২ |
- |
১ |
|
১৯৭৭ |
৪৩৫২ |
- |
৪ |
|
১৯৮৪ |
৪৪০০ |
- |
৪+২ |
|
১৯৮৮ |
৪৪০১ |
৭৯ |
১ |
|
১৯৯৩ |
৪৪৫০ |
১১৫ |
১৩+১১=২৪ |
|
১৯৯৭ |
৪৪৭৪ |
১০২ |
২০ |
|
২০০৩ |
৪৫২৮ |
৩২ |
২২ |
উৎস : নারী ও
উন্নয়ন প্রাসঙ্গিক পরিসংখ্যান ও ডঃ সৈয়দা রওশন কবিরের প্রবন্ধ, দৈনিক জনকণ্ঠ ৭-১১-২০০৩ ইং
উপর্যুক্ত ছক
পর্যাবেক্ষণের মাধ্যমে আমরা দেখতে পাই তৃণমূল পর্যায়ে সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে নারীদের যে অংশগ্রহণ এবং নেতৃত্ব তাতে নারীর ক্ষমতায়নের পথে আমরা অনেকটা এগিয়ে
গেছি, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে ন। বিভিন্ন প্রতিকুলতার কারণে ৯৭ সালের
তুলনায় ২০০১ সালের নি্বাচনে নারীদের অংশগ্রহণ কিছুটা কমলেও একথা বলা যায়, যথার্থ ক্ষমতায়নে সম্পূর্ণ সফল না হলেও অগ্রগতি নিঃসন্দেহে হচ্ছে।
** সামাজিক ও শিক্ষা ক্ষেত্রে বাংলাদেশে নারীর অবস্থান কীরূপ?
শিক্ষাক্ষেত্রে নারীর অবস্থান :
বাংলাদেশের সংবিধানে ১৭ (ক) অনুচ্ছেদ-এ রষ্ট্র পরিকল্পনার প্রাথমিক নীতি হিসেবে একটি অভিন্ন, গণমুখী এবং সর্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থার
কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ শিক্ষা লাভের অধিকারকে মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি
দেয়া হয়েছে। স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত ধারাবাহিক উদ্যোগ ও বর্তমান সরকারকে দৃঢ় পদক্ষেপের ফলে নিঃসন্দেহে
বাংলাদেশের মােট জনগােষ্ঠীর
বিপরীতে শিক্ষিতের হার যথেষ্ট পেলেও সার্বিক বিচারে বিশেষত গ্রামঞ্চলের মেয়েরা বিভিন্ন
আর্থসামাজিক কারণে পড়াশােনা চালিয়ে যেতে পারছে না। ফলে ড্রপ আউট একটি বড়চ্যালেঞ্চ।
এটি ছাড়াও দক্ষ মানব সম্পদ হয়ে উঠার পথে নারীদের রয়েছে অনেক চ্যালেঞ্জ।
এটি ছাড়াও দক্ষ
মানব সম্পদ হয়ে উঠার পথে নারীদের রয়েছে অনেক প্রতিবন্ধকতা। এ বাস্তবতাকে আমাদের জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনার ক্ষেত্রে
একটি প্রধান অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।প্রাথমিকও মাধ্যমিক শিক্ষায়
মেয়েদের ভর্তির হার বাড়লেও মাধ্যমিক থেকে উচ্চ শিক্ষার পথ পাড়ি দেয়ার আগেই ঝরে
পড়েছে।অনেক মেয়ে। এর একটি অন্যতম কারণ, কেবল শিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধিকেই একমাত্র লক্ষ্য হিসেবে
দেখা হচ্ছে এবং এর জন্য প্রয়ােজনীয় ইতিবাচক
পরিবেশ তৈরি এবং পরিবার সমাজ, রাষ্ট্র
ও প্রতিষ্ঠানকে নারী বান্ধব করার জন্য যথাযথ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না।
*সামাজিক জীবনেও নারীর সামাজিক অবস্থান:
১. পুরুষতান্ত্রিক মতাদর্শ: পরিবারের নেতৃত্ব
দেয়ার মতাে সক্ষম ও বয়স্ক পুরুষের অনুপস্থিতিতেই কোন নারী পরিবার প্রধানের পদ অলভ্ভৃত করে। কিন্তু এরপ
মহিলা প্রধান পরিবারে পরিবার প্রধানের ন্ুনতম হয় এবং সামাজিক জীবনেও এদের জুমিকা নগণ্য।
২, সারীর প্রতি নেতিবাচক ধারণা ; আমাদের সমাজে নারীদের প্রতি কয়েকটি
নেতিবাচক ধারণা পােষণ করে। যেমন -নারীদের হওয়া উচিত নরম, কোমল, কমনীয়, সহনশীল, স্বামী ওপরিবারের ইচ্ছার কাছে সমর্পিত ও
নিবেদিত।নারীরা শারীরিকভাবে দুর্বল ও পুরুষের চেয়ে মেধা, মনন ও হর্মদক্ষতায় কম ক্ষমতাসম্পন্ন ।এসব নেতিবাচক ধারণার কারণে আমাদের নশের নারীদের নিচু মর্যাদা স্তরে বসানাে হয়।
৩, পুত্র-সন্তানের আকাফা :সমাজে
পুরুষের ভূমিকাই
যেহেতু মুখ্য তাই এখানে পুত্র সন্তানের আকাঙ্খাটাই
তীব্র। পুত্র সন্তান
জন্মগ্রহণ করলে তাকে আযান দিয়ে স্বাগত জানানাে হয়। কিন্তু মেয়ে সন্তানের প্রতি
বৈষম্যমূলক আচরণ করা
হয়।
৪. লিঙ্গভিত্তিক
শ্রম বিভাজন : পুরুষেরা পাবলিক গন্ডিতে কাজ করতে হয় বলে তাদের কাজ
অর্থের সাথে
সম্পর্কিত। ফলে নারীদের সামাজিক সম্পর্কের পরিধি সংকীর্ণ হয়ে পড়ে এবং অন্যদিকে
পুরুষের সামাজিক সম্পর্কের
পরিধি বিস্তৃত হয়। লিঙ্গভিত্তিক শ্রম বিভাজন নারীর সামাজিক মর্যাদা ক্ষুপ্ন করে
পুরুষের মর্যাদা বৃদ্ধি করে।
৫. শারীরিক
পার্থক্য : সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শৈশবকাল থেকেই নারীদের দূর্বল ভাবতে শিখানাে হয়। ফলে নারীরা জীবনের
শুরু থেকেই মানসিকভাবে পুরুষের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। আর এ নির্ভরশীলতা থেকেই সমাজে নারীর অধস্তনতার
জন্ম হয়।
৬, বৈবাহিক সম্পর্ক:
বৈবাহিক জীবনে
নারীর ইচ্ছা অনিচ্ছার কোনাে মূল্য থাকে না। পিতার সংসারে থাকাকালীন সময়ে নারী
হওয়ার করণে যে মানসিক যন্ত্রণার সম্মুখীন হতে
হয়, স্বামীর সংসারে গিয়েও তাকে একই
যন্ত্রণা পােহাতে হয়। তাই বলা যায়, নারীর পারিবারিক তথা সামাজিক জীবন খুবই
দুঃসহনীয় ও করুণ।
**বাংলাদেশের নারীদের আইনগত অধিকারগুলাে : বাংলাদেশের নারীর আইনগত
অধিকারগুলাে ৪টি
ধর্মকে কেন্দ্র
করে পরিচালিত হয়। নিম্নে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান নারীর আইনগত
অধিকারসমূহ তুলে ধরা হলাে :
মুসলিম আইনে নারীর অধিকারসমূহ : ক. বিবাহ : মুসলিম আইন অনুসারে বিবাহ
হচ্ছে চুক্তি বিশেষ। যাতে স্বামী ও স্ত্রী উভয়ই সুনির্দিষ্ট কতিপয় নিয়মকানুনের সমষ্টি।
খ. ভরণপােষণ :
মুসলিম আইনে স্ত্রীর ভরণপােষণের উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। স্ত্রীর ভরণপােষণ করতে
স্বামী বাধ্য।
গ. বহুবিবাহ :
১৯৬১ সলের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ এর সংশােধনী অনুযায়ী প্রথম স্ত্রীর
অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে শাসন্তিযােগ্য অপরাধ।
ঘ.
বিবাহ-বিচ্ছেদ : মুসলিম আইনে বিবাহ একটি চুক্তি। এ চুক্তি দু'ভাবে ভঙ্গ করা যায়। স্বামী-স্ত্রী
মধ্যকার মনােমালিন্য বা অন্য কোনাে সংগত কারণে
উভয়ের বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটবার অধিকার রয়েছে।
ঙ.
উত্তরাধিকার :
ইসলামি আইনানুসারে একজন নারী সম্পত্তির উত্তরাধিকার হিসেবে একজন পুরুষের অর্ধেক
লাভ করে।
হিন্দু আইনে নারীর অধিকারসমূহ : ক.
বিবাহ : হিন্দু আইনে বিবাহ একটি পবিত্র ধর্মীয় বন্ধন। সকল বর্ণের হিন্দুদের মধ্যে
মূলত ব্রাহ্ম বিবাহই সর্বাধিক প্রচলিত।
তবে নারীদের বিবাহ হচ্ছে নিয়তি।
খ. রেজিস্ট্রেশন : বাংলাদেশে মুসলিম বিবাহ রেজিস্ট্রশন আইনে
নারীর অংশীদারিত্ব থাকলেও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য
কখনাে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন আইন প্রণীত হয়নি।
গ, বিবাহ
বিচ্ছেদ : হিন্দু আইনে বিবাহ বিচ্ছেদ প্রচলন নেই।
ঘ, বহুবিবাহ ও
বিধবা বিবাহ : হিন্দু আইনানুযায়ী স্বামী বহু বিবাহ করতে পারে, কিন্তু
স্ত্রীর জন্য মৃত্যু পর্যন্ত বিয়ে একটাই।
ঙ. উত্তরাধিকার : বাংলাদেশে প্রচলিত হিন্দু উত্তরাধিকার আইন খবুই
বৈষম্যমূলক। বাংলাদেশে হিন্দু আইন আছে সনাতন পদ্ধতিতে যে আইনের সংস্কার আজ পর্যন্ত হয়নি।
খ্রিস্টান আইনে নারীর অধিকারসমূহ : ক. বিবাহ : খ্রিস্টান আইনে বিবাহ একটি
পবিত্র ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান এবং একটি চুক্তি বিশেষ।
খ. বহবিবাহ ও
বিবাহ বিচ্ছেদ : খ্রিস্টান আইনে বহু বিবাহ একেবারেই নিষিদ্ধ। এখানে প্রীর বর্তমানে
স্বামী বা স্বামীর বর্তমানে স্ত্রী কেউ পুনঃ
বিবাহ করতে পারবে না।
গ, ভরণপােষণ : খ্রিস্টান আইনে স্ত্রীর
ভরণপােষণের দায়িত্ব স্বামীর এবং এটি স্ত্রীর অধিকার।
ঘ, উত্তরাধিকার আইন : ১৯২৫ সালের 'সাক্সেশন আইন' এর দ্বারা খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের
সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিয়ন্ত্রিত হয়।
বৌদ্ধ আইনে
নার়ীর অধিকারসমূহ : ক, বিবাহ : বৌদ্ধধর্ম মতে বিবাহ হলাে
পুরুষ ও নারীর মধ্যে একটা ধর্মীয় আচার বা সংস্কার যার ভিত্তিতে উভয়ের বন্ধন সামাজিক স্বীকৃতি পায়।
খ, বহু বিবাহ ও বিচ্ছেদ : বৌদ্ধধর্মে বহু
বিবাহের কোনাে রীতি প্রচলিত নেই। তাছাড়া বিবাহ বিচ্ছেদেরও কোনাে প্রথাগত নিয়ম নেই।
গ, ভরণপােষণ : বৌদ্ধধর্মে স্ত্রীকে
স্বামীর ভরণপােষণ দেয়ার কোন প্রথা নেই। তাই দেখা যাচ্ছে বৌদ্ধ নারী
ভরণপােষণ
পাবার অধিকার থেকে বঞ্চিত
ঘ, উত্তরাধিকার : সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার
হিসেবে একজন বৌদ্ধ নারী চরম বৈষম্যের শিকার।
***অথবা, নারীর ক্ষমতায়নে কৌশলগত অবস্থানের বিবরণ দাও ।
নারী আজ নানাভাবে নির্যাতিত, সময়ের প্রয়ােজনে নারী অধিকারের
ব্যাপারে সারা বিশ্ব আজ সোচ্চার। বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। যখন থেকে তারা আর্থসামাজিক উন্নয়নের
ধারায় নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করতে পেরেছে, তখন থেকেই মূলত অধিকারবােধ সম্পর্কে
সচেতন হয়েছে। আর অধিকার- বোধের এ সচেতনতা থেকেই মূলত ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গটি জোরালােভাবে দেখা
দিয়েছে।
নারীর ক্ষমতায়নে কৌশলগত অবস্থান : সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মহিলাদের
অংশগ্রহণের সুযােগ এবং ক্ষমতায়নের জন্য সমাজের কৌশলগত অবস্থানগুলাে নিম্নে আলােচনা করা হলো:
১.রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন : বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭, ২৮, ২, ৩, ৪), ২৯ (১,২), এবং ৬৫ (৩) নং ধারায় নারী-পুরুষের
মধ্যে কোানাে বৈষমা রাখা হয়নি। তারপরও একটা বিষয় লক্ষণীয় যে, দুটি প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রধান নাবী হওয়া
সতেও রাজনৈতিক অঙ্গনে
নারী শূন্যতা লক্ষণীয়। এ সমল্যা সমাধানের জন্য যােগ্যতার ভিত্তিতে রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ, নেতৃত্ব প্রদানের সামাজিক পরিবেশ, ভােট এলানে নিজস্ব মতামত এবং উন্নয়নমূলক
কাজে নারীর অংশগ্রহণই একমাত্র পথ।
২, অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন :আন্তর্জাতিক শ্রম
আইনের যথাযথ প্রয়ােগের অভাব নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করেছে।
এক্ষেত্রে নারীকে অর্থ নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার, সম্পত্তিতে
সমান
অংশীদারিত্ব, সামাজিক নিরাপত্া এবং আন্তর্জাতিক শ্রম
আইনের যথাযথ প্রয়ােগই উপর্যুক্ত সমস্যার সমাধান করে নারীকে অর্থনৈতিক ক্ষমতা প্রদান করতে
পারে।
৩, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে
ক্ষমতায়ন : নাইরােবি ফর লুকিং স্ট্র্যাটেজি (NFLS) সম্মলনে শিক্ষাকে নারীদের সামাজিক ও পেশাগত অবস্থানের পূর্ণ সংবর্ধন ও উন্নয়নের ডিত্তি হিসেবে
চিহ্নিত্র করা হয়েছে। NFLS
নারী
শিক্ষাব্যবস্থা
সংশােধন এবং
উন্নয়নশীল বিশ্বের বাস্তবতার সাথে সংগতিপূর্ণ করে তােলার লক্ষ্যে বিশেষ ব্যবস্থা
অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে।
এর মূল কারণ ছিল জাতীয় সরকার, আন্তর্জাতিক
সংস্থাসমূহ এবং এনজিওদের বিশেষ তৎপরতা। NFLS এর সাথে সংগতি
রেখে বাংলাদেশ সরকার নারী শিক্ষাক্ষেত্রে কতকগুলাে নীতিনির্ধারণ করলে ১৯৯৩ সালে শিক্ষার্থীর
তালিকাভুক্ত ছিল ৭৯%, যা ৮১ সালে ছিল ৪০% (প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষা সাক্ষরতা)। নারী
শিক্ষালাজের প্রধান অন্তরায় হচ্ছে অর্থনৈতিক দুরবস্থা, পুরুষ
সম্ভানের অগ্রাধিকার, বৈষম্ামূলক শিক্ষাব্যবস্থা ইত্যাদি। এ
সমস্যা সমাধানের মাধ্যমেই নারীকে শিক্ষাক্ষেত্রে অধিক সুযােগ দিয়ে তার क্ষমতায়ন বৃদ্ধি করা যাবে।
মূল্যায়ন : নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়ে উপর্যুক্ত আলােচনার মূল্যায়নে
একথা প্রমাণিত যে, এদেশে নারীদের ক্ষমতায়ন এখনাে নাজুক অবস্থায়। কিন্তু তারপরও
কথা হচ্ছে ক্ষমতায়নের জন্য যে বিষয়টি জরুরি তা হচ্ছে শিক্ষা এবং সচেতনতা। এ দুটি ব্যাপারে আমরা অতীতের তুলনায়
অনেক এগিয়েছি। এর প্রমাণ দিনাজাপুরের কিশােরী ইয়াছমিনের ধর্ষণ এবং হত্যাকা্ড । বাংলাদেশে এর পূর্বে কোনাে মেয়েকে
কেন্দ্র করে এত বেশি বিতর্ক আর দেখা যায়নি। সাপ্তাহিক বিচিত্রা সংখ্যা ১৭, ১৮
সেপ্টেম্বর ১৯৯৫
এর এক রিপাের্টে বলা হয়েছে চতুর্থ বিশ্ব নারী সম্মেলন প্রসঙ্গে
বাংলাদেশ সরকারের এক প্রতিবেদনে বলা হয় যে, (বিভিন্ন পর্যায়ে ক্ষমতা ও সিদ্ধান্ত
এহণ প্রক্রিয়া) কয়েক দশকে বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় মহিলাদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ হতে জাতীয়
সংসদ পর্যন্ত তাদের জন্য সংরক্ষিত আসন জয়েছে। ২০০১ সালে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনের মেয়াদ শেষ হয়। তবে
বেসরকারি এক প্রতিবেদনে দেখানাে হয় বাংলাদেশের নির্বাচনি রাজনীতিতে নরীর অংশগ্রহণের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে।
কিন্তু বাংলাদেশ সরকার অতি সম্প্রতি এই প্রথম একজন মহিলা রাষ্ট্রদূত
নিযুক্ত করেছেন । এসব প্রক্রিয়া যতই ক্ষুত্র হােক না
কেন, এটা একটি শুভ হঙ্গিত। এসব কিছু অবশাই
নারীর উন্নতি এবং অগ্রযাত্রার লক্ষণ ।
**ক্ষমতায়ন : ক্ষমতায়ন উন্নয়নের একটি
গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ৮০'র দশকের মাঝামাঝি থেকে Empowerment শব্দটি একটি জনপ্রিয় পরিভাষা হয়ে উঠে
এবং তা কল্যাণ, উন্নয়ন স্থলাভিষিক্ত হয়। সামাজিক অসমতা দূর
করে নিপীড়িত বঞ্চিতদের অধস্তনতা থেকে উত্তরণের প্রচেষ্টাই হলো ক্ষমতায়ন।
নারীর ক্ষমতায়ন : সাধারণত উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে নারীকে সরাসরি
অংশগ্রহণ করানাের প্রক্রিয়াকে নারীর ক্ষমতায়ন বলা হয়। আবহমান কাল ধরে নারী-পুরুষের মধ্যে বিরাজমান
বৈষম্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুটি দিক হলাে, প্রথমত, নারী ও পুরুষের মধ্যে ভিন্নতা। দ্বিতীয়ত, পুরুষের তুলনায় নারীর সীমিত অধিকার।
এসব বৈষম্যের কারণে নারীরা
আজ সামাজিক, অর্থনৈতিক রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে পুরুষের
তুলনায় অনেক পিছিয়ে আছে। যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নারী ও পুরুষের মধ্যে বিরাজমান সকল অসমতা ও
বৈষম্য দূর করে নারীকে পুরুষের সমমর্যাদায় সমমানে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব তাকেই নারীর ক্ষমতায়ন বলা হয়।
**বিশ্ব নারী দশকের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য :
বিশ্ব নারী দশকের ঘােষণা করে জাতিসংঘ। জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালে মেক্সিকোতে প্রথম বিশ্ব নারী সম্মেলনের
আয়ােজন করে। যার মূল লক্ষ্য ছিল নারী সমাজের অগ্রগতির উপায় সম্পর্কে আলােচনা। ১৯৭৫ সালে বিশ্ব নারীবর্ষের
সম্মেলনে ১৯৭৬-১৯৮৫ সাল পর্যন্ত সময় কালকে নারী দশক হিসাবে ঘােষণা করা হয়। নিম্নে নারী দশকের লক্ষ্য এবং
উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলােচনা করা হলাে :
১.
সাম্য প্রতিষ্ঠা : বিশ্ব নারী দশকের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বব্যাপী
নারী ও পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। অর্থাৎ নারীকে পুরুষের সমান মর্যাদা
দেওয়া এবং মানুষ হিসাবে সমান অধিকার। সুযােগ-সুবিধা ও সমতার নিশ্চয়তা প্রতিষ্ঠা করা।
২.
উন্নয়ন সাধন : উন্নয়ন ছাড়া কোন সমাজ বা গােষ্ঠির প্রকৃত উন্নয়ন প্রতিষ্ঠা করা
সম্ভব নয়। তাই নারী দশকের মূল লক্ষ্য ছিল নারীর উন্নতি ও ক্ষমতায়নের
জন্য নারীর উন্নয়ন সাধন করা।
৩.
বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা : নারীর বসবাসের বিশ্বকে আরাে বেশি সুন্দর, নিরাপদ এবং কণ্টকমুক্ত করার জন্য নারী দশকের মূল লক্ষ্য ছিল বিশ্ব
ব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।
৪.
নারীর প্রকৃত অধিকার প্রতিষ্ঠা করা : বিশ্ব নারী সম্মেলনের অন্যতম একটি উদ্দেশ্য
ছিল নারী সমাজের প্রকৃত অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। অধিকার ছাড়া কখনই মানুষ তার মেধা এবং
ব্যক্তিত্বের বিকাশ সাধন সম্ভব নয়। তাই নারী উন্নয়নের জন্য নারী দশকের মূল লক্ষ্য
ছিল নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।
৫.
শিক্ষা ও সচেতনতার বিকাশ : শিক্ষা এবং সচেতনতা ছাড়া কখনই মানুষ তার অধিকার ও কর্তব্য
সম্পর্কে সচেতন হতে পারে না। তাই নারী দশকের উদ্দেশ্য ছিল নারী সমাজের মধ্যে
প্রকৃত শিক্ষার বিকাশের মধ্যে দিয়ে সচেতনতার প্রসার ঘটানাে।
৬.
বিবাহ ও সন্তান ধারণে স্বাধীনতা প্রদান : নারী দশকের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের মধ্যে
অন্যতম ছিল নারীর বিবাহ ও সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব মতামতের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা
করা।
**বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণের প্রকৃতি : নিয়ে বাংলাদেশের
রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণের প্রকৃতি সম্পর্কে আলােচনা করা হলাে :
১. ইউনিয়ন
পরিষদ : ইউনিয়ন পরিষদ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু। এখান থেকেই
জাতীয় রাজনীতির অংশগ্রহণ। তবে ইউনিয়ন পরিষদে
নারীদের অবস্থান প্রান্তিক। এখানে পুরুষ সদস্যদের কর্তৃত্ব বেশি। যদিও নারীদের জন্য সংরক্ষিত ৩টি আসন রয়েছে।
কেননা সাধারণ আসনে নারীদের বিজয়ী হওয়া খুবই কষ্টকর।
২. পৌরসভা :
পৌরসভায়ও নারীদের অংশগ্রহণ সীমিত তার জন্া এখানে আছে সংরক্ষিত ৩টি আসন। কেননা সাধারণ আসনে বিজয়ী হওয়া তার জন্য
দুঃসাধ্য।
৩, সিটি কর্পোরেশন : বাংলাদেশে ১০টি সিটি
কপােরেশন আছে। ১০ টির মধ্যে ১টি চেয়ারম্যান, একজন নারী। সাধারণ আসনে কোনাে নারী নেই। সংরক্ষিত আসনে কয়েকজন নারী আছে। এখানে নারীদের অংশগ্রহণ সীমিত।
৪. রাজনৈতিক দল
: বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন রাজনৈতিক দলের ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হয়। রাজনৈতিক দলে নারীদের অংশগ্রহণ সীমিত। দলের নীতি
নির্ধারণী উচ্চ পর্যায়ে নারী রাজনীতিবিদদের অংশগ্রহণ নামমাত্র। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলাের উচ্চ
পর্যায়ে নীতি নির্ধারণী কাঠামােয় নারীদের অংশগ্রহণের হার মাত্র ৫.১ শতাংশ।
৫. জাতীয় সংসদ
: বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে নারীদের অংশগ্রহণ অপ্রতুল। সাধারণ আসনে নারীদের সংখ্যা খুবই কম। সংরক্ষিত আসনে বর্তমানে
নারীদের সংখ্যা ৫০। সাধারণ আসনে নারী সাংসদ সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য অপেক্ষা বেশি সম্মান ও মর্যাদা ভােগ
করে। ১৯৭৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্র্যন্ত সংসদ নির্বাচনে দেখা গেছে, ক্রমশ নারী প্রার্থীদের সংখ্যা বাড়ছে।
৬, মত্রিসভা বা ক্যাবিনেটে নারী :
বাংলাদেশে ১৯৭২ - ৯০ পর্যন্ত মন্ত্রিপরিষদ বা ক্যাবিনেটে নারীদের সংখ্যা ছিল নগণ্য। ১৯৯১ সাল হতে বর্তমান পর্যন্ত
নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নারী বলে রাজনৈতিক ব্যবস্থাপায় নারীর প্রাধান্য
প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
৭. স্পিকার হিসেবে নারী : ড. শিরিন শারমন চোধুরী বাংলাদেশের প্রথম মহিলা
স্পিকার হিসেবে নির্বাচিত হন। এটি একটি সম্মানজনক ও নির্দলীয় পদ। একজন স্পিকা সকলের নিকট শ্রদ্ধার
পাত্র।
৮. রাষ্ট্র্রধান হিসেবে : ১৯৭২ সাল হতে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে কোনাে নারী
রষ্ট্রপ্রধান বা প্রেসিডেশ্ট হতে পারেনি। অথচ তারা জনসংখ্যার প্রায় অধেক। এটা
নারাদের নিলি্ততা ও জেন্ডার বৈষম্যের কারণ ।
৯. সংসদীয় নেতা হিসেবে নারী : বাংলাদেশে ১৯৯১ ইতে ব্তমান পর্যন্ত দু
জন নারী সংসদ নেতা হিসেবে বলিষ্ঠ ভুমিকা পালন করে এসেছেন। তারা হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবক
প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তাদের মতাে যােগ্যতাসম্পন্ন নেতৃত্ব এখনাে কেউ দিতে পারেনি। এটা নারীদের
জন্য গর্বের বিষয়।
১০. সংসদীয় কমিটিতে নারী : বাংলাদেশের
সংসদ বিিন্ন কামাচির মাধ্যমে কাজ করে। এসব কমিটিতে পুরুষের
সংখ্যা বেশি।
এখানে পালাক্রমে নারীদের যুক্ত করা হয়। ৩বে এখানে বেষম্য রয়েছে। কারণ কমিটিতে
সংরক্ষিত আসনে
নির্বাচিত
নারীদের নিযুক্ত করা হয় না। এটা নারীদের প্রতি বেষম্য করা হয়। তবে নারীদের
সংসদীয় কমিটিতে তেমন কোনাে
গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়ােগ করা হয় না।.
**নারী ও রাজনীতি : নারী ও রাজনীতি হচ্ছে সে
শাস্ত্র বা জ্ঞানের বিশেষ শাখা যা মানুষ তথা নারী ও পুরুষ এবং নারী ও পুরুষকে নিয়ে গঠিত সমাজকে বিশ্লেষণ
করে, নারীর ভােটাধিকার ও রাজনৈতিক ক্ষমতা
এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর ভূমিকা নির্ধারণ করে। এটি নারীর
প্রতি বৈষম্য ও সমাজে নারীর অধস্তন অবস্থাকে চিহ্নিত করে, বৈষম্য ও অধস্তন অবস্থার কারণ নির্ণয় করে এরং
নারী-পুরুষের মধ্যে সুস্থ ও সফল সমন্বয় ও সহযােগিতার মাধ্যমে সমাজের অগ্রযাত্রাকে সুষ্ঠ, শান্তিপূর্ণ ও সমতাভিত্তিক করার উপায় ও
কর্মপন্থা নির্দেশ করে। নারীর জীবন ও কর্মধারা, তার মন ও মানসিকতা, তার চিন্তাভাবনা এবং সমাজজীবনে, রাষ্ট্র ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, শিল্প সংস্কৃতিতে নারীর স্থান ও ভূমিকা
নারী ও রাজনীতির আলােচনার অন্তর্ভুক্ত। মূলত নারী ও রাজনীতি হচ্ছে নারীকে নির্যাতনের
শৃঙ্খলমুক্ত করে নারী ও পুরুষের সমন্বয়ে সমতাভিত্তিক সমাজ গঠন ও উন্নয়নে
সমঅংশীদারিত্বে উদ্বুদ্ধ করা।
**পিতৃতন্ত্রই নারীর অধস্তনতার কারণ : আমাদের
সমাজব্যবস্থায় নারীরা যে সকল কারণে পিছিয়ে আছে তন্মধ্যে পিতৃতন্ত্র প্রধান কারণ। নিম্নে নারীর অধস্তনতার কারণ হিসেবে
পিতৃতন্ত্রকে ব্যাখ্যা করা হলাে :
১.
জন্মকাল : আমাদের সমাজব্যবস্থায় নারীরা জন্মের পূর্ব থেকেই বৈষম্যের শিকার হয়।
কারণ কৃষিভিত্তিক সমাজ হওয়ায় দেশে ছেলে সন্তানের চাহিদা বেশি থাকায় এখানে নারীর জন্মকে
তেমন স্বাগত জানানাে হয় না। ফলে ছেলেদের মতাে মেয়েরা তেমন মূল্যায়িত হয় না।
২.
শিশুকাল : আমাদের সমাজব্যবস্থায় মেয়ে শিশুরা জন্মের পূর্বে যেমন গ্রহণীয় হয় না, তেমনি জন্মের পরও তারা তেমনভাবে গ্রহণীয় হয় না। ফলে জন্মের পর
পরিবারের ছেলে সন্তান যেমন- খাবার-দাবার, জামা-কাপড় ইত্যাদি পেয়ে থাকে, তেমনভাবে মেয়ে শিশুরা পায় না।
৩.
শৈশবকাল : একটি মেয়ে শিশু শৈশবকালে উপনীত হওয়ার পর তার প্রতি লিঙ্গ বৈষম্য আরাে
বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশের অধিকাংশ প্রত্যন্ত অঞ্চলে পরিবারের ছেলে শিশুকে স্কুলে
পাঠানাে হলেও মেয়ে শিশুকে গৃহস্থালির কাজে নিযুক্ত করা হয় বেশিরভাগ সময়।
৪.
যৌবনকাল : মেয়েরা যৌবনে উপনীত হলে তাদের প্রতি বৈষম্যের মাত্রা আরাে বৃদ্ধি পায়।
অনেক সময় তাদের ঘরের বাইরে যাওয়া কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তাছাড়া সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার
জন্য মেয়েদের অল্প বয়সেই বিয়ে দেয়া হয়। ফলে তারা মারাত্মক স্বাস্থ্য
ঝুঁকিতে পড়েন।
উপসংহার
: পরিশেষে বলা যায় যে, আমাদের সমাজে নারীদের অধস্তনতার পিছনে নানাভাবে সমাজে গেড়ে বসা পিতৃতন্ত্র বা পুরুষতন্ত্র দায়ী।
পিতৃতন্ত্রের কারণে মেয়েরা জন্মের আগে যেমন এগ্রহণীয় হয় না, তেমনি জন্মের পরও বিভিন্ন স্তরে তারা নানা প্রতিবন্ধকতার শিকার
হন।
*আমাদের সমাজে যৌতুকের কারণ উলেখ কর।
যৌতুকের কারণ :
যৌতুক একটি ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধি। এই যৌতুকের পেছনে কোন একটি নির্দিষ্ট কারণ দায়ী নয়, বরং এর পেছনে একাধিক কারণ বিদ্যমান
আছে।
১. দারিদ্র্য :
বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের অন্যতম দারিদ্র্য পীড়িত একটা দেশ। দেশের প্রায় ৪৫%
মানুষ এখনাে দারিদ্র্ সীমার
নিচে বসবাস করে। আর এই দারিদ্র্য থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে ছেলেরা বিয়ের সময়
যৌতুক দাবি করে।
২.
কর্মসংস্থানের অভাব : আমাদের দেশে তীব্র দরিদ্রতার কারণে উপযুক্ত ও পর্যাপ্ত
কর্মসংস্থানের সুযােগ সৃষ্টি হয় নি। ফলে লক্ষ লক্ষ লােক বেকার জীবনযাপন করেছে। গ্রাম বাংলায় অনেকে
দারিদ্রতা থেকে মুক্তির জন্য স্বত্ত্র ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য পাত্রীপক্ষের কাছে
যৌতুক দাবি করে।
৩. ছেলেদের
প্রাধান্য : বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থা মূলত কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত।
ফলে এখানে কর্মের যােগানদাতা হিসেবে ছেলেদের
গ্রহণযােগ্যতা ও প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়। আর ছেলেদের এই শ্রেষ্ঠত্বও বাংলাদেশে যৌতুকের অন্যতম বড় কারণ।
৪. নিরক্ষরতা :
বাংলাদেশে এখনাে শিক্ষার তথা স্বাক্ষরতার হার মাত্র ৬১%। ফলে দেশের একটা বড় অংকের জনগােষ্ঠী এখনাে নিরক্ষরতার অভিশাপে
আক্রান্ত। আর অক্ষর জ্ঞান না থাকায় এই দরিদ্র নিরক্ষর লােকেরা যৌতুকের ভয়াবহতা ও কুফল সম্পর্কে অবগত নয়।
৫. ধর্মীয়
অপব্যাখ্যা : যৌতুক যদিও হিন্দু সমাজের পণ প্রথা থেকে উদ্ভূত হয়েছে। কিন্তু
মুসলিম সমাজে এর প্রসারে
গ্রামাঞ্চলের মােল্লা শ্রেণি পরােক্ষভাবে দায়ী। বিয়ের সময় পাত্রকে উপহারদান
শরিয়তসম্মত ফতােয়া জারির ফলে তা ক্রমান্বয়ে যৌতুকের রূপ ধারণ করে।
৬. অন্যান্য
কারণ : যৌতুকের পেছনে উপরিউক্ত কারণসমূহের পাশাপাশি অন্যান্য নানাবিধ কারণও
সমানভাবে দায়ী আছে। সামাজিক মান সম্মান, বিয়ের ব্যয় নির্বাহ, লােক দেখানাে মানসিকতা, চাকরি, ঘুষ প্রদান ইত্যাদি অনুষঙ্গ যৌতুকের প্রসারে প্রভাব বিস্তার করছে।
**উন্নয়ন ও নারী উন্নয়ন : উন্নয়নের
আভিধানিক অর্থ অনেকটা উদ্দেশ্যবাদী। এ অর্থে উন্নয়ন হচ্ছে পরিপূর্ণতা। সহজ কথায় উন্নয়ন হচ্ছে আকাঙ্ফিত
সাধারণভাবে পরিকল্পিত আর সরকারি কার্যক্রম দ্বারা প্রভাবিত সামাজিক পরিবর্তন। জাতিসংঘ কর্তৃক প্রকাশিত এক গ্রন্থে
উন্নয়ন বলতে বুঝানাে হয়েছে এমন এক প্রক্রিয়াকে যার মাধ্যমে জনগণ তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করতে পারে।
আর নারী উন্নয়ন হচ্ছে নারীকে উন্নয়ন
কর্মকাণ্ডের মূলধারায় নিয়ে আসা। নারী, উন্নয়ন বলতে সাধারণত নারীসমাজের শিক্ষা-দীক্ষা ও
চিন্তা-চেতনার সার্বিক উন্নয়নকে বুঝায়। অর্থাৎ নারীর মানবিক অধিকার, আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন এবং
উন্নয়নের বিকল্পগুলাে চিহ্নিত ও গ্রহণ করাকে মােটামুটিভাবে নারী উন্নয়ন বলে অভিহিত করা হয়।
উপসংহার
: পরিশেষে বলা যায়, নারী উন্নয়ন হচ্ছে সাময়িকভাবে নির্দিষ্ট কতকগুলাে ব্যবস্থা, কলাকৌশল ও নীতি প্রয়ােগের মাধ্যমে নারীকে
পুরুষের সমপর্যায়ে উন্নীতকরণ। মােটকথা, উন্নয়নের মূল ধারার সাথে নারীকে সম্পৃক্ত করাই নারী উন্নয়ন।
করাই
নারী উন্নয়ন।
** নারী আন্দোলন সফলের পদ্ধতি বর্ণনা কর।
১.
পুরুষতান্ত্রিকতার অবসান : আমাদের সমাজে নারীদের উন্নয়নে পথে প্রধান বাধাই হলাে
পুরুষতান্ত্রিকতা। তাই এই পুরুষতান্ত্রিকতার চিরাবসান ঘটিয়ে সমাজে নারী পুরুষের সমতা বিধান
করতে হবে।
২. সামাজিক
সচেতনতা বৃদ্ধি : বাংলাদেশে নারী নির্যাতন ও নিপীড়নের আরেকটি উল্লেখযোেগ্য কারণ
হলাে সামাজিক সচেতনতার অভাব। আমাদের সমাজ
ব্যবস্থা নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে নারী অধিকার হরণে সদা তৎপর। তাই সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির
মাধ্যমে নারী আন্দোলন সফল করে তুলতে হবে।
৩. অর্থনৈতিক
মুক্তি : বাংলাদেশে চলমান নারী আন্দোলনে সফলতা লাভের জন্য প্রয়ােজন নারীর
সামগ্রিক অর্থনৈতিক মুক্তি। কারণ নারীরা
স্বাবলম্বী ও আত্মনির্ভরশীল না হলে তাদের আন্দোলন সফলতা লাভ করবে না। তাই কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বেতন বৈষম্য
ও সুযােগ সুবিধার সমতা বিধান করতে হবে।
৪, ফতােয়াবাজি বন্ধ : বাংলাদেশে নারী
অধিকার প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হলাে গ্রামাঞ্চলের মােল্লা শ্রেণির ইসলামের অপব্যাখ্যা। তারা নারী
স্বাধীনতা ও অধিকার হরণ করার জন্য ইসলামের বিধানের বিভিন্ন ভুল ব্যাখ্যা দেয়। এই ভুল ফতােয়াবাজী
বন্ধ করার মাধ্যমেও নারী আন্দোলন সফল করা যায়।
৫, নারী শিক্ষা : বাংলাদেশে পুরুষদের
তুলনায় নারীদের শিক্ষার হার খুবই কম। আর নারীদের শিক্ষার হার কম থাকায় তারা তাদের অধিকারের
ব্যাপারেও তেমন সচেতন নয়,
তাই নারী
আন্দোলন ফলপ্রসূ করার জন্য নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধি করতে হবে।
**সেক্স ও জেন্ডারের মধ্যে পার্থক্য :
সেক্স ও জেন্ডার মূলত একই অর্থে ব্যবহৃত হলেও এদের মধ্যে কিছু পার্থক্য লক্ষ্যণীয়। তা নিচে উল্লেখ করাে হলাে
:
১. সেক্স নারী ও
পুরুষের জৈবিক পরিচয় বহন করে। কিন্তু জেন্ডার নারী ও পুরুষের উপর আরােপিত সামাজিক পরিচয় বহন করে।
২. সেক্স-এর
ভিত্তি জীববিজ্ঞান। কিন্তু জেন্ডারের ভিত্তি সমাজ। প্রথমটি জৈবিক তথা
প্রাকৃতিক নিয়ম ও দ্বিতীয়টি সমাজ কর্তৃক সৃষ্ট নিয়ম।
৩. সেক্স হচ্ছে
নারীত্ব ও পুরুষের জৈবিক বা শারীরিক উপাদান। অন্যদিকে, জেন্ডার হচ্ছে নারী ও পুরুষ সম্বন্ধীয় মনস্তাত্ত্বিভাবে নির্ধারিত।
৪. নারী ও
পুরুষের বিভিন্ন যৌন ও প্রজনন অঙ্গ ইত্যাদি নির্ধারিত করে নারী-পুরুষের সেক্স। আর
জেন্ডার নির্ধারিত হয়
নির্দিষ্ট সমাজের সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।
৫. নারীর সেক্স
ভূমিকা জীববিজ্ঞানের তথা প্রকৃতির অমােঘ বিধান দ্বারা নির্ধারিত এবং অপরিবর্তিত।
অন্যদিকে জেন্ডার ভূমিকা সমাজ সৃষ্ট এবং
পরিবর্তনীয়। অর্থাৎ সমাজের ভূমিকায় 'নারী-পুরুষের জন্য রয়েছে কর্মবিভাজন। এ কর্মবিভাজন পরিবর্তন করা যায়।
অপরপক্ষে সেক্সের ভিত্তিতে কর্মবিভাজন হয় যা জীববিজ্ঞানের নিয়ম অনুযায়ী অপরিবর্তনীয়।
৬. পুরুষ ও
নারীর জৈবিক পার্থক্য অর্থাৎ সেক্স পার্থক্য। অন্যদিকে পৌরুষ ও নারীত্ব সমাজ বিনির্মিত পার্থক্য। অর্থাৎ
জেন্ডার পার্থক্য।
৭. সেক্স হচ্ছে
জৈবিক লিঙ্গ। শারীরিক দিক থেকে এ লিঙ্গ নারী ও পুরুষের। অপর লিঙ্গ শরীরের কোনাে প্রত্যঙ্গ নয়। বরং যা সামাজিক লিঙ্গ
বা জেন্ডার। তাই সাম্প্রতিককালে সেক্সকে "জৈবিক লিঙ্গ' এবং জেন্ডারকে সামাজিক লিঙ্গ বলে অভিহিত করা হয়।
**নারী নির্যাতন প্রক্রিয়া : নারী
নির্যাতন প্রক্রিয়ার সাথে সার্বিক নির্যাতন প্রক্রিয়ার মিল আছে।নিম্নে
নির্যাতনের
বিভিন্ন প্রক্রিয়া উল্লেখ করা হল:
১.
মতাদর্শ : পুরুষ প্রাধান্য নারী নির্যাতনের আদর্শিক ভিত্তি। অবিবেচক, হঠকারি, বিচারবুদ্ধি বিবর্জিত, ভাবাবেগ
তাড়িত, অস্থিরচিত্ত নারীকে নিজ ইচ্ছায় চলতে
দিলে সমাজে বিপর্যয় ঘটে যাবে। কাজেই সমাজের প্রয়ােজনে নারীকে বশে
রাখতে
হবে, নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। নারীকে বশে
রাখতে, নিয়ন্ত্রণে রাখতে যদি নির্যাতনের
প্রয়ােজন পড়ে তবে সমাজের বৃহত্তর স্বার্থে, সমাজের সার্বিক কল্যাণের প্রয়ােজনে
নির্যাতন অপরিহার্য।
২. প্রচারণা :
নারী নির্যাতনের মতাদর্শ সমাজে গরহণযােগ্য করা হয়েছে ধর্ম, শিক্ষা ও পরিবারে নিরবচ্ছিন্ন
প্রচারণার মাধ্যমে। চলচ্চিত্র, টেলিভিশন, রেডিও, সাহিত্য, সঙ্গীত, নাটক, নভেল- এমনকি বিজ্ঞান, চিকিৎসাবিজ্ঞান ও মনােবিজ্ঞানে নারীর হীনতা ও অর্ধীনতা এবং পুরুষের
আধিপত্য নানাভাবে প্রচার করা হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে।
৩. বাছবিচারহীন
ও অনৈতিকতা : বয়স, স্থান, কাল নির্বিশেষে সকল নারী বস্তুত নির্যাতনের সম্ভব্য লক্ষা।নাবালিকা শিশু কন্যাকে শৈশবে
নির্যাতনের শিকার হতে হয় খাদ্য ও চিকিৎসায় বৈষম্যের মাধ্যমে। চীনে কোমলমতি বালিকার পা ছােট রাখার জন্য লােহার জুতা পরানাে
হয়। পুরুষ
প্রধান সমাজ
নারী নির্যাতনে যে খারাপ কিছু আছে তা মনে করে না।
নারী নির্যাতনের
বিশেষত: নারী নির্যাতনের কতিপয় বিশেষত্ব আছে যা বর্ণনা করলে নারী নির্যাতনের স্বরূপ
বােঝা যায়।
নিম্নে এ সম্পর্কে আলােচনা করা হল ।
১. নারী
নির্যাতনের সর্বজনীনতা : নারী নির্যাতন সর্বজনীন কোন আর্থসামাজিক ভৌগােলিক সীমার
মধ্যে আবদ্ধ নয়। কে
নারীকে নির্যাতন করে? জবাবে বলা যায় পুরুষ। বয়স, ধর্ম, বর্ণ, নরগােষ্ঠী নি্বিশেষে পুরুষ। সকল সম্প্রদায় উচ্চ, মধ্য, নিমনবিত্ত, ধনী, নির্ধন, শিক্ষার সকল স্তরের পুরুষ নারী নির্যাতন করে- তারা বিবাহিত, অবিবাহিত, তালাকপ্রাপ্তা, পরিত্যক্তা।
২. গোপন রাখার প্রবণতা : নারী নির্যাতনের ঘটনা
সাধারণত গােপন করা হয়, জনসমক্ষে প্রচার হতে দেয়া হয় না। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত নির্যাতনের
ঘটনার সংখ্যা ন্যূনতম। পিতৃতন্ত্রের ঐতিহ্যে লালিত নারী নির্যাতনকে জীবনের বাস্তবতা মনে করে, প্রতিবাদ না করে ঢেকে রাখে।
সাম্প্রতিককালে নারী আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে কিছু কিছু ঘটনা প্রকাশ হতে শুরু হয়েছে।
৩, সামাজিকীকরণ : সামাজিকীকরণ একটি
প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যক্তি তার সংস্কৃতি কর্তৃক সমুচিত বলে পরিগণিত, নিয়মকানুন, ভূমিকা ও সম্পর্কসমূহ শিক্ষা করে। এ
প্রক্রিয়ায় ব্যক্তি সমাজের চিন্তাধারা ও আচরণ নিজের বলে গ্রহণ করে এবং নিজের মধ্যে আত্মস্থ করে
নেয়।
৪.
শান্তিহীনতা : নারী নির্যাতনের মামলায় শান্তির ঘটনা বিরল। অধিকাংশ ক্ষেত্রে
নির্যাতনকারী পুরুষ বেকসুর খালাস পেয়ে যায়। সামাজিক পরিবেশ সচরাচর নারী
নির্যাতনকে ঘরােয়া ব্যাপার গণ্য করে। শ্ত্রীকে প্রহার বা তার সাথে দুর্ব্যবহার, অফিসে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন
হয়রানি, এসব ঘটনাকে সমাজ বা আইন প্রয়ােগকারী সংস্থা আমল দিতে
চায়
না।
কর্মস্থল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানির সাথে ভবিষ্যৎ কর্মজীবন ও ছাত্রজীবন
জড়িত বিধায় কোর্ট কাচারিতে না গিয়ে মিটিয়ে ফেলা হয়।
**নারীবাদ: নারীবিষয়ক অধ্যয়ন ও গবেষণার
তাত্ত্বিক ভিত্তি হচ্ছে
নারীবাদ। উনবিংশ শতাব্দী এবং বিংশ শতাব্দীতে নারীকে নিজ অধিকার ও মুক্তি তথা
স্বাধীনতা অর্জনের জন্য সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে হয়েছে। নারী অধিকার তথা নারীমুক্তি আন্দোলনে
যারা অবদান রেখেছেন তাদের নারীবাদী আখ্যায়িত করা হয় এবং নারীর প্রতি বৈষম্য শােষণের বাস্তবতা সম্পর্কে
সচেতনতাকে বলা হয় নারীবাদ।
নারীবাদ : নারীবাদ শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে "Feminism"। ইংরেজি "Feminism" শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ "Femme" থেকে, যার অর্থ নারী। এই "Femme" শব্দটির সাথে ism বা
বাদ কথাটি সংযুক্ত হয়ে "Femisism" বা নারীবাদে
রূপ লাভ করেছে।
**বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলে নারীদের
অবস্থান তুলে ধর।
নিম্নে
দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে নারীদের হার উল্লেখ করা হলো:
১.
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ : বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন রাজনৈতিক দল হল আওয়ামী লীগ, যারা বর্তমানে ক্ষমতাসীন। এই দলের ১৫ জন
প্রেসিডিয়ামের মধ্যে ৪ জন নারী (২৬.৭)। আর জাতীয় নির্বাহী কমিটির ৭৩ সদস্যের মধ্যে মাত্র ৭ জন নারী। আর উপদেষ্টা
পরিষদের ৩৮ জনের মধ্যে নারীর সংখ্যা মাত্র ৩ জন। ফলে বুঝা যায় দলটির প্রধান নারী হলেও দলে অন্যান্য
ক্ষেত্রে নারীদের অবস্থান খুবই নগণ্য।
২.
জাতীয়তাবাদী দল : বাংলাদেশের দ্বতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বাংলাদেশের জাতীয়বাদী দল
(বি.এন.পি)। এই দলের প্রধান একজন নারী হলেও দলে নারী সদস্যের সংখ্যা খুবই অপ্রতুল। ফলে ১৯ প্রেসিডিয়ামের মধ্যে মাত্র ৫ জন নারী, সম্পাদকমণ্ডলীর ৪৭ জনের মধ্যে নারী আছে ৮ জন।
কার্যনির্বাহী পরিষদের ২১ জনের মধ্যে নারী মাত্র ১ জন। আর দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির মােট
১২ জনের মধ্যে নারী সদস্য হল শুধু ১ জন।
৩.
জাতীয় পার্টি : ১৯৮১-১৯৯০ সাল পর্যন্ত টানা ১০ বছর ক্ষমতায় থাকা দলটির প্রধান
পুরুষ হলেও দ্বিতীয় শীর্ষ প্রধান ও সংসদের বিরােধী দলীয় নেত্রী একজন
নারী, দলের ৩১ সদস্যের স্থায়ী কমিটিতে নারী
আছেন ২ জন। আর জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটিতে নারীর সংখ্যা আছে মাত্র ১৫ জন যা মােট
সদস্যের মাত্র ৪.৮%।
৪.
জামায়াতে ইসলামী : বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ইসলামিক দল হল জামায়াতে ইসলামী। ধর্মীয়
বিধানের কারণে এই দলের অঘােষিত নীতি অনুযায়ী দলীয় আমীর সর্বদা পুরুষ থাকেন। এছাড়া
২৩৭ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার মধ্যে নারীর সংখ্যা আছে ৩৫ জন।
৫. কমিউনিস্ট
পার্টি : বাংলাদেশের বামপন্থী দলগুলাের মধ্য সবচেয়ে বড় দল হল বাংলাদেশ কমিউনিস্ট
পার্টি। এই দল নারী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুত হলেও কেন্দ্রীয় ৬৩ সদস্য
বিশিষ্ট কমিটির মাত্র ৪ জন নারী। আর স্থায়ী কমিটির ১৫ সদস্যের মধ্যে মাত্র ১ জন নারী
সদস্য।
৬.
ওয়াকার্স পার্টি : ওয়াকার্স পার্টিও সর্বদা নারী নেতৃত্বের বিষয়ে বাগাড়ম্বর
করলেও বাস্তবে দলের প্রেসিডিয়াম কমিটিতে কোন নারী সদস্যই নেই। আর কেন্দ্রীয় ৪১
সদস্যের কমিটিতে নারীর সংখ্যা আছে মাত্র ২ জন।








No comments:
Post a Comment