মনোবিজ্ঞান ৫ম পত্র

 

**শিল্প মনােবিজ্ঞান: মনােবিজ্ঞানের যে শাখা শিল্প কারখানা ও ব্যবসায় ক্ষেত্রে সংঘটিত মানব আচরণের বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা প্রদান করে তাকে শিল্প মনােবিজ্ঞান বলে।

**কবে এবং কোথায় সর্বপ্রথম মনােবিজ্ঞানের যাত্রা শুরু হয়?

উত্তর : বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাষজ্যে সর্বপ্রথম শিল্প মনােবিজ্ঞানের যাত্রা গুরু হয়।

**শিল্প মনােবিজ্ঞানের লক্ষ্য হলো কর্মচারীদের দক্ষতা ও মনােবল বৃদ্ধি এবং কর্মসন্ভুষ্টি সাধন

**কর্ম বিশ্লেষণের প্রধান লক্ষ্য : কর্ম উপযােগী মানুষ এবং মানুষের উপযােগী কর্ম এ দুয়ের যথার্থ সমন্বয় সাধন কর্ম বিশ্লেষণের প্রধান লক্ষ্য।

**ফলিত মনােবিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল প্রকাশিত হয়? ১৯১৭সালে।

** গর্ডন কর্তৃক ব্যক্তিত্ব অভীক্ষাটি কয়টি অংশে বিভক্ত? ২টি।

**ইন্দ্রিযমূলক প্রবণতা অভীক্ষা কয়টি? উত্তর : ৩টি।

**মিনেসোটা বহুমুখী ব্যক্তিত্ব অভীক্ষায় মােট কতটি উক্তি রয়েছে? ৫৫০টি।

**কর্মী বিশ্লেষণ কী : কার্যসম্পাদনের জন্য কর্মীর আবশ্যক যােগ্যতা ও গুণাবলির বিচার বিশ্লেষণকে কর্মী বিশ্লেষণ বলে।

**মনেবিজ্ঞন মোরস কর্মবিশ্রেষণের ১২টি পদ্ধতির উল্রেখ রেছে

**মানসিক ক্ষমতার মৌলিক উপাদান কয়টি? উত্তর : ৭টি।

**কার্যক্ষেত্রে হাতে-নাতে প্রশিক্ষণ পদ্ধতিগুলেঅচ্ছে- কর্মাবর্তন পদ্ধতি, অবেক্ষাধীন সময়ে প্রকৃত কর্মবস্থায় অনুশীলন, টিউটোরিয়াল বা কোচিং পদ্ধতি।

**Tenching Machine বা শিক্ষা যন্ত্র কে উদ্ভাবন করেন:ওহাইও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রেসি

**  দূর্ঘটনা দৈব ঘটনা নয়।

**কারিগরি প্রশিক্ষণ:যে প্রশিক্ষণ ব্যবস্থায় বিশেষ কলা কৌশল প্রযুক্তির ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় তাকে কারিগরি প্রশিক্ষণ বলে।

**উদ্দেশ্য অনুসারে প্রশিক্ষণ কয়টি?

উত্তর : তিনটি। যথা- (ক) পরিচিতি প্রশিক্ষণ (খ) কারিগরি

প্রশিক্ষণ ও (গ) ব্যবস্থাপনা ও নির্বাহী প্রশিক্ষণ।

** দূর্ঘটনার সংজ্ঞা :আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের বিবেচনায় দুর্ঘটনা কলতে বুঝায় যেকোনাে অপ্রত্যাশিত ঘটনা যা উৎপাদন কার্যক্রম বা প্রক্রিয়ার নিরবচ্ছিন্ন অগ্রগতিকে বাধগ্রস্থ করে।

**দূর্ঘটনার মূলে মানব আচরণগুলো কত ভাগে বিভক্ত? ২ ভাগে

**কত সালে কর্ম বা চাকরি সম্ভুষ্টির উপর হোপক এর একটি গবেষণামূলক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়? উত্তর : ১৯৩৫ সালে।

**চাকরি বা কর্ম সম্ভুষ্টি হচ্ছে কর্মের প্রতি ব্যক্তির ইতিবাচক মনােভাব।

**কর্ম সন্তুষটির নির্ধারক বা উপাদানসমূহকে কয়টি ভাগে ভাগ করা যায় :তিনটি।

**সাক্ষাৎকার পদ্ধতি :যে পদ্ধতিতে প্রত্যক্ষ কথপােকথনের মাধ্যমে ব্যক্তির কর্ম সন্ত্ষ্টি সম্পর্কে  তথ্য সংগ্রহ করা হয় তাকে সাক্ষাৎকার পদ্ধতি বলে।

** ইন্দ্রিয়মূলক প্রবণতা অভীক্ষা কয়টি? উত্তর : ৩টি।

**কার্যক্ষেত্রে হাতে-নাতে প্রশিক্ষণ পদ্ধতিগুলাে হচ্ছে- কর্মাবর্তন পদ্ধতি, অবেক্ষাধীন সময়ে প্রকৃত কর্মাবস্থায় অনুশীলন, টিউটোরিয়াল বা কোচিং পদ্ধতি।

 **শিল্প মনােবিজ্ঞান ফলিত বিজ্ঞান

**কর্ম বিশ্লেষণের প্রধান উদ্দেশ্য হলাে- কর্ম উপযােগী

মানুষ এবং মানুষের উপযােগী কর্ম এ দুয়ের যথার্থ সমন্বয়

সাধন কর্ম বিশ্লেষণের প্রধান লক্ষ্য।

**সংকটময় ঘটনা পদ্ধতির প্রবক্তা কে?: Flanagan (1954).

**কর্ম সম্ভুষ্টির তিনটি উপাদান : উৎপাদনশীলতার হার, শ্রম আবর্তনের হার ও অভিযােগ প্রদানের হার।

** কর্মচারী নির্বাচন :বলতে বুঝায় কোনাে বিশেষ কাজের জন্য

দরখাস্তকারীদের ভিতর থেকে প্রয়ােজনীয় সংখ্যক লােক খুঁজে বের করা  এবং উপযুক্ত ব্যক্তিকে উপযুক্ত স্থানে নিয়ােগ দেওয়া।

**শিল্প মনােবিজ্ঞানের প্রধান উদ্দেশ্য হলাে শিল্প কারখানা উৎপাদন বৃদ্ধিতে  সহায়তা করা।

**কর্মী নির্বাচনের দুটি পদ্ধতির নাম :১. সাক্ষাৎকারও ২. সুপারিশপত্র।

**কর্ম ও কর্মী বিশ্লেষণ নিয়ে আলােচনা করেন কে? উত্তর : খিজেলা ও ব্রাউন।

**পরীক্ষা তালিকা পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন কে? উত্তর : মনােবিজ্ঞানী ডানেট ও কারচনার।

**WISC --Wechsler Intelligence Scale for Children.

**হর্থন গবেষণা ১৯২৭ সালে শুরু হয়।

**শিক্ষণের অনুসূচি বা কর্মসূচি দুই রকমের হয়ে থাকে। যথা-ক) অবিরাম অনুশীলন ও (খ) সবিরাম অনুশীলন।

**কর্মচারী নির্বাচন একটি গতিশীল প্রক্রিয়া

**দুর্ঘটনার দুটি পরিবেশ নির্ভর কারণ হলাে- ১. পারিপা্শ্বিক অবস্থা ও দূর্ঘটনার পৌনঃপুন্য ও ২. বায়ুমন্ডলের অবস্থা।

**গতি অনুধ্যান সর্বপ্রথম ১৮৮৫ সালে ফ্রাঙ্ক গিলব্রেথ ব্যবহার করেন।

**Vroom এর মতে কর্ম সম্ভষ্টির উপাদানগুলো: .ব্যক্তিগত উপাদান ২. কর্ম সম্পর্কিত উপাদান ও , কর্ম বহির্ভত উপাদান।

** কর্ম বিশ্লেষণের প্রধান উদ্দেশ্য হলাে- কর্ম উপযােগী মানুষ এবং মানুষের উপযােগী কর্ম এ দুয়ের যথার্থ সমন্বয় সাধন কর্ম বিশ্লেষণের প্রধান লক্ষ্য।

**WAIS-এর পূর্ণরূপ হলাে Wechsler Adult Intelligence Scale.

**কর্ম বিশ্লেষণের দুটি পদ্ধতি হলাে অভীক্ষা ও সাক্ষাৎকার।

** মানসিক ক্লান্তির দুটি লক্ষণ হলাে ১, চিন্তা করার আসক্তি না থাকা ও  , ধৈর্য না থাকা।

**DAT'- Differential Aptitude Tests.

 **সর্বপ্রথম কে কর্মচারী নির্বাচনে মনােবৈজ্ঞানিক অভীক্ষা প্রয়ােগ করেন: মনােবিজ্ঞানী হুগোমুনস্টার বার্গ।

**দুর্ঘটনার দুটি বাক্তিগত উপাদান হলাে, তড়িৎ প্রবাহের সান্নিধ্যে আসা ও  আটকে পড়া।

 **দুটি কর্ম সন্তুষ্টি মানকের নাম হলাে ১, কর্ম বিবরণী সূচক ও ২, মিনেসােটা সন্তুষ্টি মানক।

**সময় অনুধ্যানের উদ্যোক্তা হলেন টেইলর। ১৮৮১ সালে তিনিই প্রথম সময় অনু্যা গুরু করেন।

** শিল্প মনােবিজ্ঞানের লক্ষ্য হলো:কর্মচারীর দক্ষতা ও মনােবল বৃদ্ধি এবং কর্মে সন্ভুষ্টি বিধান

**কর্ম নির্দিষ্টকরণ : হচ্ছে কোন কাজ কী অবস্থা, পদ্ধতি ও প্রক্রিয়ায় সম্পাদিত হবে তার পূর্ব নির্ধারিত ব্যাখ্যা।

**প্রশিক্ষণার্থীর বৈশিষ্ট্য অনুসারে প্রশিক্ষণ তিন প্রকার। যথা : ১. অভিজ্ঞতা ২. পদমর্যাদা এবং ৩. সংখ্যা।

** প্রার্থীদের যােগ্যতার মূল্যায়ন দুই প্রকার।

** কার্য সন্তুষ্টির ইংরেজি প্রতিশব্দ Job Satisfection.

**দুর্ঘটনা সম্পর্কে হেনরিচ (Heinrich) এর সংজ্ঞাটি উল্লেখ কর।

উত্তর : একটি অপরিকল্পিত এবং অনিয়ন্ত্রিত ঘটনা যাতে কোনাে ব্যাক্তি বা বস্তুর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া থেকে কর্মচারিরা জখমপ্রাপ্ত হতে পারে আবার অনুরূপ সম্ভাবনার সৃষ্টি হতে পারে।

** কর্মচারী নির্বাচন ও সংস্থাপনের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে প্রথম ক্ষেত্রে  যােগ্যতা মূল্যায়ন করে প্রার্থীদেরকে গ্রহণ বা বর্জন করা হয়। কিন্তু দ্বিতীয় ক্ষেত্রে প্রার্থীদেরকে বর্জানের কোনাে  অবকাশ নেই


****শিল্প মনােবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু বা পরিসর বা পরিধি : শিল্পকারখানা বৃদ্ধির সাথে সাথে শিল্পক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকার সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে শিল্প মনােবিজ্ঞানের পরিসরও ধীরে ধীরে প্রসারিত হয়েছে। নিযম্নে শিল্প মনােবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু বা পরিসর পরিধি সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো : ১. কর্মী নির্বাচন : কর্মী নির্বাচনে আদর্শ নির্ণয়, কম সাফল্যের পূর্বানুমান, নির্বাচন কৌশল নির্ধারণ, নির্বাচন কৌশলসমূহের যথার্থতা ও নির্ভরযােগ্যতা মূল্যায়ন ইত্যাদি সামগ্রিক নির্বাচন প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত।

২. কর্ম ও কর্মী বিশ্লেষণ : কর্ম ও কর্মী বিশ্লেষণ শিল্প মনােবিজ্ঞানের প্রধান বিষয়বস্তু।  কর্মীর মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্য, যা শিল্পের উৎপাদনের সাথে সম্পর্কিত, শিল্প মনাবিজ্ঞান তা নিয়েও আলােচনা করে।

৩. শিল্পে প্রশিক্ষণ : শিল্পকারখানায় কর্মচারীদের দক্ষতা এবং উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য শিল্প মনেোবিজ্ঞান নানা প্রকার প্রশিক্ষণ যেমন- কলাকৌশল, ব্যবস্থাপনা, পরিদর্শন সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বর্ণনা করে।

৪. কর্মসম্ভুষ্টি ও কর্মচারীর মনােবল : কর্মী যখন নিজের কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে, তখন সে স্বভাবতই প্রতিষ্ঠানের সকল নিয়মকানুন অতি সহজভাবে মেনে চলতে পারে। কর্মসন্তুষ্টি এবং কর্মচারীর মনোবল কিভাবে বৃদ্ধি করা যায় তা শিল্প মনােবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

৫. মনােবল বৃদ্ধি : মনােবল বৃদ্ধির কারণে শিল্পে নিয়মকানুন, আইনশৃঙ্খলা বৃদ্ধি পাবে, একজন।ফমীর সাথে অন্য কর্মীর সম্পর্ক বৃদ্ধি পাবে এবং শিল্পে উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি কর্মীদের কর্মদক্ষতাও বৃদ্ধি পাবে।

৬. প্রকৌশল মনােবিজ্ঞান : প্রদর্শন ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষেত্রে সাম্যতা বিধান, যন্ত্রের গতি নির্দেশক এবং বিপদ সংকেত প্রদর্শন কৌশল কি রকমের হলে যন্ত্রচালকের ভুল কম হবে এবং দর্ঘটনার হার ত্রাস পাবে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে শিল্প মনােবিজ্ঞানিগ সবসময় গবেষণায় রত।

৭. শিল্পে মানবিক সম্পর্ক : শিল্প্রতিষ্ঠানের সুন্দর সাবলীল পরিচালনা, উৎপাদন বৃদ্ধি, দুর্গটনা এ্রস এস্ত অনেকাংশে নিভর করে শ্রমিক কর্মচারীদের সুসম্পর্ক বা সদভাবের উপর। তাই শিল্প মনােবিজ্ঞান শিল্পে মানবিক সম্পর্ক উন্নয়নের নানা বিষয় নিয়ে আলােচনা করে থাকে।

৮. শিল্পে দুর্ঘটনা : শিল্পক্ষেত্রে দুর্ঘটনা এবং এর প্রতিকার শিল্প মনােবিজ্ঞানের একটি অর্থবহ বিষয়। শিল্পক্ষেত্রে যত সমস্যা রয়েছে, তার মধ্যে দুর্ঘটনা সবচেয়ে মারাত্মক একটি বিষয়। দুর্ঘটনার কারণ, আকৃতি, প্রকৃতি, ফলাফল হত্যাদি বিষয় নিয়ে কাজ করতে গিয়ে শিল্প মনােবিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত ব্যাকল।

৯. দক্ষতা ও ক্লান্তি : কোনো কার্যক্রম পরিসমাপ্তি করতে হলে স্বাভাবিকভাবেই ক্ন্তি আসে। এ ধরনের ক্লান্তির কারণ শনাক্ত, এ থেকে সৃষ্ট সমস্যা নিয়ে চিন্তাভাবনা এবং ক্লান্তি ও একঘেয়েমির কারণ খুজে বের করা শিল্প মনােবিজ্ঞানের খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়।

১০. সময় ও গাত অনুধ্যান : কোনাে একটি কাজ পরিসমাপ্তির জন্য প্রয়োজনীয় সময়ের আদর্শ মান নির্ণয় করাই হলাে সময় অনুধ্যানের লক্ষ্য। অন্যদিকে, গতি অনুধ্যানের লক্ষ্য হলাে কোনাে একটি কাজ সম্পাদনের জন্য অদরকারি গতি হ্রাস করে সবচেয়ে কার্যকরী গতিবিধি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠানের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের গতি আলােচনা করা। ১১. বৃত্তীয় পরিচালনা : বৃত্তীয় পরিচালনা শিল্প মনােবিজ্ঞানে খুবই দরকারি আলােচ্য একটি বিষয়। কোন কাজে কোন কর্মচারী উপযােগী তা

 

 

***কর্ম বিশ্লেষণ :" অধ্যাপক ঘিজেলি ও ব্রাউন মনে করেন, "কর্ম বিশ্লেষণ বলতে এমন কতকগুলাে পদ্ধতিকে বুঝায় যেগুলাের মাধ্যমে কোনাে বিশেষ কর্মের প্রকৃতি, উপাদান ও অবস্থা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হয়। কর্মে নিয়ােজিত কর্মচারীদের সাথে সাক্ষাৎকার বা নিরীক্ষণের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া হিসেবে কর্ম বিবেচনা করা হয়; যা তথ্যের সংযােগসহ কর্ম বিবরণের একটি সহজ এ্ততির ধরন নির্দেশ করে।"

** কর্ম  বিশ্লেষণের পদ্ধতি বা কৌশলসমূহ : কর্ম বিশ্লেষক ব্যক্তিগতভাবে কার্যসমূহ পর্যবেক্ষণ করে। তাই এ পদ্ধতিতে সাঠক তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব। তবে এ পদ্ধতি অনেকটা সময় সাপেক্ষ এবং ব্যয় সাপেক্ষ।

, প্রশ্নমালা পদ্ধতি : প্রশ্নপত্রে উত্তর দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে উত্তরদাতার প্রতি সুনির্দিষ্ট নির্দেশ থাকতে হবে। এ প্রক্রিয়া শিক্ষিত কর্মচারীদের জন্য প্রযােজ্য

৩. সাক্ষাৎকার পক্ধাতি : সাক্ষাৎকার দলগত বা ব্যক্তিগত দুই ধরনের পরিবেশেই সংঘটিত হতে পারে। সাক্ষাৎকার প্রদানকারী কানাে প্রশ্ন নখতে না পারলে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী তা ভালােভাবে বঝিয়ে দেন এবং সঠিক তথ্য সংগ্রহ করেন। এ পদ্ধতির সুবিধা হলাে কাজটি সম্পর্কে কোনাে তথ্য বাদ পড়ার সম্ভাবনা কম। তবে এ পদ্ধতি সময় সাপেক্ষ।

৪. পরীক্ষা তালিকা পদ্ধতি : কম সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ এবং বিন্যাসের ক্ষেত্রে এটি একটি সহজ পদ্ধতি। তবে বিভিন্ন কাজের বিশদ বিবরণ প্রস্তুত করতে যথেষ্ট যােগ্যতা ও অভিজ্ঞতার প্রয়ােজন হয়।

৫. বিশেষজ্ঞ সম্মেলন পদ্ধতি : বিশেষজ্ঞ সম্মেলন পদ্ধতিতে নানা প্রকার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কার্যটিকে বিশ্লেষণপূর্বক এর সম্বন্ধে সঠিক ধারণা করা হয়। এতে শিল্প প্রকৌশলী, পরিদর্শক, তত্ত্বাবধায়ক এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞগণ কর্ম বিশ্লেষকদের নিকট কর্মের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিবরণ প্রদান করেন।

৬. কর্মে অংশগ্রহণ পদ্ধতি : কর্মে অংশগ্রহণ পদ্ধতিতে কর্ম বিশ্লেষক নিজে কর্ম সম্পাদন করে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার সাহায্যে কর্মের মৌলিক বৈশিষ্ট্য এবং প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিশ্লেষণ করেন। সহজ কাজের ক্ষেষত্রে এটি খুবই কার্যকর পদ্ধতি। কিন্তু জটিল কাজের বেলায় এটি সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।

৭. রোজনামচা পদ্ধতি :

ব্যবস্থাপনা এবং নির্বাহী পদের মতাে উচ্চস্তরের কর্মচারীদের বেলায় রোজনামচা পদ্ধতি কর্মবিষয়ক তথ্য সংগ্রহের জন্য খুবই উপযোগী।

৮. সংকটময় ঘটনা পদ্ধতি : এ পদ্ধতিতে বিশ্লেষকের প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণ ও কর্মচারীদের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে ভালাে এবং খারাপ কাজের ব্যাপারে ব্যাপক তথ্য সংগ্রহ করা হয় এবং এর সাহায্যে কোনাে কাজের সংকটময় দিক সম্বন্ধে বিশেষভাবে আলােকপাত করা হয়।

৯. কর্মে প্রকাশিত বিশ্লেষণ পর্যালােচনা : কোনো নির্দিষ্ট কর্ম বিশ্লেষণের জন্য একজন বিশেষজ্ঞ তদরূপ কোনো কর্ম বিশ্লেষণের প্রকাশিত বিবরণ হতে সাহায্য নিতে পারেনকারণ প্রকাশিত কর্ম বিশ্লেষণ বর্তমান কর্ম বিশ্লেষণের দিক নির্দেশক হিসেবে কাজ করতে পারে। যদিও এর সংখ্যা খুব কম। অনেক সময় কর্মের নাম এক হলেও কর্মের প্রকৃতির ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। যেমন : সচিবের কাজ। এক্ষেত্রে চাকরি এবং পেশার নাম এক হলেও সব সচিবের কাজ কিন্তু এক ধরনের নয়। বিভিন্ন সচিব বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকে।


 

 

 

** "কর্ম বিশ্লেষণ হলাে কাজের সংজ্ঞা নির্বাচন এবং কাজ সম্পাদন করতে  কর্মচারীর কী কী আচরণ করা প্রয়ােজন তা নিরূপণ করা।"-সংজ্ঞাটি ডানেট (Dunnette) এর।

**মনােবিজ্ঞান কোন ধরনের বিজ্ঞান?

উত্তর : মনােবিজ্ঞান মানুষ ও প্রাণীর আচরণ সম্পর্কীয় বিজ্ঞান

**পদোন্নতির জন্য কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার

** নির্ভরযােগ্যতা :কোনাে পূর্বনির্দেশক -এর নির্ভরযােগ্যতা বলতে বুঝায় তার  সামঞ্জস্যপূর্ণ বা সঙ্গতিকে।

**যথার্থ কর্মচারী নির্বাচনের পূর্বশর্ত হলো কর্মেরস্বরূপ, আবশ্যকতা  এবং  কর্মচারীর যােগ্যতা সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্সংগ্রহ করা।

**স্কট নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযােগী অধ্যাপক ছিলেন  ১৯০১ সালে

**সাংখঠনিক প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে Keith Davis এর সংজ্ঞা: কজন কর্মচারী কিভাবে দেখছে এবং কত সক্রিয়ভাবে প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে তার মাত্রাই হয সাংনিক প্রতিশ্রুতি।

**অভীক্ষা "এ" এবং অভীক্ষা "বি" এর সংশােধিত নাম কী?

উত্তর : আর্মি আলফা (Army Alpha) এবং আর্মি বেটা (Army Beta)  অভীক্ষা।

**কর্ম ওকর্মী বিশ্লেষণ নিয়ে আলােচনা করেন কে ?ঘিজেলী ও ব্রাউন

**অহেতুক নেতিবাচক ভুল: যোগ্য প্রার্থীকে অযােগ্য বিবেচনা করে যদি বাতিল করা হয় তাহলে নির্বাচনের ক্ষেত্রে যে ভুল হয় তাকে অহেতুক নেতিবাচক ভুল বলে।

**অনুক্রমিক শিক্ষণ পদ্ধতির সুবিধা চারটি।

**"কর্ম বিশ্লেষণকে ফলপ্রসূ করতে হলে কাজটির সঞ্কটময় অবস্থার  বর্ণনা করতে হবে।"-উক্তিটি ফ্লানাগার (Flanagar) এর।

**শিল্পকারখানায় উৎপাদন বৃদ্ধির শর্ত হচ্ছে সঠিক কর্মচারী

নির্বাচন।

**সংবেদনশীলতা প্রশিক্ষণের কোনাে নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু এবং  কর্মসূচি থাকে না।

**দুর্ঘটনা প্রতিরােধে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে?

উত্তর : (১) দুর্ঘটনার বিবরণ প্রকাশ করা ও বিশ্লেষণ করা,  (২) কর্মী নির্বাচন

 ও নিয়ােগ, (৩) কর্ম ও কর্ম  পরিবেশের সঠিক পরিকল্পনা, (৪) নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ এবং  (৫) প্রবর্তনা ও প্রচারণা।

**কর্ম অসম্ভুষ্টি কী? উত্তর কোনাে কর্মের প্রতি নেতিবাচক মনােভাবকে বলে কর্ম অসম্ভষ্টি।

**কর্ম সন্তুষ্টির নির্ধারক বা উপাদান তিনটি

**মানব আচরণ হলাে বহুমুখী।

**প্রশিক্ষণ একটি নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া।

** শাব্দিক অর্থে মনােবিজ্ঞান কী?

উক্তর : মনােবিজ্ঞান হলাে আত্মা সম্পর্কীয় বিজ্ঞান।

** ইয়েরকেস কমিটি কতটি অভীক্ষা রচনা করেন ও কী কী?

উত্তর : দুটি। যথা : ১. অভীক্ষা '' এবং ২, অভীক্ষা 'বি।

** কর্ম বিশ্লেষণ বলতে এমন কতকগুলাে পদ্ধতিকে বুঝায়, যেগুলাের মাধ্যমে কোনাে বিশেষ কর্মের প্রকৃতি, উপাদানসমূহ ও অবস্থাবলি সম্পর্কে তথ্যসংগ্রহ করা হয়।"- সংজ্ঞাটি ঘিজলী ও ব্রাউন (Ghiselli and Brown) এর।

**যন্ত্র চালনার জন্য কারিগরি জ্ঞান ও যুক্তি দক্ষতার প্রয়ােজন।

**প্রতিশ্রুতি হচ্ছে কোনাে বিষয়ে়ের সাথে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া।

** ভারতের মুখ্য শিল্প্রতিষ্ঠান BHEL এর মতে 'দুর্ঘটনা' কী?

উত্তর : দুর্ঘটনা হচ্ছে যেসব রিপাের্টযােগ্য ঘটনা যা সংঘটিত হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দুর্ঘটিনা কবলিত ব্যক্তি পুনরায় কাজ শুরু করতে পারে না।

**কর্মীর পটভূমি হলাে : ১. শিক্ষাগত যােগ্যতা ও ২, চাকরিতে প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা।

** সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থার মূলকথা হচ্ছে কাজের প্রকৃতি ও  আবশ্যকতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ মেধা ও প্রবণতাসম্পন্ন লােক নির্বাচন করা।

** দুর্ঘটনার সাথে সম্পর্কিত ব্যক্তিগত উপাদানগুলাে কী কী?

উত্তর : বুদ্ধি, অভিজ্ঞতা, বয়স, স্বাস্থ্য ইত্যাদি।

** অঙ্গীকার বা প্রতিশ্রুতির উপাদানগুলাে কী কী?

উত্তর : ১. ব্যক্তিগত উপাদান, ২. সাংগঠনিক উপাদান, ৩. সংগঠন বহির্ভূত উপাদান।

**নির্ভরণ কী :যে তথ্য গাণিতিক পদ্ধতিতে এক স্কোর গুচ্ছ থেকে অন্য স্কোর তুচ্ছ পূর্বানুমান করা যায় তাকে নির্ভরণ বলে

** নির্বাচন অনুসূচির সর্বশেষ ধাপ হচ্ছে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কৌশল  রচনা।

**পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি কী?

উত্তর : কোনাে কাজ চলাকালীন অবস্থায় তার বিভিন্ন দিক ও কার্যসম্পাদনের বিভিন্ন প্রক্রিয়া প্রত্যক্ষপর্যবেক্ষণ করাকে পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি বলে।

** কত সালে Alpha একটি কমিটি গঠন করে?

উত্তর : ১৯১৭ সালে অষঢ়যধ একটি কমিটি গঠন করে।

**বক্তৃতার সহায়তার জন্য উপকরণ হিসাবে কী কী ব্যবহার করা হয়?

উত্তর : চার্ট, ছবি, স্লাইড, প্রতিকৃতি, পুস্তিকা ইত্যাদি।

**প্রশ্নমালা পদ্ধতির অসুবিধা হচ্ছ এই যে, অশিক্ষিত কর্মচারীদের ক্ষেত্রে এটা প্রযােজ্য নয় এবং ডাকযোগে পাঠানাে প্রশ্নের খুব কম সংখ্যক উত্তরই ফেরত আসে।

**কাদেরকে চাকরিতে নিয়ােগ দেওয়া হয়?

উত্তর : যারা সাফল্যের সাথে প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করতে পারে তাদেরকে

চাকরিত নিয়ােগ দেওয়া হয়।

**কর্ম সম্ভুষ্টির সৃষ্টি কোথা হতে?

ত্তর : সংগঠনের বিভিন্ন বিষয়ে কর্মচারীদের ম্যে অনুকূল ও প্রতিকুল থারণা থেকে কর্মসন্তুষ্টির সৃষ্টি করে

**গুণগত কর্মচারী প্রশিক্ষণ বা শিল্পে কর্মচারী প্রশিক্ষণ বা প্রশিক্ষণ : শিল্পকর্মে দক্ষতা, জ্ঞান ও নৈপূর্ণ্য লাভের আশায় কর্মচারীদের অধিক দায়িত্ব পালনে সক্ষম করে তােলার প্রক্রিয়াকে কর্মচারী প্রশিক্ষণ বা শিল্পে কর্মচারী প্রশিক্ষণ বলে । পশিক্ষণ হলাে এমন একটি প্রক্রিয়া যার সাহায্যে ব্যক্তি দক্ষতা শিখে থাকে, জ্ঞান অর্জন করে এবং মনােভাবের সংস্কার ঘটায়, যা উপর্যুক্ত ব্যক্তিকে উপর্যুক্ত ক্ষেত্রে,সফল করে তােলে। শিল্পে প্রশিক্ষণ একটি নিরবিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া এবং এর গুরুত্ব শুধু নতুন কর্মচারীদের ক্ষেত্রে সীমিত হতে শুরু করে ব্যবস্থাপক পর্যন্ত সকল স্তরের কর্মচারীদের জন্যই প্রশিক্ষণের প্রয়ােজনীয়তা রয়েছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ফলপ্রসূ প্রশিক্ষণের ফলে কর্মচারীদের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। কর্মে অনুপস্থিতি ও কর্মত্যাগের হার কমতে থাকে এবং কর্মে সন্তুষ্টি বাড়ে। এছাড়া পদোন্নতির জন্যও কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়ােজন।

যেমন- অধ্যাপক করমিক ও টিফিন (MC. Cormick and Tiffin) বলেন, "বর্তমান বা ভবিষ্যত কর্ম অধিকতর

যােগ্যতার সাথে সম্পাদন করার জন্য শিক্ষালব্ধ যে অভিজ্ঞতা কাজে লাগানাে হয় তাকে শিল্পে প্রশিক্ষণ বলে"

মনােবিজ্ঞানী এ. খালেক বলেন, "শিল্পক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ বলতে এমন একটি পরিকল্পিত কার্যক্রমকে বুঝায়, যার ফলে

কোনাে প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের কার্যসম্পাদনের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি পায় এবং প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের জন্য কর্মচারীদের মনােভাব ও আচরণে প্রত্যাশিত পরিবর্তন ঘটে।

 


 

**কার্য সম্ভষ্টির গুরুত্ব বা প্রয়ােজনীয়তা : নিম্নে কার্য সন্ভুষ্টির গুরুত্ব বা প্রয়ােজনীয়তা আলােচনা করা হলাে :

১. উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি : কার্য সন্তুষ্টি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির সহায়ক। কর্মীরা যখন সন্ভুষ্ট থাকে তখন তারা কার্যসম্পাদনের প্রেরণা ও তাগিদ অনুভব করে। তারা প্রতিটি কাজ মনােযােগের সাথে সম্পাদন করে। ব্যবস্থাপনার নির্দেশাবলি পালনে তারা যত্নবান হয়। শিল্পক্ষেত্রে বিরােধ সংঘাতের মাত্রা হ্রাস পায়এসবের ফলশ্রুতিতে শিল্পের উৎপাদন বহুগুণ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।

২. আচরণ উন্নয়ন : যে কোনাে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উন্নতির জন্য ব্যক্তিগত ও দলগত আচরণের উৎকর্ষতা অপরিহার্য। কার্য সন্তুষ্টি ক্মীর ব্যক্তিগত আচরণের মান উন্নয়নের সাথে সাথে দলগত আচরণের ব্যাপক পরিবর্তন আনেপ্রত্যেকের আচার-আচরণের মধ্যে গঠনমূলক পরিবর্তন লক্ষ করা যায়।

৩. মনােবল উন্নয়ন : কার্য সন্তুষ্টি কর্মীর মনােবলকে যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি করে। মনােবল কর্মীর একটি মানসিক অবস্থা। কর্মপরিবেশে মনােবল কর্মীর ব্যক্তিগত ও দলগত অনুভূতি প্রকাশ করে। কর্মীদের উন্নত মনােবল কার্য সন্তুষ্টিরই ফল।

৪. অনুপস্থিতি ফ্রাস : কর্মীরা যখন তাদের কাজের প্রতি সন্তুষ্ট থাকে, তখন কাজকে তারা আনন্দদায়ক মনে করে এবং তারা দায়িত্ব এড়াতে চায় না কিংবা তারা দায়িত্ব থেকে দূরে থাকতে চায় না। কাজটি আনন্দদায়ক হওয়ার ফলে তারা ইচ্ছাকৃতভাবে কাজে অনুপস্থিত থাকে না।

৫. সুষ্ঠু শিল্প পরিবেশ সৃষ্টি : কার্য সন্তুষ্ট শিল্পক্ষেত্রে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করেকর্মীরা সম্ভুষ্ট থাকলে তারা

ব্যবস্থাপনার যে কোনাে কাজের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে। ব্যবস্থাপনার সাথে কর্মীদের দূরত্বহ্রাস পায় এবং দ্বন্দ্বমূলক সম্পর্কের অবসান ঘটে। এর ফলে শিল্পের পরিবেশ উন্নত হয়।

৬. শ্রম ঘূর্ণায়মানতা ক্রাস : শিল্প কর্মীদের সন্তুষ্টি শ্রম ঘূর্ণায়মানতার হার হ্রাস করে। সন্তুষ্ট কর্মীরা সাধারণত প্রতিষ্ঠান ছেড়ে অন্যত্র যেতে চায় না। বরং প্রতিষ্ঠানের সাথে নিজেকে খাপখাইয়ে নেয়।

৭. হতাশাজনিত সমস্যা লাঘব : কার্য সন্তুষ্টি কর্মীদের হতাশাজনিত সমস্যা লাঘব করে। একজন কর্মী যদি কাজের প্রতি অসম্ভুষ্ট হয় এবং সে মনে করে যে, তার পক্ষে সহজে লক্ষ্যে পৌছা সম্ভব নয় তখন তার মধ্যে নৈরাশ্য সৃষ্টি হয় এবং ক্রমান্বয়ে সে নিজেকে গুটিয়ে নেয়। উচ্চমাত্রার কার্য সন্তুষ্টি কর্মীদের নৈরাশ্য দূর করে এবং তাদেরকে কর্মের প্রতি আকৃষ্ট করে

৮. কাজের মান বৃদ্ধি : কার্য সন্ভুষ্টি কর্মীর কাজের মান বৃদ্ধি করে। কর্মীরা যখন সম্ভুষ্ট থাকে, তখন তারা আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করে। ফলে কাজের মান বৃদ্ধি পায়।

৯. উন্নত শিল্প সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা : কার্য সন্তুষ্টি উন্নত শিল্প সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় ব্যাপকভাবে সহায়তা করে। কার্য সন্তুষ্টি একদল সন্তুষ্ট কর্মী সৃষ্টি করে যারা ব্যবস্থাপনার সাথে সংঘাত এড়িয়ে চলে এবং সহযোগিতামূলক মনােভাব প্রদর্শন করে। এর ফলে শিল্প সম্পর্ক উন্নত হয়।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, শিল্পক্ষেত্রে কার্য সন্তুষ্টির গুরুত্ব প্রকাশ করে। কার্য সন্তুষ্টি বিভিন্নভাবে

শিল্প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডে অত্যন্ত ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করে। তাই শিল্প মনােবিজ্ঞানে কার্য সন্তুষ্টি গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না।

 

 

** দুর্ঘটনার ্যক্তিগত উপাদান সম্পর্কে লিখ।

উত্তরঃ ভূমিকা : দুর্ঘটনা একটি মারাত্মক সমস্যা। এটি এমন একটি সমস্যা যা কখনাে মৃত্যু ঘটায় বা কখনাে পূর্ণ বা আংশিক অক্ষমতার সৃষ্টি করে। সকল ঘটনাই কম বেশি দুর্ঘটনা কবলিত ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির কারণ হয়ে থাকে এবং সম্পদ ও সময়ের অপচয় ঘটিয়ে থাকে।

**দূর্ঘটনার ব্যক্তিগত উপাদান : নিম্নে দুর্ঘটনার ব্যক্তিগত উপাদানসমূহ আলােচনা করা হলাে :

১. যুদ্ধি : সাধারণভাবে ধারণা করা হয়ে থাকে অধিক বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা কম হয়ে থাকে। কিন্তু গবেষণালন্ধ তথ্যাদি দ্বারা এই তথ্য সম্পূর্ণ সত্য প্রমাণিত হয়নি। যেসব চাকরিতে বিচার-বিবেচনা বা বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ করতে হয় সেসব ক্ষেত্রে বুদ্ধি দুর্ঘটনামুক্ত আচরণের সাথে সম্পর্কযুক্ত। গবেষণায় এ সত্য প্রমাণিত হয়েছে।

২. জটিপূর্ণ দৃষ্টি : অনেক কাজেই দুর্ঘটনার সাথে দৃষ্টির সম্পর্ক লক্ষ্য করা গিয়েছে। কেপহার্টে এবং টিফিন বিভিন্ন পেশায় নিয়ােজিত ভালাে দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন লােকের দুর্ঘটনার খতিয়ানের সাথে কুটিপূর্ণ দৃষ্টিসম্পন্ন লােকের দুর্ঘটনার সংখ্যা তুলনা করেন। ফলাফলে দেখা যায়, যাদের দৃষ্টিশক্তি ক্রুটিপূর্ণ তারাই বেশি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে।

৩. বয়স : বয়স যত বাড়তে থাকে, দুর্ঘটনার হারও তত কমে। স্টিল মিলের ৯০০০ কর্মীর উপর চালিত জরিপে দেখা যায় যে, স্বল্প বয়স্ক (২০ এর কোঠায়) লােকদের দুর্ঘটনার হার বেশি।

, অভিজ্ঞাতা : স্টিল মিলের কর্মীদের উপর চালিত গবেষণায় দেখা যায় যে, স্বল্প অভিজ্ঞতার লোকদের দুর্ঘটনার হার বেশি

৫. ক্লান্তি : গবেষণালঙ্ধ তথ্য থেকে জানা যায় দুর্ঘটনার হার ও উৎপাদনের মধ্যে ঘনিষ্ট ঋণাত্মক সম্পর্ক রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেনের একটি ফ্যাক্টরির কর্মঘণ্টা ১২ ঘণ্টা থেকে ১০ ঘণ্টায় কমিয়ে আনলে মহিলা কর্মীদের দুর্ঘটনার হার ৬০% এর অধিক কমে যায়

. প্রত্যক্ষণ ও পেশির সম্পর্ক :  যেসব কর্মচারীর দুর্ঘটনার রকর্ড আছে তাদের প্রত্যক্ষণ গতির তুলনায় পেশিগত ক্রিয়ার গতি সাফল্যাঙ্ক ভালে। অন্যদিকে দুর্ঘটনামুক্ত কর্মচারীদের ক্রিয়ার গতির তুলনায় প্রত্যক্ষণ গতির সাফল্যাঙ্ক ভালাে।

, দুর্ঘটলা প্রবণতা : ১৯৪৯ সালে Mintz & Blum-এর গবেষণা থেকে জানা গেছে যে, কোনাে কারখানার ৮৫% দুর্ঘটনার জন্য দায়া সেখানকামাত্র ৩০% লােক। দুর্ঘটনা প্রবণতা মতবাদকে এখনও অনেকে সমর্থন করে। তবে এককালে এর যতখানি বিশ্বাসযােগ্যত| ছিল এখন ততটা নেই।

. দর্শন : বিভিন্ন কর্মের উপর গবেষণা চালিয়ে দেখা যায় যে, ক্রুটিপূর্ণ দৃষ্টির সাথে দুর্ঘটনা ঘনিষ্টভাবে সম্পর্কিত অর্থাৎ ক্রটিপূর্ণ দৃষ্টি দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।

. স্বাস্থ্য : ফারসার এবং চেম্বার গবেষণা চালিয়ে দেখেন যে শারীরিক স্বাস্থ্য ও মানসিক স্বাস্থ্য যদি অসুস্থ থাকে তবে কর্মী তার কাজে পুরাপুরি মরযোগ দিতে পারে না এবং এজন্য দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।

. ঝুঁকি নেওয়া : রকওয়েলসহ আরও মনােবিজ্ঞানীর গবেষণায় দেখা যায় যে, যারা ঝুঁকি নেয় না, তাদের তুলনায় যারা ঝুঁকি নেয় তারা বেশি দুর্ঘটনা ঘটায়।

. মদ্যপান ও অন্যান্য নেশা : মদ্যপান বা অন্যান্য নেশার কারণে ব্যক্তি তার শারীরিক বা মানসিক ভারসাম হারিয়ে ফেলে যার ফলে দুর্ঘটনা বেশি ঘটে

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, শিল্পক্ষেত্রে কর্মরত মানুষের সাথে সম্পর্কযুক্ত অনেক এবং বিভিন্ন সমস্যাবলির মধ্যে শিল্প দুর্ঘটনা হচ্ছে অন্যতম ব্যয়বহুল সমস্যা।

 

***শ্ৰবণ-দর্শনমূলক পদ্ধতি : শ্রবণ-দর্শনমূলক পদ্ধতি বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। নিম্নে সেগুলো আলােচনা করা হলাে :

 ১. বক্তৃতা পদ্ধতি : অনেক পরীক্ষার্থীকে শ্রেণিকক্ষে বা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বসে প্রতিষ্ঠানের নিয়মকানুন, উদ্দেশ্যাবলি, কাজের প্রকৃতি, প্রক্রিয়া সম্পাদন কৌশল প্রভৃতি সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্যাবলি মৌখিকভাবে উপস্থাপন করে থাকেন। বক্তৃতা সামনাসামনি হতে পারে। প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এ কারণে প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে কোনো বিষয়ে প্রশিক্ষণে তত্ত্বজ্ঞানের পাশাপাশি বাস্তবভিত্তিক অথবা আগের রেকর্ডকৃতও হতে পারে।

২. প্রদর্শন : প্রদর্শনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দিলে সে সহজেই যন্ত্রপাতি ও কলাকৌশলের সাথে পরিচিত হতে পারে। প্রদর্শনের মাধ্যমে যন্ত্রপাতির বর্ণনা ও পরিচালনা পদ্ধতি শিক্ষার্থীর কাছে সহজেই উপস্থাপন করা যায়।

৩. চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন : যন্ত্রপাতির বিভিন্ন দিকের ব্যবহার বিধি সম্পর্কে বলার চেয়ে ছবির মাধ্যমে যন্ত্রপাতি পরিচালনার দিক দেখানাে অপেক্ষাকৃত সহজ। তাই বক্তৃতা ও প্রদর্শনের বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন প্রশিক্ষণ ক্ষেত্রে গুরুত্বপর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৪. মুদ্রিত দ্রব্যাদি : প্রশিক্ষণার্থী যে কোনাে সময় এসব মুদ্রিত দ্রব্যাদির সাহায্যে প্রয়ােজনীয় বিষয় সম্বন্ধে শিক্ষা লাভ করতে পারে। অনেক সময় শুধু বক্তৃতা প্রদানের মাধ্যমে বিষয়গুলােকে সুস্পষ্টভাবে উপস্থাপন করা সম্ভব হয় না সেসব ক্ষেত্রে বক্তৃতার পাশাপাশি মুদ্রিত দ্রব্যাদি শিক্ষার্থীদেরকে সরবরাহ করলে প্রশিক্ষণ অত্যন্ত ফলপ্রসূ হবে বিশেষত জটিল বিষয় শিক্ষার জন্য এ পদ্ধতি খুবই সহায়ক।

৫. অনুকরমিক শিক্ষণ পদ্ধতি : এ পদ্ধতিতে শিক্ষণের বিষয়বস্তু শিক্ষার্থীর নিকট পর্য়ায়ক্রমে বা ধাপে ধাপে উপস্থাপন করা হয়। প্রতিটি পর্যায়ে শিক্ষার্থীকে সক্রিয় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয় এবং সে তার কার্যসম্পাদনের ফলাফল সম্বন্ধে অবগত হতে পারে। প্রতি ধাপে শিক্ষণের ভুলক্রটি সংশোধন করে পরবর্তী ধাপে এগুতে পারে।

৬. সংবেদনশীলতা প্রশিক্ষণ : এ প্রশিক্ষণে কোনাে নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু থাকে না। প্রশিক্ষক, নির্দেশক নেতা হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন না করে বরং নিস্ক্রিয় থাকেন এবং প্রশিক্ষণার্থীদের সক্রিয় হতে উৎসাহ প্রদান করেন। প্রশিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অবকাঠামােগত অবস্থায় পারস্পরিক আদান-প্রদানের মাধ্যমে সচেতনতা ও সমঝােতার সম্পর্ক গড়ে তােলেন। পরিদর্শক ও ব্যবস্থাপকদের প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি খুবই কার্যকর।

৭. সম্মেলন : পরিদর্শক এবং ব্যবস্থাপকদের প্রশিক্ষণের জন্য সম্মেলন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। পরিদর্শকব্যবস্থাপক ও নির্বাহী কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও উৎকর্ষ সাধনের জন্য এ পদ্ধতির গুরুত্ব অত্যাধিক। এ পদ্ধতিতে দলীয়ভাবে সকল সদস্যরা অংশগ্রহণ করতে পারে। তবে প্রত্যেক সদস্যের আলোচনায় অংশগ্রহণের সুযোগ থাকতে হবে এ পদ্ধতিতে অংশগ্রহণকারীরা মতামত বিনিয়ােগ ও আলােচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করে থাকে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, শিল্পক্ষেত্রে নতুন নতুন যন্ত্রপাতি ও কর্ম পদ্ধতি প্রবর্তনের ফলে নতুন একপুরাতন শ্রমিক হতে আরম্ভ করে ব্যবস্থাপক পর্যন্ত সকল স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকেই প্রশিক্ষণ দেয়া দরকার। শিল্পে প্রশিক্ষণে শ্রবণ-দর্শনমূলক প্রক্রিয়া একটি উপযােগী প্রশিক্ষণ পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে একই সাথে শ্রবণ ও দর্শনমূনজ্ঞান অর্জিত হয়।

**কর্ম বিশ্লেষণ : প্রতিষ্ঠানের প্রতিটা কাজের ধরন, বৈশিষ্ট্য নিরূপণ, দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্দিষ্টকরণ এবং এই দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে কোন ধরনের ও যােগ্যতাসম্পূর্ণ জনশক্তির প্রয়ােজন হবে তা নির্ধারণের জন্য প্রয়ােজনীয় তথ্য সংগরহ, মূল্যায়ন ও বিশ্লেষণের এই কাজকে কর্ম বিশ্লেষণ বলে। ভিসেনজু ও রবিস্স এর মতে, কর্ম বিশ্লেষণ হলাে একটি কাজের বিভিন্ন দিকের পদ্ধতিগত বিশ্লেষণ। এটি একটি কারিগরি কৌশল যা দ্বারা দায় কর্তব্য ও জবাবদিহিতাকে নির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।

 

**শিল্পক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যাবলি : নিম্নে শিল্পক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যাবলি আলােচনা করা হলাে- ১. কর্মকুশলতার উন্নয়ন : কর্মকুশলতার উন্নয়ন প্রশিক্ষণের একটি প্রধান উদ্দেশ্য। বিভিন্ন পেশায় সাফল্যতা অর্জনের জন্য বিভিন্ন ধরনের দক্ষতার প্রয়োজন। যেমন- যন্ত্রচালনার কাজের জন্য প্রয়ােজন কারিগরি জ্ঞান ও প্রযুক্তি, হস্তকৌশল এবং সমস্বিত অঙ্গসঞ্চালনমূলক দক্ষতা আবার এ ব্যবস্থায় কাজে সফলতা লাভ করার জন্য প্রয়ােজন মানুষকে প্রভাবিত ও পরিচালিত করার ক্ষমতা, সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা ইত্যাদি।  

২. সংবাদ সরবরাহ : নবনিযুক্ত কর্মচারীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য বুঝিয়ে দেয়া এবং শিল্পকারখানা সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করা প্রশিক্ষণের একটি অন্যতম উদ্দেশ্য।এছাড়া প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মচারীরা চাকরির নিয়মাবলি, প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক কাঠামাে, উৎপন্ন দ্রব্য বাজারজাতকরণ ইত্যাদি তথ্য সম্পর্কে অবগত হতে পারে।

৩. অবচয় রােধ : শিল্পক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হলো উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে অবচয় রােধ করা।এ সমস্ত অপচয় রােধ করে অল্প সময়ে কম শ্রমে বেশি পণ্য উৎপাদন করাই প্রশিক্ষণের একটি বিশেষ উদ্দেশ্য।

৪. উৎপাদন বৃদ্ধি : উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হলে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মচারীদের কর্মদক্ষতার উন্নয়ন, কর্মের প্রতি আগ্রহ, প্রেষণা, মনােবল বৃদ্ধির ব্যবস্থা করতে হবে। তাই উৎপাদনের হার বৃদ্ধি করা প্রশিক্ষণের একটি বিশেষ উদ্দেশ্য।

৫. মনােভাব পরিবর্তন : পূর্বসংস্কার, কর্মচারীদের বিরূপ ও বিদ্বেষমূলক মনােভাব দূর করে সকল শ্রেণির কর্মচারীদের ভিতর সম্ভাব ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠা করা কর্মচারীদের মনােবল বৃদ্ধি করে এবং কাজের প্রতি আগ্রহ ও প্রেষণা সৃষ্টি করে।

৬. দুর্ঘটনা হ্রাস ও নিরাপত্তা বিধান : কাজের ঝুঁকিপূর্ণ দিক সম্পর্কে অবহিত করা এবং দুর্ঘটনা কমানাের জন্য সঠিক কর্মাভ্যাস ও উন্নততর পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেয়া প্রয়োজন।

. সম্ভুষ্টি বৃদ্ধি :  শিক্ষণের সাহায্যে কর্ম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পরিবেশন করে কাজের প্রতি ব্যক্তির। আগ্রহ ও মনােবল বাড়ানাে যায়। যার মাধ্যমে কর্ম সন্ভষ্টি বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়।

৮. মানবিক সম্পর্ক উন্নয়ন : শিল্পক্ষেত্রে মানবিক সম্পর্ক বলতে শ্রমিক এবং শ্রমিক ব্যবস্থাপক সম্পর্ককে বুঝায়  নিজের কর্মদক্ষতা ও কর্মস্পৃহার দ্বারা শ্রমিকদের মধ্যে উদ্যম ও স্পৃহা তৈরি করতে এবং শ্রমিকদের মধ্যে একাত্মঅতার মনােভাব জাগিয়ে তুলে শ্রমিক ব্যবস্থাপকের দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয়সাধন করতে পারেন।


 

**কর্ম বা কায সন্তুটি: কার্য সন্তুষ্টি হলো কাজের অবস্থার প্রতি একজন কর্মীর আবেগমূলক সাড়া বা প্রতিক্রিয়া। কার্য সন্ভুষ্টি কর্মীর উৎপাদনশীলতা ও মনোবল বৃদ্ধিতে প্রত্যক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করে।

Vroom এর মতে, "কাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশের প্রতি একজন কর্মচারীর ধারণাগত বা সামাজিক প্রতিক্রিয়াকে সাধারণত কর্ম সন্তষ্টি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।"

**কর্ম সম্ভষ্টি পরিমাপের পদ্ধতি : কর্ম সন্ভুষ্টি পরিমাপের জন্য অনেকগুলো মানক রচিত হয়েছে। মানকগুলাের  প্রধানত দুই শ্রেণিতে বিভক্ত। যথা : , সামগ্রিক কর্ম সন্ভুষ্টি মানক, , কর্ম উপাদান সন্তষ্টি মানক।

ক. সামগ্রিক কর্ম সম্ভুষ্টি মানক : নিম্নে সামগ্রিক কর্ম সন্ভুষ্টির মানকগুলো আলোচনা করা হলাে :

১. ব্রেফিল্ড রােদ কর্ম সম্ভুষ্টি মানক : কর্ম সন্তুষ্টি পরিমাপের জন্য এ স্কেলে সর্বমোট ১৮টি বিবৃতি রয়েছে। প্রতিটিবিবৃতির সাথে পাঁচটি সম্ভাব্য উত্তর দেওয়া থাকে। যেমন –

 

সম্পূর্ণ     একমত  

একমত 

অনিশ্চিত

একমত নই

একেবারেই একমত নই

 

এগুলাের মধ্য থেকে সঠিক উত্তরটিতে টিক চিহ্ন (V) দিয়ে ব্যক্তি তার কর্ম সম্পর্কিত মনোভাব প্রকাশ করে থাকে। ১৮টি বিবৃতির মধ্যে ৯টি কর্ম সন্তুষ্টি সম্পর্কে অনুকূল মনােভাব নির্দেশ করে থাকে এবং বাকি ৯টি প্রতিকূল মনােভাব নির্দেশ করে। অনুকূল মনােভাব নির্দেশক প্রতিটি বিবৃতির ক্ষেত্রে "সম্পূর্ণ একমত" উত্তরের জন্য ৫, "একমত" ৪ "অনিশ্চিত" ৩. একমত নই" ২ এবং "একেবারেই একমত নই" এর জন্য ১ মান নির্ধারণ করা হয়। পক্ষান্তরে প্রতিকূল মনােভাব নির্দেশক প্রতিটি বিবৃতির জন্য বিপরীত ক্রম মান বা বা নম্বর প্রদান করা হয়। যেমন - ১, , , , ৫ নির্ধারণ করা হয়। ব্রোফিন্ড রােদ মানকের একটি বিবৃতি "আমার চাকরি আমার কাছে একটি সখের জিনিস। এ স্কেলে কোনাে ব্যক্তি সবানম্ন ১৮ থেকে সর্বোচ্চ ৯০ পর্যন্ত স্কোর পেতে পারে। নিরপেক্ষ বিন্দু হচ্ছে ৫৪। কেউ যদি ৫৪ অপেক্ষা অধিক স্কোর গায় তবে কর্ম সম্ভষ্টি এবং ক্রম স্কোর পেলে কর্ম অসম্ভষ্টি নির্দেশ করে।

২. হোপক কর্ম সম্ভষ্টি মানক : এই মানকটি প্রধানত ৪টি অংশে বিভক্ত। প্রথম অংশটি কর্মের ব্যাপারে ব্যক্তির অনুকূল ও প্রতিকূল মনােভাব পরিমাপ করে।যেমন - "আমার চাকরিকে ভালােবাসি,দ্বিতীয় অংশটি চাকরি সম্পর্কে ব্যক্তির অনুকূল ও প্রতিকূল মনােভাবের সময় নির্দেশ করে। এ অংশেও অনুকূল ও প্রতিকূলতার মাত্রা নির্দেশনাকারী ৭টি বিবৃতি রয়েছে। আমার চাকরিকে ঘৃণা করি।"৩য় অংশটি চাকরির পরিবর্তন সম্পর্কিত মনােভাব পরিমাপ করে। এ অংশে চাকরি ত্যাগের ব্যাপারে সর্বাধিক ইতিবাচক থেকে সর্বাধিক নেতিবাচক মনােভাব নির্দেশক ৭টি বিবৃতি রয়েছে। যেমন ..... আমি কখনাে আমার চাকরি ত্যাগ করতে চাই না। এই মানবের চতুর্থ অংশটি অন্যের তুলনায় ব্যক্তির কর্ম সন্তুষ্টির পরিমান নির্দেশ করেএ অংশে ৭টি বিভিন্ন মাত্রার বিবৃতি রয়েছে। যেমন- আমি যে কোনাে লােকের চেয়ে আমার চাকরিকে বেশি পছন্দ করি। আমি যে কোনাে লােকের চেয়ে আমার চাকরিকে বেশি অপছন্দ করি।

, ওয়ার কর্ম সম্ভষ্টি মানক : ওয়ার ও তার সঙ্গীরা এ মানকটি তৈরি করেন। এ মানকের সাহায্যে কোনো কমের অন্ত নিহিত ও বাহ্যিক দিক এবং সমগ্র কর্মটির ব্যাপারে ব্যক্তির স্বব্যক্ত সন্তুষ্টির মাত্রা পরিমাপ করা যায়এই স্কেলে মােট ১৬টি বিবৃতি রয়েছে। এর মধ্যে ৭টি কর্মের অন্তর্নিহিত দিকের সন্তুষ্টি, ৮টি কর্মের বাহ্যিক দিকের সন্তুষ্টি এবং ১টি সামগ্রিক কর্ম সন্ভুষ্টির সাথে সম্পর্কিত। এটি ৬টি বিন্দু বিশিষ্ট মানক, যার বিস্তার অত্যাদিক অসন্ভুষ্টি (১) থেকে সর্বাধিক সন্তুষ্টি (৭) পর্যন্ত।

 

***খ. কর্ম উপাদান সম্ভষ্টি মানক : নিম্নে কর্ম সন্তুষ্টির মানকগুলা বর্ণনা করা হলো :

১. মিনােসােটা সম্ভুষ্টি মানক : এ মানকটির সাহায্যে কর্ম সম্পর্কিত ২০টি উপাদানে ব্যক্তির সন্তুষ্টি পরিমাপ করা যায়। এ উপাদানগুলাে হচ্ছে ক্ষমতা প্রয়ােগ, কৃতি, কার্যাবলি, পদোন্নতি, কর্তৃত্ব, প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা, ক্ষতিপূরণসহ, কর্মীবৃন্দ সৃজনশীলতা, স্বাধীনতা, নৈতিক মূল্যবােধ স্বীকৃতি দায়িত্ব, নিরাপত্তা, সমাজ সেবা, সামাজিক পদমর্যাদা, পরিদর্শন, মানবিক সম্পর্ক, বৈচিত্র এবং কর্ম পরিবেশ।

২. কর্ম বিবরণী সূচক : স্মিথ ও তার সঙ্গীরা এই মানকটি তৈরি করেন। এই মানকের সাহায্যে কোনো কর্ম সম্পর্কিত পাঁচটি উপাদানের সন্তুষ্টি পরিমাপ করা যায়। এ উপাদানগুলো হচ্ছে কাজ, বেতন, পদোন্নতি, সহকর্মী এবং পরিদর্শক উক্ত পাঁচটি উপাদানের সন্ভুষ্টি পরিমাপের জন্য সমগ্র মানকটিকে পাঁচটি উপ-অভীক্ষার সমন্বয়ে গঠিত। সম্পূর্ণ মানকটিতে ৭২টি পদ রয়েছে। এর মধ্যে কাজ পরিদর্শক এবং সহকর্মী এ তিনটি উপ-অভীক্ষার প্রত্যেকটিতে ১৮টি করে পদ এবং বেতন ও পদোন্নতি এ দু'টি উপ-অভীক্ষারণ করে পদ রয়েছে।

প্রতিটি পদের জন্য তিন ধরনের উত্তর (হ্যা, না, নীরব) এর ব্যবস্থা রয়েছে। হ্যা উত্তরের জন্য ও না উত্তরের জন্য ০ এবং নীরবের জন্য ১ এর প্রতিটি নেতিবাচক পদের স্কোরিং পদ্ধতি ইতিবাচক পদের পদ্ধতির হুবহু বিপরীত।

** কার্য সম্ভষ্টি ও উৎপাদনশীলতার মধ্যে সম্পর্ক : কার্য সন্তুষ্টি বিভিন্ন উপায়ে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে প্রভাববিস্তার করে। মনােবিজ্ঞানী ভ্রুমের গবেষণায় কার্য সন্তুষ্টি ও উৎপাদনশীলতার সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়। Porterএবং Lawler কিভাবে কার্য সন্তুষ্টি অধিক উৎপাদনে সাহায্য করে সে সম্পর্কে একটি মডেলও প্রদান করেছেন। নিম্নে কার্য সন্তুষ্টি ও উৎপাদনশীলতার মধ্যে সম্পর্ক আলােচনা করা হলাে : ১.কর্মক্ষেত্রে কোনাে কর্মী যখন সন্তুষ্টি লাভ করে, তখন তার কর্ম আচরণ উন্নত হয়। উন্নত কর্ম আচরণ কর্মীর কার্যসম্পাদনের মান ও মাত্রা উভয়ই বৃদ্ধি করে।

.কার্য সন্তুষ্টির ফলশ্রুতিতে কর্মীর মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা ও দায়িত্ববােধের সৃষ্টি হয়। সে সর্বাত্মকভাবে কাজে আত্মনিয়ােগ করে এবং প্রতিটি কাজ সন্তুষ্ট চিত্তে সম্পাদন করে। এতেও প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।

.কার্য সন্ভুষ্টির ইতিবাচক প্রভাবে শিল্পে নিয়াজিত কর্মীরা সঠিকভাবে প্রেষণাপ্রাপ্ত হয় এবং এর ফলশ্রুতিতে উৎপাদন বৃদ্ধির সুযােগ ও সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়।

৪. কর্মীরা কর্মক্ষেত্রে যখন সন্ভুষ্ট থাকে তখন তাদের মধ্যে কর্মত্যাগ ও কর্মে অনুপস্থিতির প্রবণতা হ্রাস পায়। কর্মীরা প্রতিটি কার্যসম্পাদনে আনন্দবােধ করে এবং তাদের উন্নত মানসিক স্বাস্থ্যও সংরক্ষিত হয়। এ অবস্থা সামগ্রিকভাবে শিল্পের ও কর্মীদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

.কার্য সন্ভুষ্টির ফলে শৈল্পিক দুর্ঘটনা ও অপচয়ের মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়। কর্মী ও ব্যবস্থাপনার সম্পর্ক উন্নত হয়। কর্মীদের মনমানসিকতা, দৃষ্টিভঙ্গি, আচার-আচরণ ইত্যাদির ব্যাপক পরিবর্তন সূচিত হয়। এসবের ফলাফল হিসেবে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির নিশ্চিত সুযােগ সৃষ্টি হয়।

.কর্মক্ষেত্রে সন্তুষ্ট কর্মী কাজের প্রতি গঠনমূলক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে এবং প্রতিটি ক্ষেত্রেই অংশগ্রহণমূলক মনোেভাবের পরিচয় দেয়। কর্মীর এরূপ মনােভাব ও দৃষ্টিভঙ্গি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, কার্য সন্তুষ্টি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে। এ কথা বেশ জোরের সাথেই বলা যায় যে, সন্ভুষ্ট কর্মীরাই সৃষ্টি করে উৎপাদনশীলতার মাইলফলক।

**মনােবৈজ্ঞানিক অভীক্ষা কাকে বলে? বিনেসিমো বুদ্ধি অভীক্ষা আলােচনা : মনােবিজ্ঞানী এনাস্ট্যাসি-এর মতে, "মনােবৈজ্ঞানিক অভীক্ষা বলতে বুঝায় ব্যক্তির মানসিক বৈশিষ্ট্যাবলির পরিমাণগত মূল্যায়ন বা পরিমাপের পদ্ধতি। এ অভীক্ষা সম্পর্কে তিনি আরাে বলেন, মনােবৈজ্ঞানিক অভীক্ষা হলাে কোনাে আচরণের বস্তুনিষ্ঠ এবং আদর্শায়িত পরিমাপ

 বিনেসিমো বুদ্ধি অভীক্ষা : ফরাসি মনােবিজ্ঞানী আলফ্রেড বিনে এবং তাঁর সহযােগী থিওডোর সিমো ১৯০৫ সালে প্রথম বুদ্ধি অভীক্ষা উদ্ভাবন করেন। এ অভীক্ষাটি বিনেসিমো স্কেল নামে পরিচিত। তাঁর ফুক্তি, পার্থক্য নির্ণয়, বােধগম্য ও বিচারক্ষমতা এবং অন্যান্য বিষয়ে কতকগুলাে প্রশ্ন তৈরি করে তা স্কুলে যেসব ছাত্র সাধারণ কৃতিত্বের পরিচয় দিচ্ছিল তাদের উপর প্রয়ােগ করেন। যেসব ছাত্র যে প্রশ্নগুলাের উত্তর দিতে সক্ষম হয়েছিল, তারা সে ধরনের ৩০টি প্রশ্ন নির্বাচন করে সহজ হতে কঠিন এভাবে ক্রমান্বয়ে সাজিয়ে একটি স্কেল তৈরি করেন। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল, স্বল্প বুদ্ধিসম্পন্ন ছাত্রছাত্রীরা এ স্কেলের কয়টি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে তার ভিত্তিতে তাদের মানসিক বিকাশ পরিমাপ বা নির্ধারণ করা। এ অভীক্ষায় কিছু ক্রুটি ছিল। যেমন- এর বিষয়গুলাে বয়সের অনুপাতে সাজানা ছিল না। এছাড়া কিছু বিষয় ছিল যার জন্য ছাত্রদের বিশেষ শিক্ষাদানের দরকার হতাে। ১৯৮০ সালে বিনেসিমাে অভীক্ষার দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়। এ সংস্করণে বিষয়গুলাে বয়স অনুপাতে সাজানাে হয়। এখানে সকল বিষয়কে (প্রশ্নক) ৩ থেকে ১৩ বছর পর্যন্ত ওুরে ভাগ করা হয়। প্রত্যক বয়সের জন্য বা উপঅভীক্ষার জন্য ৪ থেকে ৮টি প্রশ্ন রাখা হয়। এ অভীক্ষায় শিশুদের কোন বিশেষ শিক্ষাদানের প্রয়ােজন হয় না। কারণ এ অভীক্ষায় এমন ধরনের প্রশ্ন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা ঐ বয়সের শতকরা ৬০-৭৫ ভাগ শিশু সম্পাদন করতে সক্ষম হয়। বিনেসিমো অভীক্ষার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এ অভীক্ষাতে প্রথম মানসিক বয়সের (Mental age) ধারণা ব্যবহার করা হয়। কারও প্রকৃত বয়স যাই হােক না কেন, সে যে বয়সের উপযােগী প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম তাই হলাে তার মানসিক বয়সজন্মের পর হতে যে বয়স গণনা করা হয় তাকে প্রকৃত বয়স বলা হয়। মানসিক বয়স প্রকৃত চেয়ে বেশি হতে পারে আবার কমও হতে পারে। যেমন- ৫ বছর বয়সের শিশু যদি ৭ বছর বয়সের উপযোগী প্রশের উত্তর নির্ভুলভাবে দিতে পারে, তাহলে তার মানসিক বয়স ৭ বছর। আবার ঐ শিশু যদি ৫ বছরের উপযোগী প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে ব্যর্থ হয় এবং কেবল ৪ বছরের উপযোগী প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারে, তাহলে তার মানসিক বয়স হবে বছর। আবার ঐ শিশুটি যদি ৫ বছরের উপযােগী প্রশ্নগুলার সঠিক উত্তর দিতে সমর্থ হয় কিন্তু ৬ বছর  বয়সের উপযােগ প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ হয় তাহলে তার মানসিক বয়স হবে ৫ বছর। বুদ্ধির মূল্যায়নের ক্ষেত্রে প্রথম শিশুটি অধিক বুদ্ধিসম্পন্ন, দ্বিতীয় শিশুটি ক্ষীণ বুদ্ধিসম্পন্ন এবং তৃতীয় শিশুটি সাধারণ বুদ্ধিসম্পন্ন বলে পরিগণিত হবে। আবার এমন যদি হয়, কোন শিশু ৭ বছরের উপযোেগী সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে এবং ৮ বছরের উপযােগী অর্ধেকগুলাে প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম হয় কিন্তু ৯ বছরের উপযােগী কোন প্রশ্নেরই উত্তর দিতে পারে না। এক্ষেত্রে শিশুটির মানসিক বয়স হবে ৭ বছর ৬ মাস। বিনেসিমোর অভীক্ষার তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয় বিনের মৃত্যুর পূর্বে ১৯১১ সালেএ অভীক্ষায় প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যও বিভিন্ন প্রশ্ন সংযােজিত হয়।

উপসংহার : উপরিউক্ত আলােচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, শিল্পকারখানায় এবং ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে কর্ম

নির্বাচনে মনস্তাত্ত্বিক অভীক্ষা একটি যুগােপযােগী এবং তথ্য সমৃদ্ধ প্রক্রিয়া। মনােবৈজ্ঞানিক অভীক্ষাগুলাে যথার্থ এবং সুষ্ঠুভাবে প্রয়ােগ করে অতি সহজেই উপযুক্ত কর্মী নির্বাচন করা সম্ভব। একারণেই শিল্পোন্নত দেশে ক্রমেই এর পরিসর এবং বৈচিত্র্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।

***সময় ও পতি অনুধ্যানের নীতিসমূহ : অনেক গবেষণা করে গিলরে ও তান সহকর্মীরা সময় ও গতি অনুধ্যানের মাতিসমূহ নির্ধারণ করেছেন। এ নীতিসমূহ বার্নস সুন্দরভাবে উপন্থাপন করেছেন। এপ্রলােকে তারা কয়েকট এধান ভাগে ভাগ করেছেন। নিচে সময় ও গতি অনুধ্যানের নীতিসমূহ আলােচনা করা হলাে

১. শযীরের বিভিন্ন অঙ্গের উপযুক্ত ব্যবহার সম্পর্কিত নীতিসমূহ : নিচে শরীরের বিতিন্ন আঙ্গের উপযুক্ত ্যবহারসম্পর্কিতি নীতিসমূহ উল্লেখ করা হলাে ।

, দুই হাতে গতি সঞ্চালন একই সময়ে শুরু ও শেষ করতে হবে।

, নির্ধারিত সময়ে কার্য বিরতি ছাড়া একসঙ্গে দুই হাতের কাজ বন্ধ করা ঠিক নয়।

, বাহর গতি সুযম, সমসাময়িক এবং বিপরীতমুখী হওয়া উচিত।

, কার্য সম্পাদনের সময় কাধ ও বাহুর সঞ্চালনের চেয়ে হাতের অগ্রভাগ সঞ্চালন বেশি হওয়া উচিত। কেননা হাতের কজি ও আডুল নড়াচড়া করতে যে সময় শক্তির দরকার হয় তার চেয়ে বেশি সময় ও শক্তির দবকার হয় কাধ ওবাহু নড়াচড়া করতে।

, হাতের সাবলীল ও বিরামহীন বক্রগতি, সােজা কিন্তু আকস্মিক পরিবর্তনশীল গতির চেয়ে বেশি কার্যকর।

, নিয়্ত্রিত গতির তুলনায় প্রক্ষেপণমূলক গতি অধিক সহজ, দ্রুত ও নির্ভুল। কাজ এমনভাবে সুবিন্যস্ত করতে হবে, যেন সহজ ও ছন্দবন্ধ গতিতে সম্পন্ন করা যায়।

২. অধিক কাজ করার পরিবেশ সৃষ্টি সম্পর্কিত নীতি : কর্ম সময়ে অধিক কাজ আদায় করতে হলে যে পরিবেশ দযকার সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।যেমন- কাজের সময় জিনিসপত্রগুলো অর্ধবৃত্তাকারে সাজানাে থাকে তাহলে কাজ বেশি করা যায়।

৩. কর্মস্থল বিন্যাস সম্পর্কিত নীতি : কর্মস্থলের পরিবেশ দ্রুতগতিতে কার্য সম্পাদনের উপযােগী করে বিন্যাস করা। যেমন- যন্ত্রপাতি এবং উপকরণ একটা নির্দিষ্ট স্থানে নাগালের মধ্যে এবং সামনের দিকে অর্ধবৃত্তাকারে রাখা। যাতে দুতগতিতে কাজ সম্পন্ন করার সময় দরকারি যন্ত্রপাতি পেতে অসুবিধা না হয় এবং পিছনের দিকে তাকাতে না হয়।

8. যন্ত্রপাতির উন্নততর নকশা প্রণয়ন সম্পর্কিত নীতি : যন্ত্রপাতি নির্মাণের পরিকল্পনা বা নকশা করার সময় ব্যক্তির দৈহিক ও মানসিক ক্ষমতা ও অক্ষমতার প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। বিভিনন্ন গবেষণা হতে প্রমাণিত হয়েছে যে, এসব নীতি প্রয়াগের ফলে কার্য সম্পাদনের অপ্রয়ােজনীয় গতি হ্রাস পেয়েছে, সময়ের অপচয় রােধ হয়েছে এবং উৎপাদনের হার বৃদ্ধি পেয়েছে।

উদাহরণ স্বরূপ কক্স (Cox, 1961) এর গবেষণার কথা তুলে ধরা যায়, যেখানে কর্মস্থলের সঠিক পরিকল্পনার ফলে কার্য সম্পাদনের সময় হ্রাস পায়। এ গবেষণায় আরাে প্রমাণিত হয় যে, কাজের অপ্রয়ােজনীয় যন্ত্রপাতি ও উপকরণাদি কর্মচারীর সামনে এবং নিকটে নির্দিষ্ট স্থানে রাখার ব্যবস্থা করলে তার পক্ষে বেশি সহজ ও দ্রুতগতিতে কাজ করা সম্ভব হয়। অনুরূপ অন্য একটি গবেষণায় প্রমাণিত হয় যে, কর্ম পদ্ধতির উন্নয়ন এবং যন্ত্রপাতি ও উপকরণাদির সঠিক পরিকল্পনার ফলে কার্য সম্পাদনের সময় কিছুটা হ্রাস পায় এবং কর্মদক্ষতা বেড়ে যায়।

**গতি অনুধ্যান : কোন কার্য সম্পাদনে অবাঞ্জিত গতি হাস করে সর্বাধিক গতিবিধি উদ্ভাবনের লক্ষ্যে অঙ্গ- প্রত্যঙ্গের গতি পর্যালােচনাকে গতি অনুধ্যান বলা হয়। গতি অনুধ্যানের উদ্দেশ্য হলো কোনো কাজ করতে হলে যে অঙ্গ সঞ্চালনের দরকার তা পরিবর্তিত করে সহজ এবং সংক্ষিপ্তভাবে করা যায় কি না তা বিবেচনা করা। গাতি অনুধ্যানের মূল কথা হলাে অপ্রয়োজনীয় গতি হ্রাস করে কার্যকরী গতি নিরূপণ করে শিল্প কারখানার উৎপাদন বৃদ্ধি করা।

গিলব্রেথের গবেষণা : টেইলরের সময়ের কিছু দিন পর ব্রিটিশ কৌশলী ফ্রাঙ্ক গিলব্রেথ ও তার স্ত্রী এবং মনােবিজ্ঞানী লিলিয়ান গিলব্রেথ সর্বপ্রথম গতি অনুধ্যান আরম্ভ করেন। ১৮৮৫ সালে গিলব্রেথ যখন ইমারত প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করতেন, তখন তিনি দেখতে পান যে, শ্রমিকরা ইট তলতে বিভিন্ন ধরনের প্রয়ােজনীয় গতিধারা অবলম্বন করছে এবং বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কৌশলে ইট তুলছে। এ সমস্যার সমাধানের জন্য তিনি গবেষণা আরম্ভ করেন। তিনি শ্রমিকদের ইট তােলার সময় বিভিন্ন কাজের চিত্র নেন। তারপর তা বিশ্লেষণ করে অপ্রয়োজনীয় কাজের অংশ বাদ দিয়ে নতুন কেশিল তৈরি করেন। এ নতুন কৌশল তিনি শ্রমিকদের ১৮টি ভিন্ন ভিন্ন গতি কমিয়ে ৫টিতে আনেন। এর ফলে প্রতিটি শ্রমিক আগে যেখানে ১২০টি ইট তুলতে পারতাে সেখানে সে নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করে ৩৫০টি ইট তুলতে সক্ষম হয়।

 

**সময় অনুধ্যান : কোন কাজকে ছােট ছােট অংশে বিভক্ত করে ঐ কাজের প্রতিটি অংশ সম্পাদন করতে কোন ব্যাক্তির যে সময়ের প্রয়ােজন হয়, তার পর্যালােচনাকে সময় অনুধ্যান বলে। সময় অনুধ্যানের প্রথম উদ্ভাবিক এফ, ডব্লিউ টেইলর। ১৮৭৮ সালে টেইলর মিডভেল স্টিল কোম্পানিতে যােগদান করেন। ১৮৮১ সালে তিনি সময় অনুধ্যানের উন্নয়নের জন্য লৌহ শ্রমিকদের নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করেন। কোন কার্য সম্পাদন করার জন্য প্রয়ােজনীয় সময়ের আদর্শমান নির্ণয় করাই ছিল এ অনুধ্যানের প্রধান উদ্দেশ্য। তাই তিনি কোনা নির্দিষ্ট কাজকে কতকগুলাে ছোট ছোট অংশে বিভক্ত করে এগুলাের প্রতিটি অংশ সম্পন্ন করতে একজন দক্ষ কর্মচারীর যে সময়ের প্রয়ােজন হয় তা পর্যালোচনা এবং পরিমাপ করে উক্ত কাজটি সম্পাদনের আদর্শ সময় এবং সঠিক মজুরি নির্ধারণ করেছিলেন।

 

**মনোবৈজ্ঞানিক অভীক্ষা : অভীক্ষা বলতে কোনাে কিছু পরিমাপের কৌশলকে বুঝায়। আর মনোবৈজ্ঞানিক

অভাক্ষা বলতে বুঝায় যার মাধ্যমে ব্যক্তির কোনাে বিশেষ কার্যসম্পাদন করার মানসিক ক্ষমতা ও মানবিক গুনাবলী রয়েছে কি না তা যাচাই করা যায়অন্যকথায় বলা যায়, ব্যক্তির কোনাে বৈেশিষ্ট্য বা আচরণের আদর্শায়িত পরিমাপকে মনােবৈজ্ঞানিক অভীক্ষা বলে। এ অভীক্ষার সাহায্যে ব্যক্তির কোনাে বিশেষ কার্যসম্পাদন করার মানসিক এবং মনবিক গুনাবলী আছে কী না তা যাচাই করা যায়। আর একটু সহজভাবে বলা যায়, মনােবৈজ্ঞানিক অভীক্ষা হলাে এমন একটি আধুনিক কৌশল যার মাধ্যমে প্রার্থী সম্পর্কে পূর্ব থেকে অনুমান করা যায় এবং তাকে প্রশিক্ষণ দিলে সে কতটুকু সফলতা অর্জন করবে তা অনুধাবন করা যাবে।

মনােবিজ্ঞানী এনাস্ট্যাসি-এর মতে, "মনােবৈজ্ঞানিক অভীক্ষা বলতে বুঝায় ব্যক্তির মানসিক বৈশিষ্ট্যাবলির পরিমাণগত মূল্যায়ন বা পরিমাপের পদ্ধতি। এ অভীক্ষা সম্পর্কে তিনি আরাে বলেন, মনােবৈজ্ঞানিক অভীক্ষা হলাে কোনাে আচরণের বস্তুনিষ্ঠ এবং আদর্শায়িত পরিমাপ।

** সাক্ষাৎকার পদ্ধতির সংজ্ঞা দাও।

উত্তর ॥ ভূমিকা : সাক্ষাৎকার পদ্ধতি আধুনিক সমাজ মনােবিজ্ঞানীদের কাছে খুবই গ্রহণযােগ্যতা অর্জন করেছে। তাদের নিকট এর গুরুত্ব শুধু একটি পদ্ধতি নয়; বরং এটা একটি সামাজিক প্রক্রিয়া। নানা ক্ষেত্রে এ পদ্ধতিটি ব্যবহৃত হয়। সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী সাধারণত জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে সাক্ষাৎকার প্রদানকারীর কাছ থেকে তথ্যসংগ্রহ করে গাকেন। এক্ষেত্রে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীকে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদানের দরকার হয়। তবে এ পদ্ধতি সবক্ষেত্রে ব্যবহার করা সম্ভব নয়।

সাক্ষাৎকার পদ্ধতি : সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী এবং সাক্ষাৎকার প্রদানকারী সামনাসামনি বসে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে যে তথ্যসংগ্রহ করে তাকে সাক্ষাৎকার পদ্ধতি বলে। আরাে একটু সহজভাবে বলা যায় কোনাে বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য আলাপ-আলােচনার মাধ্যমে যে তথ্যসংগ্রহ করা হয় তাকে সাক্ষাৎকার পদ্ধতি বলে।

মনােবিদ ফ্রেডারিক এন কারলিঙ্গার (Fredaric N. Kerlinger)-এর মতে, "সাক্ষাৎকার পদ্ধতি হলাে মুখােমুখি আন্তঃব্যক্তিক অবস্থান, যাতে সাক্ষাৎ গ্রহীতা উত্তর প্রদানকারী হিসেবে সাক্ষাৎকার প্রদানকারীকে সমস্যা নিরসনকল্পে উত্তর পেতে পরিকল্পিতভাবে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে।"

 

***দুর্ঘটনার প্রবণতা হচ্ছে দুর্ঘটনা পুনরাবৃত্তির একটি সাধারণীকৃত ধারা যা কিছু লােকের কার্যত যেকোন পরিস্থিতিতে। দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি করার ঝোকের মধ্যে প্রতিফলিত। এ অর্থে দুর্ঘটনা প্রবণতা নামক পদটি কেবল অনুরূপ একটি ঝােক বা প্রবণতার বর্ণনাই দেয় কিন্তু ঐ ধারা সৃষ্টিকারী ব্যক্তিগত কারণগুলাে ব্যাখ্যা করে না। যারা দুর্ঘটনায় বিশ্বাসী তাদের মতে দুর্ঘটনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কান কোন লােকের যুক্তিসঙ্গতভাবে দৈব ঘটনা বলে ব্যাখ্যা যােগ্য দুর্ঘটনার চেয়ে বেশী দুর্ঘটনা সংঘটিত করার প্রবণতা আছে কথাটির সমর্থনে একটি গবেষণা রিপোের্টের উল্লেখ করা যায়। এ গবেষণায় তিনটি কাজে নিয়ােজিত কর্মচারীদের দুর্ঘটনার এটি সূচক তৈরী করা হয়েছিল। এ সূচকের ভিত্তি ছিল প্রতি এক হাজার কর্মঘন্টায় সংঘটিত দুর্ঘটনা পৌনঃপুন্য এবং ছয়মাস দীর্ঘ পৃথক দুটো সময়কালের জন্য আলাদাভাবে তা তৈরী করা হয়েছিল।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, দুর্ঘটনা প্রবণ বলে চিহ্নিত করার মতাে ব্যক্তিত্বের একটি ধরণ আছে বলে যে যুক্তি দেখানাে হয় সেটিকে সমর্থন করার মতাে পর্যাপ্ত প্রমাণ এখন পর্যন্ত নেই। তাই অনেকের মতে, পরবর্তীতে যথেষ্ট প্রমাণ দ্বারা সমাহিত না হওয়া পর্যন্ত অনুরূপ আলােচনায় এ পদটির ব্যবহার এড়িয়ে যাওয়াই শ্রেয়। তারপরও শিল্প মনােবিজ্ঞানে দুর্ঘটনা প্রবণতার গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না।

 

**কর্মী বিশ্লেষণ : কার্যসম্পাদনের জন্য কর্মীর উপযুক্ত যােগ্যতা ও গুণাবলির বিচার-বিশ্নেষণকে কর্মী বিশ্লেষন বলে। অর্থাৎ, সুষ্ঠুভাবে কার্যসম্পাদনের জন্য কর্মীর কী কী যােগ্যতা ও গুণাবলি থাকা দরকার তা যাচাই-বাছাই ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাকে কর্মী বিশ্লেষণ বলে। কোনাে প্রতিষ্ঠান যথাযথভাবে পরিচালনার জন্য যােগ্য কর্মীর বিকয্ধ নেই। যােগ্য কর্মী নিয়ােগের পূর্বে কর্ম উপযােগী যােগ্যতাবলি বিচার-বিশ্লেষণ করে একটি তালিকা প্রযত করা হয়। এ তালিকা থেকে সঠিক কর্মী নিয়ােগ দেওয়া হয়। কর্মী বিশ্লেষণে কর্মীর দৈহিক বৈশিষ্ট্যাবলি যেমন-- স্বাস্থ্য, শক্তি-সামর্থ্য, দৈহিক যােগ্যতা এবং দৈহিক ত্রটির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। এছাড়াও কর্মীর মানসিক বৈশিষ্ট্যাবলি যেমন- কর্মনৈপুণ্য, আবেগপ্রবণতা, সদগুণ ইত্যাদির ওপর গুরুত্বারােপ করা হয়। কর্মী বিশ্লেষণের অন্যতম উদ্দেশ্য হলাে কর্মীর দক্ষতা ও জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য প্রয়ােজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। কর্মী বিশ্লেষণের মাধ্যমে কর্মচারী নির্বাচন প্রক্রিয়ার উন্নতি সাধন এবং কর্মীদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রকল্পের ব্যবস্থা করা যায়। এছাড়া শিল্প প্রতিষ্ঠানের সকল কাজ এক রকম হয় না। এবূপ কার্যসম্পাদনে কখনাে কখনাে ভিন্ন পদ্ধতি প্রয়ােগের প্রয়ােজন দেখা দেয় কিংবা ভিন্ন দক্ষতাসম্পন্ন লােকের প্রয়ােজন হয়। তাই কর্মী বিশ্লেষণের মাধ্যমে শিল্প প্রতিষ্ঠানে কার্যকর পদ্ধতি উদ্ভাবন করা হয়।

***শিল্প মনােবিজ্ঞান কী ফলিত মনোবিজ্ঞান? যুক্তিসহ আলোচনা কর: চিকিৎসা ক্ষেত্রে, শিল্পক্ষেত্রে, শিক্ষাক্ষেত্রে এবং খেলাধুলার ক্ষেত্রেও ব্যাপক উন্নতি লাভ করেছে। ফলিত মনােবিজ্ঞান হিসেবে শিল্প মনোবিজ্ঞান : শিল্প মনােবিজ্ঞান আসলে ফলিত মনােবিজ্ঞান কি না তা  নির্ণয় করতে হলে এ দুইটি বিষয়ে যথার্থ জ্ঞান অর্জন করা দরকার। এ কারণে ফলিত মনােবিজ্ঞান এবং শিল্প মনােবিজ্ঞান সম্পর্কে নিম্নে আলােচনা করা হলাে :*ফলিত মনােবিজ্ঞান : মানুষের ব্যবহারিক কল্যাণে মনােবিজ্ঞানকে যথার্থভাবে প্রয়ােগ করার জন্য নানা ধরনের পদ্ধতি ও কৌশল সৃষ্টি করাই ফলিত মনােবিজ্ঞানের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য। এ শাখা মনোবিজ্ঞানের সকল ত্ত্বীয় জ্ঞানকে ব্যবহার করে মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের নানা ধরনের সমস্যা সমাধানের প্রয়াস চালায়। প্রত্যেক ফলিত মনােবিজ্ঞানীই মনােবিজ্ঞান সম্পর্কে বাস্তব এবং মৌলিক জ্ঞান লাভ করেন এবং অর্জিত জ্ঞান বাস্তব জীবনের সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়ােগ করে থাকেন। ফলিত মনােবিজ্ঞানী মানুষের নানা প্রকার সমস্যা সমাধানের জন্য মনোবিজ্ঞানের মূলনীতিগুলো ব্যবহার করেন। আরও সাধারণভাবে বলা যায়, ফলিত মনােবিজ্ঞান মনােবিজ্ঞানের পরীক্ষণলন্ধ তথ্য, তত্ত্ব এবং মনোবৈজ্ঞানিক মূলনীতিসমূহকে প্রয়োেগ করে মানুষের নানা ধরনের সমস্যা সমাধানের প্রয়াস চালায়। তাই বর্তমানে ফলিত মনােবিজ্ঞানের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি লক্ষ করা যায়।

*শিল্প মনােবিজ্ঞান : শিল্প মনােবিজ্ঞান মূলত ফলিত মনােবিজ্ঞানের একটি তাৎপর্যপূর্ণ শাখা। এ শাখা শিল্প সংক্রান্ত নানা প্রকার সমস্যা সমাধানে এবং সঠিক উপায় নিরূপণে মনােবিজ্ঞানের সাধারণ পদ্ধতিগুলাে প্রয়ােগ করে থাকে। শিল্প মনােবিজ্ঞান মনােবিজ্ঞানের সেই শাখা, যেখানে শিল্পে কর্মরত ব্যক্তিবর্গের আচরণ নিয়ে আলোেচনা এবং এসব আচরণ শিল্পে কর্মরত ব্যক্তিদের উৎপাদনের ব্যাপারে কি ধরনের প্রভাব ফেলে তা নিয়ে পর্যবেক্ষণ ও পর্যালােচনা করে। শিল্পকে সাধারণভাবে পণ্য ও সেবা উৎপাদনের যন্ত্র বা কৌশল হিসেবেই গণ্য করা হয়। কিন্তু শিল্প মনােবিজ্ঞানে শিল্পের পরিসর বা পরিধি আরও ব্যাপকতর।

*শিল্প মনােবিজ্ঞানের উদ্দেশ্য : শিল্প মনােবিজ্ঞানের প্রধান উদ্দেশ্য হলাে শিল্পকারখানায় উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করা এবং উৎপাদনের পরিমাণগত এবং গুণগত উভয় দিকেরই সমৃদ্ধি সাধন করা।  তাছাড়া কর্মচারী কর্মকর্তাদের মানসিক স্বাস্থ্য সংরক্ষণের জন্য কর্মের উপযুক্ত মানসিক এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরি করা, শিল্পক্ষেত্রে দুর্ঘটনা হ্রাস করা এবং কর্মচারীদের কর্মসন্তুষ্টি নিশ্চিন্ত করা শিল্প মনােবিজ্ঞানের অপর একটি উল্লেখযোগ্য লক্ষ্য। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য শ্রমিকদের মধ্যে সৌহাদ্যপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা, শ্রমিক, মালিক সম্প্রীতি স্থাপন, কর্মী নির্বাচন, কর্মে কুতিত্ব অর্জন, কর্মচারীদের সম্মান বৃদ্ধি, সৃজনশীলতার বিকাএবং উৎকর্ষ সাধন বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিল্প মনােবিজ্ঞানিগণ সাহায্য সহযােগিতা করে থাকেন।

*শিল্প মনােবিজ্ঞানের আলােচ্য কার্যাবলি : শিল্প মনােবিজ্ঞানের প্রধান কাজ হলাে শিল্প সম্পর্কিত ক্ষেত্রে ব্যক্তির আচরঅনুসন্ধান করা এবং আচরণ সম্পর্কিত এসব সংগহীত জ্ঞান শিল্প ও কারবারে নিয়ােজিত মানুষের মানসিক সমস্যা সমাধানে ব্যবহার করা। শিল্পকারখানার একদিকের বিশাল অংশ জড়ে আছে যন্ত্রপাতি এবং শিল্পের উৎপাদন এবং অপরদিকে আছে কমে নিযুক্ত কর্মীদের আচরণ। কর্মীদের মানসিক অবস্থা, আশা-আকাঙ্ক্ষা, মানসিক শক্তি, যােগ্যতা, মনোেল আচরইত্যাদি নির্ধারণ করে শিল্পে কর্মরত জনশক্তির সর্বাধিক সদ্বাবহার এবং সর্বাপেক্ষা উৎপাদন আদায় করাই শিল্প মনােবিজ্ঞারে প্রধান কাজ।

*শিল্প মনােবিজ্ঞানের আলোচিত বিষয় : মানুষের আচরণের যেসব দিক শিল্পে পণ্য ও সেবার উৎপাদন, বণ্টন এবং ভােগের সাথে সম্পর্কযুক্ত, সেসব বিষয় নিয়ে শিল্প মনােবিজ্ঞান আলােচনা করে। কর্ম বিশ্লেষণ, কর্মচারী নির্বাচন, শিল্পে প্রশিক্ষণ, কর্মসন্ভুষ্টি এবং কর্মীর মানসিক শক্তি বৃদ্ধি, শিল্প শ্রমিকদের দক্ষতার বিকাশ, ক্লান্তির কারণ, দুর্ঘটনার প্রাথমিক কারণ, উৎপাদনের ধীর গতি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে শিল্প মনােবিজ্ঞান কঠোর আলােচনা এবং পর্যালোচনা ঢালায়। তাছাড়া শিল্প মনােবিজ্ঞান শিল্পকারখানা এবং ব্যবসায় বাণিজ্যের সাথে সম্পর্কযুক্ত মানুষের আচরণ, সমস্যা এবং এর সমাধান নিয়েও বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ নিয়ে ব্যস্ত থাকে।

*শিল্প মনােবিজ্ঞানের পরিসর : শিল্প মনােবিজ্ঞান মনােবিজ্ঞানের একটি ব্যাপক জনপ্রিয় শাখা। বিশ্বের প্রত্যকটি দেশেই কমবেশি শিল্পকারখানা রয়েছে। আর যেখানেই শিল্পকারখানা রয়েছে, সেখানেই রয়েছে দুর্ঘটনার ভয়, কর্মচারীদের অসন্ভুষ্টি এরকম নানা সমস্যা। তাই এসব সমস্যা সমাধানের জন্য শিল্প মনোবিজ্ঞান ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে পারে। বৃহত্তর অর্থে শিল্প মনােবিজ্ঞান শিল্পে মানব সম্পর্ক উৎপাদন, উপযোগিতা, যানবাহন, যােগাযোগ, কৃষি, খনিজদ্রব্য, ব্যবসায় বাণিজ্য এবং নানা প্রকার সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত। এ কারণে এ শাখার পরিধি এবং পরিসর ব্যাপক হতে ব্যাপকতর হচ্ছে, যা ফলিত মনােবিজ্ঞানের প্রসারণের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

উপসংহার : উপরিউক্ত আলােচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, শিল্প মনােবিজ্ঞানের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, বিষয়বস্তু, পরিসর পরিধি, আলােচ্যবিষয়, কার্যাবলি সবই মানব আচরণের ব্যবহারিক বা প্রায়ােগিক দিককে কেন্দ্র করে সুসমমণ্ডিত। তাই একথা নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, শিল্প মনােবিজ্ঞান একটি ফলিত মনাবিজ্ঞান। কারণ শিল্প মনোবিজ্ঞান শিল্পের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রয়ােগ করে যথাযথ সুফল পাওয়া যায় এবং শিল্পের প্রত্যাশিত উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়। বর্তমান কালে শুধু শিল্প মনােবিজ্ঞানই নয়, শরীরতত্ত্ব মনােবিজ্ঞান, শিক্ষা মনােবিজ্ঞান, নির্দেশনা মনােবিজ্ঞান, মানব প্রকৌশল মনােবিজ্ঞান প্রভৃতি ফলিত মনােবিজ্ঞানের আওতায় পড়ে।

**কারিগরি প্রশিক্ষণ   :কোনাে প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের অধিক দক্ষতাসম্পন্ন এবং কর্মক্ষম করে গড়ে তােলার প্রক্রিয়া হলাে প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মীরা উন্নত কারিগরি জ্ঞান ও নতুন নতুন কলাকৌশলের সাথে পরিচিত হওয়ার সুয়ােগ সুষ্টি হয়। শিল্পের উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রীর গুণগত মানও বৃদ্ধি পায় কর্মীদের প্রশিক্ষণের ফলে। প্রতিষ্ঠানে যেসব প্রশিক্ষণ পরিচালিত হয় তার মধ্যে কারিগরি প্রশিক্ষণ অন্যতম।

কারিগরি প্রশিক্ষণ : কারিগরি প্রশিক্ষণ বলতে শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তিজ্ঞান ও কলাকৌশল সংক্রান্ত প্রশিক্ষণকে বুঝায়। কোনাে পেশার বিশেষ দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করাকে কারিগরি প্রশিক্ষণ বলে। এ ধরনের প্রশিক্ষণে যেসব একজন প্রশিক্ষণার্থী দ্রুত ও নির্ভুলভাবে যন্ত্র পরিচালনার কৌশল আয়ত্ত করতে সক্ষম হয়।

যেমন- ড্রাফটিং মনাে-পেশিগত কাজে দক্ষতা, সমন্বিত অঙ্গসঞ্ালনের দক্ষতা, যান্ত্রিক গঠন ও কার্যপ্রণালি সম্পর্কে জ্ঞান, দরুত ও নির্ভূলভাবে যন্ত্র পরিচালনার নৈপুণ্য ইত্যাদি বিষয়ক প্রশিক্ষণ। এই প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা মূলত যান্ত্রিক কলাকৌশলের দক্ষতা। এই প্রশিক্ষণের অন্যতম উদ্দেশ্যে হলাে কর্মচারীদেরকে দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করা এবং কর্মচারীদের জীবনে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। গবেষণায় দেখা যায় যে, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মচারীর তুলনায়

প্রশিক্ষণবিহীন কর্মচারী শিল্প ক্ষেত্রে বেশি দুর্ঘটনা শিকার হয়। সাধারণত প্রশিক্ষণ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার অভাবে কর্মচারীরা উৎপাদন ক্ষেত্রে বেশি কাঁচামাল নষ্ট করে, যন্ত্রপাতির ক্ষতি সাধন করে এবং সময়ের অপচয় করে।


**গতি অনুধ্যান : কোন কার্য সম্পাদনে অবাঞ্জিত গতি হাস করে সর্বাধিক গতিবিধি উদ্ভাবনের লক্ষ্যে অঙ্গ- প্রত্যঙ্গের গতি পর্যালােচনাকে গতি অনুধ্যান বলা হয়। গতি অনুধ্যানের উদ্দেশ্য হলো কোনো কাজ করতে হলে যে অঙ্গ সঞ্চালনের দরকার তা পরিবর্তিত করে সহজ এবং সংক্ষিপ্তভাবে করা যায় কি না তা বিবেচনা করা। গাতি অনুধ্যানের মূল কথা হলাে অপ্রয়োজনীয় গতি হ্রাস করে কার্যকরী গতি নিরূপণ করে শিল্প কারখানার উৎপাদন বৃদ্ধি করা।

গিলব্রেথের গবেষণা : টেইলরের সময়ের কিছু দিন পর ব্রিটিশ কৌশলী ফ্রাঙ্ক গিলব্রেথ ও তার স্ত্রী এবং মনােবিজ্ঞানী লিলিয়ান গিলব্রেথ সর্বপ্রথম গতি অনুধ্যান আরম্ভ করেন। ১৮৮৫ সালে গিলব্রেথ যখন ইমারত প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করতেন, তখন তিনি দেখতে পান যে, শ্রমিকরা ইট তলতে বিভিন্ন ধরনের প্রয়ােজনীয় গতিধারা অবলম্বন করছে এবং বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কৌশলে ইট তুলছে। এ সমস্যার সমাধানের জন্য তিনি গবেষণা আরম্ভ করেন। তিনি শ্রমিকদের ইট তােলার সময় বিভিন্ন কাজের চিত্র নেন। তারপর তা বিশ্লেষণ করে অপ্রয়োজনীয় কাজের অংশ বাদ দিয়ে নতুন কেশিল তৈরি করেন। এ নতুন কৌশল তিনি শ্রমিকদের ১৮টি ভিন্ন ভিন্ন গতি কমিয়ে ৫টিতে আনেন। এর ফলে প্রতিটি শ্রমিক আগে যেখানে ১২০টি ইট তুলতে পারতাে সেখানে সে নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করে ৩৫০টি ইট তুলতে সক্ষম হয়।

*শিল্প মনােবিজ্ঞান : শিল্প মনােবিজ্ঞান মূলত ফলিত মনােবিজ্ঞানের একটি তাৎপর্যপূর্ণ শাখা। এ শাখা শিল্প সংক্রান্ত নানা প্রকার সমস্যা সমাধানে এবং সঠিক উপায় নিরূপণে মনােবিজ্ঞানের সাধারণ পদ্ধতিগুলাে প্রয়ােগ করে থাকে। শিল্প মনােবিজ্ঞান মনােবিজ্ঞানের সেই শাখা, যেখানে শিল্পে কর্মরত ব্যক্তিবর্গের আচরণ নিয়ে আলোেচনা এবং এসব আচরণ শিল্পে কর্মরত ব্যক্তিদের উৎপাদনের ব্যাপারে কি ধরনের প্রভাব ফেলে তা নিয়ে পর্যবেক্ষণ ও পর্যালােচনা করে। শিল্পকে সাধারণভাবে পণ্য ও সেবা উৎপাদনের যন্ত্র বা কৌশল হিসেবেই গণ্য করা হয কিন্তু শিল্প মনােবিজ্ঞানে শিল্পের পরিসর বা পরিধি আরও ব্যাপকতর।

**কর্ম বা কায সন্তুটি: কার্য সন্তুষ্টি হলো কাজের অবস্থার প্রতি একজন কর্মীর আবেগমূলক সাড়া বা প্রতিক্রিয়া। কার্য সন্ভুষ্টি কর্মীর উৎপাদনশীলতা ও মনোবল বৃদ্ধিতে প্রত্যক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করে।

Vroom এর মতে, "কাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশের প্রতি একজন কর্মচারীর ধারণাগত বা সামাজিক প্রতিক্রিয়াকে সাধারণত কর্ম সন্তষ্টি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।"

** সাক্ষাৎকার পদ্ধতির সংজ্ঞা দাও।

উত্তর ॥ ভূমিকা : সাক্ষাৎকার পদ্ধতি আধুনিক সমাজ মনােবিজ্ঞানীদের কাছে খুবই গ্রহণযােগ্যতা অর্জন করেছে। তাদের নিকট এর গুরুত্ব শুধু একটি পদ্ধতি নয়; বরং এটা একটি সামাজিক প্রক্রিয়া। নানা ক্ষেত্রে এ পদ্ধতিটি ব্যবহৃত হয়। সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী সাধারণত জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে সাক্ষাৎকার প্রদানকারীর কাছ থেকে তথ্যসংগ্রহ করে গাকেন। এক্ষেত্রে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীকে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদানের দরকার হয়। তবে এ পদ্ধতি সবক্ষেত্রে ব্যবহার করা সম্ভব নয়।

সাক্ষাৎকার পদ্ধতি : সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী এবং সাক্ষাৎকার প্রদানকারী সামনাসামনি বসে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে যে তথ্যসংগ্রহ করে তাকে সাক্ষাৎকার পদ্ধতি বলে। আরাে একটু সহজভাবে বলা যায় কোনাে বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য আলাপ-আলােচনার মাধ্যমে যে তথ্যসংগ্রহ করা হয় তাকে সাক্ষাৎকার পদ্ধতি বলে।

মনােবিদ ফ্রেডারিক এন কারলিঙ্গার (Fredaric N. Kerlinger)-এর মতে, "সাক্ষাৎকার পদ্ধতি হলাে মুখােমুখি আন্তঃব্যক্তিক অবস্থান, যাতে সাক্ষাৎ গ্রহীতা উত্তর প্রদানকারী হিসেবে সাক্ষাৎকার প্রদানকারীকে সমস্যা নিরসনকল্পে উত্তর পেতে পরিকল্পিতভাবে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে।"

***দুর্ঘটনার প্রবণতা হচ্ছে দুর্ঘটনা পুনরাবৃত্তির একটি সাধারণীকৃত ধারা যা কিছু লােকের কার্যত যেকোন পরিস্থিতিতে। দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি করার ঝোকের মধ্যে প্রতিফলিত। এ অর্থে দুর্ঘটনা প্রবণতা নামক পদটি কেবল অনুরূপ একটি ঝােক বা প্রবণতার বর্ণনাই দেয় কিন্তু ঐ ধারা সৃষ্টিকারী ব্যক্তিগত কারণগুলাে ব্যাখ্যা করে না। যারা দুর্ঘটনায় বিশ্বাসী তাদের মতে দুর্ঘটনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কান কোন লােকের যুক্তিসঙ্গতভাবে দৈব ঘটনা বলে ব্যাখ্যা যােগ্য দুর্ঘটনার চেয়ে বেশী দুর্ঘটনা সংঘটিত করার প্রবণতা আছে কথাটির সমর্থনে একটি গবেষণা রিপোের্টের উল্লেখ করা যায়। এ গবেষণায় তিনটি কাজে নিয়ােজিত কর্মচারীদের দুর্ঘটনার এটি সূচক তৈরী করা হয়েছিল। এ সূচকের ভিত্তি ছিল প্রতি এক হাজার কর্মঘন্টায় সংঘটিত দুর্ঘটনা পৌনঃপুন্য এবং ছয়মাস দীর্ঘ পৃথক দুটো সময়কালের জন্য আলাদাভাবে তা তৈরী করা হয়েছিল।

**কর্ম বিশ্লেষণ : প্রতিষ্ঠানের প্রতিটা কাজের ধরন, বৈশিষ্ট্য নিরূপণ, দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্দিষ্টকরণ এবং এই দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে কোন ধরনের ও যােগ্যতাসম্পূর্ণ জনশক্তির প্রয়ােজন হবে তা নির্ধারণের জন্য প্রয়ােজনীয় তথ্য সংগরহ, মূল্যায়ন ও বিশ্লেষণের এই কাজকে কর্ম বিশ্লেষণ বলে। ভিসেনজু ও রবিস্স এর মতে, কর্ম বিশ্লেষণ হলাে একটি কাজের বিভিন্ন দিকের পদ্ধতিগত বিশ্লেষণ। এটি একটি কারিগরি কৌশল যা দ্বারা দায় কর্তব্য ও জবাবদিহিতাকে নির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।

Share:

No comments:

Post a Comment

slidebar

Total Pageviews

Abdullah Mondal

Powered by Blogger.

Blog Archive

Recent Posts

বাস্তবতা

জীবনের বাস্তবতা বড়ই নিষ্ঠুর। এটাই জীবন। জীবনের বাস্তবতার বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, যতই নিষ্ঠুর হউক বা যতই কষ্ট হউক তা সয়ে নিতে হয়, মেনে নিতে হয় জীবনের প্রয়োজনেই। জীবনে কষ্ট আসলে মানসিক ভাকে যতটুকু ভেঙ্গে পড়বে জীবন তার দ্বিগুন পিছিয়ে যাবে। জীবনের সকল দূঃখ কষ্ট ও বাস্তবতাকে জীবনের অংশ হিসাবে মেনে নিয়ে স্বাভাবিক ভাবে গ্রহন করার নামই হচ্ছে সুখ।

Pages